সাতক্ষীরা সংবাদদাতা

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে উদ্ভূত পরিস্থিতি ও কারফিউয়ে সবচেয়ে বেশি বেকায়দায় পড়েছেন সাতক্ষীরার নিম্ন আয়ের মানুষজন। এ অবস্থায় ভ্যানচালক, ফল বিক্রেতা, মুচিসহ অন্য পেশার মানুষেরা দুশ্চিন্তায় পড়েন। তবে কারফিউ শিথিলের সময়সীমা বাড়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন কেউ কেউ। পুরোদমে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) রাতে সাতক্ষীরা সদরের নিউমার্কেট এলাকায় বাদাম নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন আব্দুল আজিজ। কিছুক্ষণ আলাপের পর তিনি কোটা সংস্কার আন্দোলন ও কারফিউ ঘিরে চলমান পরিস্থিতিতে নিজের দুর্দশার কথা জানান। বলেন, ‘এক সপ্তাহ ধরে তেমন আয় নেই। বেকার বসে আছি। ঘরে চাল নেই। এভাবে চলতে থাকলে না খেয়ে মরতে হবে।’
সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের সামনে ফল বিক্রি করছেন রাবেয়া খাতুন। তিনি বলেন, কারফিউয়ের কারণে গেল কয়েকদিন দোকান খুলতে পারেননি তিনি। তাই ওষুধ আর খাবার কেনার টাকা জোগাড় না হওয়ায় চরম দুশ্চিন্তায় আছেন তিনি।
অন্যদিকে টানা কারফিউয়ে ভ্যানচালক রবিউল ইসলামও বিপাকে। কাজ না থাকায় স্ত্রী ও তিন সন্তানের মুখে খাবার তুলে দেয়ার টাকা জোগাড় করতে পারছেন না তিনি। রবিউল ইসলাম আর রাবেয়া খাতুনের মতো অসংখ্য দিনমজুর ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী কারফিউয়ের কারণে চরম কষ্টে আছেন।

ভ্যানে করে জামা কাপড় বিক্রি করছেন কাটিয়া এলাকার বাসিন্দা নুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, স্ত্রী ও এক সন্তান নিয়ে তার সংসার। এ অবস্থায় গত এক সপ্তাহ ধরে দোকান থেকে বাকিতে চাল, ডাল, আলু কিনে চলছে। সামান্য কিছু টাকা ধার করে গত রোববার কিছু ছোট মাছ কিনেছিলেন। এখনো তেমন বিক্রি নেই। বিপাকে আছেন।

ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ইমরুল হাসান বলেন, ব্যাংকের লোন নিয়ে ব্যবসাটি শুরু করেছিলাম। বর্তমান পরিস্থিতিতে বিপাকে পড়েছি। একদিকে ব্যাংকের লোনের চাপ অন্যদিকে সংসার। এই পরিস্থিতিতে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা সবচেয়ে বিপক্ষে আছে। আমি নিজেও দুশ্চিন্তায় আছি। কারফিউ শিথিলের সময়সীমা বাড়ায় দোকানে কিছু লোকজন আছে।

এছাড়া শহরের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার অনেক মানুষের সঙ্গে কথা হয়। তাদের সবাই নিম্ন আয়ের মানুষ। সবারই অভিন্ন ভাষ্য, দেশের চলমান পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি সংকটে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ।

বিশেষ করে ভ্যান ও ইজিবাইক চালক, কম্পিউটার দোকান, মুচি, দিনমজুর ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বেশি বিপাকে আছেন। জীবনযাত্রা ও ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়ার প্রভাব তাদের মধ্যেই বেশি পড়েছে। টাকার অভাবে অনেকে খেয়ে না খেয়ে কোনো রকমে আছেন।

সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট শেখ আজাদ হোসেন বেলাল বলেন, দেশের চলমান পরিস্থিতিতে নিম্ন আয়ের মানুষেরা সবচেয়ে সমস্যায় আছেন। যারা দিনমজুর, তারা দৈনিক আয়ের ওপরই নির্ভর করে সংসার চালান। এসব মানুষ কর্মহীন হয়ে অসহায় হয়ে পড়েছেন। তাদের সহায়তায় সরকারের পাশাপাশি সমাজের বিত্তবান মানুষদের এগিয়ে আসা উচিত।

Share.
Leave A Reply Cancel Reply
Home
News
Notification
Search
Exit mobile version