বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোরে আলোচিত শ্বশুর ও জামাই হত্যাকাণ্ডকে আর বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখছেন না স্থানীয়রা। তাদের অভিযোগ, জমি বিক্রির কোটি টাকার দালালির ভাগ-বাটোয়ারা, রাজনৈতিক প্রভাব এবং এলাকার আধিপত্য বিস্তারের লড়াই থেকেই এই দুই খুনের সূত্রপাত। দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারীরা অধরা থাকায় জনমনে তৈরি হয়েছে তীব্র অসন্তোষ ও নিরাপত্তাহীনতা।
এই দুই হত্যাকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দুতে যশোর পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান বাবুলের নাম উঠে এলেও তিনি এখনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নাগালের বাইরে রয়েছেন। ফলে প্রশ্ন উঠছে-আইনের হাত কি সত্যিই সবার জন্য সমান?
২০২২ সালের ২৯ মে রাতে যশোর পৌরসভার নাজির শংকরপুর এলাকায় কুপিয়ে হত্যা করা হয় আফজাল হোসেনকে। স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, একটি জমি বিক্রির এক কোটি আট লাখ টাকা দালালির কমিশন ভাগাভাগি নিয়ে তৎকালীন কাউন্সিলর বাবুলের সঙ্গে আফজালের বিরোধ চরমে পৌঁছায়। অভিযোগ রয়েছে, এই বিরোধ থেকেই আফজালকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয় এবং অর্থের জোগানও আসে ওই সূত্র থেকেই।
আফজাল হত্যা মামলাটি বর্তমানে সিআইডির তদন্তাধীন থাকলেও প্রায় সাড়ে তিন বছরেও মূল পরিকল্পনাকারী গ্রেপ্তার না হওয়ায় তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
খুনের পরও নিরাপদ ঘাতকেরা
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আফজাল হত্যায় সরাসরি জড়িত ছিলেন বাবুলের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হাগা সাগর। খুনের পরপরই তাকে কৌশলে অন্য একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়, যা অনেকের কাছে ‘সুরক্ষা বলয়’ হিসেবে বিবেচিত। জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর থেকে তিনি পলাতক রয়েছেন। একই মামলার আসামি শুকুর আলী ও ছোট সাকিবও দীর্ঘদিন ধরে পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাইরে।
বিচার দাবির খেসারত?
আফজাল হত্যার বিচার দাবি করে এলাকায় সরব ছিলেন তার ভাগ্নি জামাই তানভীর হোসেন। স্থানীয়দের দাবি, এই আন্দোলনই তানভীরের জন্য বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। গত ৬ ডিসেম্বর রাতে তাকেও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
তানভীরের পিতা মিন্টু গাজী কোতোয়ালি থানায় মামলা দায়ের করেন, যেখানে সাবেক কাউন্সিলর বাবুলসহ আটজনের নাম উল্লেখ করা হয়। পুলিশ চারজনকে গ্রেপ্তার করলেও প্রধান অভিযুক্ত বাবুল এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে।
আরও পড়ুন .. .. নাম ভাঙিয়ে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন
রাজনীতি ও পোষা সন্ত্রাসের অভিযোগ
স্থানীয়দের অভিযোগ, রাজনৈতিক সমীকরণ পরিবর্তন হলেও বাবুলের একটি সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক এখনো সক্রিয় রয়েছে। এলাকায় খুন, ভয়ভীতি প্রদর্শন ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের পেছনে এই নেটওয়ার্কই কাজ করছে বলে দাবি তাদের। এমনকি আফজাল হত্যা মামলাকে ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা চলছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
পরিবার বলছে, আমরা নিরাপদ নই
নিহত আফজালের পিতা সলেমান হোসেন সলু বলেন, “কোটি টাকার দালালির ভাগ নিয়ে আমার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে। সেই ঘটনার সূত্র ধরেই তানভীরকেও প্রাণ দিতে হয়েছে।”
অন্যদিকে তানভীরের পিতা মিন্টু গাজীর অভিযোগ, ঘটনার পর থেকে তাদের পরিবার নিয়মিত হুমকির মুখে রয়েছে।
পুলিশের বক্তব্য
সিআইডির তদন্ত কর্মকর্তা এসআই রফিকুল ইসলাম জানান, বাবুল হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত আসামিদের আত্মগোপনে সহায়তা করেছেন-এমন তথ্য তদন্তে পাওয়া গেছে। অপরদিকে কোতোয়ালি থানার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আলমগীর হোসেন বলেন, প্রধান অভিযুক্তদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
তবে যশোরবাসীর প্রশ্ন একটাই-একই সূত্রে জড়িত দুটি খুনের পরও মূল অভিযুক্তরা কেন অধরা? এই প্রশ্নের উত্তরই এখন অপেক্ষায় আছে পুরো শহর।
