স্বাধীন মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ
যশোরের বেনাপোল সীমান্ত থেকে ৩ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), শার্শা ও বেনাপোল পোর্ট থানা পুলিশ। নিহতরা হলেন, বেনাপোল পৌরসভার কাগজ পুকুর এলাকার ইউনূচ মোড়লের ছেলে জাহাঙ্গির কবির (৪৫), দিঘিরপাড় উত্তরপাড়া এলাকার মৃত আরিফ হোসেনের ছেলে সাবুর আলী (৪০) ও চৌগাছার শাহাজাদপুর এলাকার জামন ঢালির ছেলে সাকিবুল হাসান(২০)।
বুধবার দুপুরে সরেজমিন বেনাপোল এলাকায় গিয়ে দেখা যায় নিহতদের বাড়িতে শোকের মাতম বিরাজ করছে। পাশাপাশি এলাকার বাসিন্দা সাবুর ও জাহাঙ্গির। নিহত সাকিবুলও কাগজপুকুর এলাকার জবেদ আলীর নাতিছেলে। নিহত ৩ জন একই সাথে চলাফেরা করতেন।
জীবন জীবিকার তাগিদে দিন মজুরের কাজ করতেন সাবুর আলী। কখনও বা বেনাপোল বাজারে ঝাল মুড়ি বিক্রি করতেন। মঙ্গলবার বিকেল থেকে তার সাথে পরিবারের সদস্যদের আর যোগাযোগ হয়নি।
নিহত সাবুর আলীর স্ত্রী হাসি বেগম বলেন, মঙ্গলবার বিকেলে বাড়ি থেকে বের হন তার স্বামী। বুধবার দিবাগত রাতে খবর পান পাঁচভূলট সীমান্ত এলাকায় এক আম বাগানে তার স্বামীকে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। ভোর রাতে সেখান থেকে ভ্যানে করে সাবুরকে বাড়িতে আনা হয়। তার হাত ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে। বুকে, নিতম্বে একাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। কে বা কারা নির্মমভাবে তার স্বামীকে পিটিয়েছেন সে বিষয়ে স্পষ্টভাবে কিছু জানাতে পারেনি তিনি।
সাবুরের বোন আকলিমা খাতুন বলেন, আমার ভাইকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। বিএসএফ নির্মমভাবে পিটিয়েছে। আমরা আমাদের ভাই হত্যার বিচার দাবি করি।
এদিকে শার্শা থানায় গিয়ে দেখা যায় ভ্যানের উপর জাহাঙ্গিরের নিথর দেহ। পরিবারের একাধিক সদস্য থানায় আসলেও হত্যার বিষয়ে মুখ খুলতে রাজি হযনি অনেকেই।
নিহত জাহাঙ্গিরের ভাইজি বিউটি খাতুন বলেন, আমার বাপ চাচারা ৬ ভাই। চাচা এর আগে ভারতে থাকতেন। মাঝে মাঝে ভারত থেকে বাংলাদেশে আসতেন। আজ দুপুরে জানতে পারে ইছামতি নদীতে বিবস্ত্র লাশ ভাসছে। স্থানীয় লোকের সহযোগিতায় লাশের ছবি দেখে চিনতে পারে এটা তার কাকার লাশ। পরে শার্শা থানার পুলিশ লাশ উদ্ধার করে থানায় আনেন। তিনি বলেন, কেউ যদি অবৈধ পথে ভারতে প্রবেশ করতে যায়। বিএসএফ তাকে আটক করবে। এমন নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যার বিষয়টি মেনে নিতে পারছেন না তারা।
বিকেল বেলা সীমান্তের একই এলাকায় আরও একটি লাশ ভেসে উঠার কথা ছড়িয়ে পড়ে। পরে লাশের ছবি দেখে জানা যায়, কাগজপুকুর এলাকার জাবেদ আলীর নাতিছেলের লাশও ইছামতি নদীতে ভেসে উঠেছে। বিজিবি ও শার্শা থানা পুলিশ সন্ধ্যা নাগাদ নদী থেকে লাশ উদ্ধার করে। নিহতের নানা জবেদ আলী ঘটনাস্থলে গিয়ে নাতি ছেলের লাশ শনাক্ত করে। এ সময় কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি। পুলিশি পাহারায় নাতিছেলের নিথরদেহ ভ্যানে করে থানায় আনেন।
জবেদ আলী জানান, গতকাল থেকে তার নাতিছেলের কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিলো না। স্থানীয় সাবুর ও জাহাঙ্গিরের মরদেহ পাওয়ার খবর শুনে কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ে তাদের পরিবারের। স্থানীয় মানুষের কাছে জানতে পারে মঙ্গলবার বিকেলে বাজার এলাকায় সাবুর, জাহাঙ্গির, সাকিবুলসহ আরও দুই জনকে একসাথে ঘুরতে দেখে। সেই খবরের জেরে ঘটনাস্থলে এসে দেখে তার নাতিছেলে সাকিবুলের লাশ।
নিহত তিনজনের শরীরের একই স্থানে একাধিক আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। সাবুর আলীর দুই কন্যা, জাহাঙ্গিরের এক কন্যা সন্তান রয়েছে।
স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন, নিহত তিন জনের পারিবারিক অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ। জীবীকার তাগিদে তারা দিনমজুরের কাজ করত। জাহাঙ্গির এর আগে একাধিক বার ভারতে গিয়েছে। বেশ কয়েক বছর জেলও খেটেছে। মূলত ভারতীয় মালামাল আনা নেয়ার লেবার হিসেবে কাজ করত তারা। এলাকাবাসী আরও বলেন, যদি তারা ভারতের সীমান্তে প্রবেশ করে। তাহলে তাদের আটক করে জেলহাজতে পাঠাতে পারত। তিনজনকেই একইভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের দাবি করেছেন তারা। নিহত তিনজনের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য যশোর জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।