হাসান আদিত্য
ছয় বছর পর যশোর জেলা শ্রমিক লীগের সম্মেলন আগামি ১৩ জুলাই। গত ৭ জুলাই সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সম্পাদকের সাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়। এই সম্মেলন সম্পূর্ণ গঠনতন্ত্র পরিপন্থি উল্লেভ করে বন্ধের দাবি জানিয়েছেন যশোর-৩ আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ অনুসারী জেলা শ্রমিক লীগের একাংশের নেতৃবৃন্দ। তারা বুধবার প্রেসক্লাব যশোর মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান। তবে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের পক্ষের নেতাকর্মীরা এই সম্মেলনকে স্বাগত জানিয়ে প্রচারণা শুরু করেছেন। শহরের বিভিন্ন স্থানে ফেস্টুন ও ব্যানার টাঙিয়ে পদপ্রত্যাশীরা জেলা ও কেন্দ্রীয় নেতাদের তোরণ নির্মাণ করেছেন। এর আগে ২০১৭ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর এক যুগ পর জেলা শ্রমিক লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
জানা গেছে, যশোর জেলা আওয়ামী লীগ দুটি গ্রুপে বিভক্ত। একটি পক্ষের নেতৃত্ব দেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার। অন্যটি সদর আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ। জেলা আওয়ামী লীগের গ্রুপিংয়ের কারণে জেলা শ্রমিক লীগেও নেতৃত্বের গ্রুপিং রয়েছে। গ্রুপিং- দ্বন্দ্বের জেরে জেলা শ্রমিক লীগে দুইজন সভাপতি ও একজন সাধারণ সম্পাদক। জেলা জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি আজিজুর রহমানের মৃত্যুর পর এ পদ নিয়ে শুরু হয় টানাটানি। দুইপক্ষই দুটি সহ-সভাপতি জবেদ আলী ও সাইফুর রহমানকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মনোনীত করেন। জবেদ আলী কাজী নাবিল আহমেদের অনুসারী ও সাইফুর রহমান শাহীন চাকলাদারের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। আর সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন শাহীনের সঙ্গে রাজনীতি করলেও বর্তমানে নাবিলের সঙ্গে রাজনীতি করছেন। ফলে সম্মেলনকে ঘিরে শ্রমিক লীগের গ্রুপিং আরও প্রকট হয়েছে।
শ্রমিক লীগের নেতাকমীরা জানান, গত ৭ জুলাই সংগঠনের সভাপতি নূর কুতুব আলম মান্নান ও সাধারণ সম্পাদক কে এম আযম খসরু সাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সম্পাদকের সুপারিশক্রমে আগামি ১৩ জুলাই জেলা শ্রমিক লীগের সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। বিজ্ঞপ্তিটি মঙ্গলবার রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে শাহীন অনুসারী নেতাকর্মীদের মধ্যে উচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয়। এই গ্রুপের পদপ্রত্যাশী নেতারা শহরের বিভিন্ন স্থানে ব্যানার তোরণ বসিয়ে প্রার্থীরা জানান দিচ্ছেন। অন্যদিকে নাবিল গ্রুপের মধ্যে নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। সেই ধারিবাহিকতায় বুধবার দুপুরে তারা যশোর প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন। সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের জেলা শাখার সাধারন সম্পাদক নাছির উদ্দিন বলেন, জেলা শ্রমিক লীগের একটি অংশ হঠাৎ করেই আগামী ১৩ জুলাই সম্মেলন আহবান করেছে। আমার কাছে কোন প্রকার চিঠি আসেনি এবং কেন্দ্রের কোনো নির্দেশনাও আমি পাইনি। তিনি বলেন, একটা দলের সম্মেলন হতে হলে নির্বাহী কমিটির একটা বা একাধিক বর্ধিত সভা হতে হয়। সেই সভা ডাকার নিয়ম সভাপতি ও সম্পাদকের। অথচ কখন সভা হলো, আর কখন সম্মেলনের দিন-তারিখ ঘোষণা হলো, তা আমরা সভাপতি-সম্পাদকই জানলাম না। ৫ দিনের সময় নিয়ে সম্মেলন হচ্ছে, যা কোনভাবেই সম্ভব না এবং সম্পূর্ণ গঠনতন্ত্র পরিপন্থি।
নাবিল অনুসারীদের একাংশের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জবেদ আলী বলেন, ‘এই সম্মেলন দেয়ার প্রশ্নে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আমার সাথে নূন্যতম আলোচনা করেননি। অনতিবিলম্বে ১৩ জুলাইয়ের সম্মেলন স্থগিত করে নিয়ম অনুযায়ী আগামীতে সম্মেলনের দিন-তারিখ নির্ধারণ করা হোক। সেক্ষেত্রে আগামী সেপ্টেম্বর মাসের যে কোনো দিন সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা যেতে পারে ’
শাহীন অনুসারী শ্রমিক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সাইফুর ইসলাম বলেন, ‘এই সম্মেলনকে স্বাগত জানান। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সিন্ধান্ত যে সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণে নেতাকর্মীদের মধ্যে চাঙ্গাভাব সৃষ্টি হয়েছে।
এই বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার ও স্থানীয় সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তারা কেউ ফোন রিসিভ করেনি। তবে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম মিলন বলেন, ‘দীর্ঘদিন সম্মেলন হয় না। কমিটিও মেয়াদউর্ত্তীণ। যারা সম্মেলন চায় না, তারা পদ আঁকড়ে ধরে রাখতে চাই বলে অভিযোগ করছে। নতুন সম্মেলন হলে নতুন নেতৃত্ব হবে। দলও সুসংগঠিত হবে।’