বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোরে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে এইচআইভি বা এইডস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ এ রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। সমকামী আচরণের কারণে এমনটা হচ্ছে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের। তবে এ রোগের ঝুঁকি কমিয়ে আনতে সচেতনতা বৃদ্ধির বিকল্প নেই বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। সিভিল সার্জন অফিসের তথ্য মতে, বর্তমানে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের এআরটি (অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল থেরাপি) সেন্টারে মোট ২৪৮ জন এইচআইভি/এইডস আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য মতে, যশোরে এইচআইভি এইডস আক্রান্তের সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। জেলা হাসপাতালে প্রতিদিন অন্তত ১০ জন করে সন্দেহভাজন রোগী আসছেন। যাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত ৫২ জনের এইডস শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৪৬ জন পুরুষ এবং আট নারী। সবচেয়ে উদ্বেগজনক হলো এই আক্রান্তদের মধ্যে ২৬ জনই শিক্ষার্থী। এদের বেশিরভাগের বয়স ১৮ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে; যারা সমকামী আচরণের কারণে আক্রান্ত হয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আক্রান্ত এক যুবক বলেন, ‘আসলে আমি কীভাবে আক্রান্ত হয়েছি আমি নিজেই জানি না। আমার ছেলেদের সঙ্গে মেলামেশা করতে ভালো লাগে। আমার একাধিক পার্টনার আছে। আমি রাজশাহীতে ছিলাম, হয়ত সেখান থেকে কারোর মাধ্যমে আক্রান্ত হয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘এইডস শনাক্ত হওয়ার পর আমি প্রচুর ভয় পেয়েছিলাম। এরপর চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তারা চিকিৎসার পাশাপাশি আমার কাউন্সিলিং করে। আমাকে মানসিকভাবে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এখন আমি এইডসকে একটি স্বাভাবিক রোগ মনে করে চিকিৎসা নিচ্ছি।’

যশোর জেনারেল হাসপাতালের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট হিমাদ্রি সরকার বলেন, ‘আমরা প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫টি এইচআইভি টেস্ট করছি। যাদের বয়স ১৭ থেকে ২৮ বছরের মধ্যে। শুধু যশোর নয়, আশপাশের জেলা থেকেও রোগী আসছেন। তাদের কয়েকধাপে পরীক্ষা করা হয়। এইচআইভি শনাক্ত হলে তাদের কাউন্সিলিং ও চিকিৎসা প্রদান করা হয়।’

তরুণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে সংক্রমণ বৃদ্ধি গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে বলে জানিয়েছেন যশোর জেনারেল হাসপাতালের এআরটি সেন্টারের সমন্বয়কারী কানিজ ফাতেমা। তিনি বলেন, সারা দেশের মত যশোরেও দিনদিন এইচআইভি রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। প্রতিদিনই কিছু না কিছু রোগী পাচ্ছি। এ বছর আমরা ৫২ জন রোগী পেয়েছি। তার মধ্যে সবচেয়ে কষ্টজনক ব্যাপার আক্রান্তদের মধ্যে শিক্ষার্থীদের হার বেশি। কানিজ ফাতেমা আরও বলেন, ‘এ বছর আক্রান্তদের মধ্যে ২৬ জনই শিক্ষার্থী।

এদের বয়স ১৮ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে। এটা শুধু যশোরের নয় সারা দেশেরই চিত্র। সারা দেশের এআরটি সেন্টারের দেয়া তথ্য মতে সমকামিতার কারণে ছাত্ররা এইচআইভিতে আক্রান্ত হচ্ছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘জন্মগতভাবে কিশোর-কিশোরীরা কৌতুহলী হয়। ব্যতিক্রমী বিষয় নিয়ে তারা আগ্রহী হয়ে থাকে। অনেকে এক্সপেরিমেন্ট করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়।

পরবর্তীতে যখন তারা চিকিৎসার আওতায় আসে তখন তারা বলে তাদের ভুল হয়ে গেছে। কিন্তু এই ভুলটি তাকে সারা জীবন টেনে নিয়ে বেড়াতে হবে। পরবর্তীতে তার মাধ্যমে আরও অনেক মানুষ আক্রান্ত হতে পারে সে বিষয়টা আসলে তারা জানতেই পারছে না। এ বিষয়টা নিয়ে আমি অভিভাবকসহ সকলের নজরদারি কামনা করছি।’ এ বিষয়ে যশোরের সিভিল সার্জন ডা. মাসুদ রানা বলেন, ‘আক্রান্ত হওয়ার পর সরকারিভাবে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। কিন্তু আমার মনে হয় এটা সমাধানের জন্য আমাদের সচেতনতার প্রয়োজন। পারিবারিক মূল্যবোধ, নৈতিকতা, ধর্মীয় অনুশাসন যেটা থেকে আমরা অনেক সরে এসেছি। আমরা পাশ্চাত্য ফলো করতে গিয়ে নিজেদের শিকড় থেকে বিচ্যুত হয়ে যাচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘আমরা যদি খেয়াল না করি আমাদের সন্তান কার সঙ্গে মিশছে। তারা ধর্মীয় অনুশাসনে থাকছে কী না বা তাদের জীবনযাত্রা কেমন, তাদের ইন্টারনেটের অবাধ বিচরণ নিরাপদ কী না এগুলো মনিটরিং না করলে আমাদের সন্তানদের এখান থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার কোনো উপায় নেই। ফলে এইডসের মত একটি রোগের হাত থেকে পরিত্রাণ পেতে সন্তানদের ইন্টারনেট ব্যবহারে সর্তকতা, সামাজিক এবং ধর্মীয় জ্ঞানে উদ্বুদ্ধসহ কাউন্সিলিং করতে হবে।’

Share.
Leave A Reply Cancel Reply
Exit mobile version