মোহাম্মদ মিলন আকতার, ঠাকুরগাঁও থেকে
ঐতিহাসিক সূর্যপুরী আমগাছ বলতে মনে পড়ে ঠাকুরগাঁয়ের কথা। একটি বৃক্ষ কত বড় হতে পারে? আর যাই হোক, তিন বিঘা জমি জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা গাছের কথা ক’জনই বা ভাববে! তাও আবার আম গাছ। বিশাল এই আম গাছ আছে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াড়াঙ্গী উপজেলার হরিণমারী (নয়াপাড়া) গ্রামে। এর বিশালাকৃতি যেন কল্পনাকেও হার মানায়!
প্রথম দেখাতে বটগাছের মত বিশাল আকৃতি দেখে অনেকেই ভুল করে বসেন। ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার হরিণমারী সীমান্তে মন্ডুমালা গ্রামে আমগাছটি প্রকৃতির আপন খেয়ালে বেড়ে উঠে আজ ইতিহাস হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
শুধু ঠাকুরগাঁওয়ের মানুষের কাছে নয়, এই আমগাছটি এখন বিস্ময় হয়ে দাঁড়িয়েছে গোটা দেশে। গাছের মূল থেকে ডালপালাকে আলাদা করে দেখতে চাইলে রীতিমত ভাবতে হয়। আমগাছটির ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্য শুধু দেশের পর্যটক নয়, বিদেশের অনেক অতিথিকেও আকৃষ্ট করে।
শত ব্যস্ততার মধ্যে একটু সময় করে ছুটে গিয়ে চোখ জুড়ানোর লোভ সামলাতে পারেন না তারা। ব্যতিক্রমী এই আমগাছ পশ্চাৎপদ বালিয়াডাঙ্গী উপজেলাকে বিশ্বের কাছে আজ পরিচিত করে তুলেছে।
ঠাকুরগাঁওয়ের মানুষের প্রিয় একটি আমের জাত সূর্যপুরী। সুস্বাদু, সুগন্ধী, রসালো আর ছোট আটি সূর্য্যপুরী আম জাতটির অন্যতম বৈশিষ্ট্য। সূর্যপুরী বোম্বাই জাতীয় লতানো বিশাল আকৃতির আমগাছটি ৭৪ শতাংশ জমির উপরে অর্থাৎ প্রায় দুই বিঘারও বেশি জায়গা জুড়ে বিস্তৃত।
গাছটির উচ্চতা আনুমানিক ৮০-৯০ ফুট। এর পরিধিও ৩৫ ফুটের কম নয়। মূল গাছের ৩ দিকে অক্টোপাসের মত মাটি আঁকড়ে ধরেছে ১৯টি মোটা মোটা কাণ্ড। বয়সের ভারে গাছের ডালপালাগুলো নুয়ে পড়লেও গাছটির শীর্ষভাগে সবুজের সমারোহ, আমের সময় সবুজ আমে টইটম্বুর থাকে এই গাছটি। আমগুলোর ওজনও হয় প্রতিটি ২০০ গ্রাম থেকে ২৫০ গ্রাম।
স্থানীয়দের কাছে এই আমগাছের ইতিহাস অনেক পুরোনো। মাটি আঁকড়ে থাকা মোটা কাণ্ডগুলো দেখে অনেকেই গাছটির বয়স অনুমান করতে চেষ্টা করেন কিন্তু কেউ সঠিকভাবে গাছটির বয়স বলতে পারেননি। গাছটি কোন সময় লাগানো হয়েছে তা সঠিক জানা নেই কারও। আমগাছটির আনুমানিক বয়স ধরা হয় ২২০ বছরেও অধিক।
ঐতিহ্যবাহি এই আমগাছটি ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ৭ নং আমজানখোর ইউনিয়নের হরিণমারী সীমান্তের মন্ডুমালা গ্রামে অবস্থিত। প্রকৃতির আপন খেয়ালে বেড়ে উঠে আজ ইতিহাস হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এই গাছটি।
দূর দূরান্ত থেকে দেখতে আসা দর্শনার্থীদের সাথে কথা বললে তারা গাছটি সর্ববৃহৎ ও সুন্দর বলে প্রশংসা করে বলেন, এখানে যদি পর্যটকদের জন্য থাকার, বসার ও খাওয়ার ব্যবস্থা করা হতো তাহলে আরও ভালো হতো।
উত্তরাধিকারসূত্রে গাছটির বর্তমান মালিক নূর ইসলাম জানান, গাছটি তার দাদা খোন্টু মোহাম্মদ রোপণ করেছিলেন। গাছটির অনেক বয়স হওয়া সত্ত্বেও এখনো প্রতি বছর ৫০ থেকে ৬০ মণ আম দেয়। যার দাম হয় প্রায় ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা।
অনেক দূর দূরান্ত থেকে গাছটি দেখতে ছুটে আসেন অনেক মানুষ। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে পর্যটকদের জন্য অনেক কিছু করা যেত কিন্তু এককভাবে করে ওঠা সম্ভব না বলে তিনি জানান।