স ম নজরুল ইসলাম, কপিলমুনি
কপিলমুনিতে শত শত বছরের ঐতিহ্য বহনকারী মাটির তৈরি জিনিসের চাহিদা কমতে থাকায় বংশানুক্রমে গড়ে ওঠা গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প আজ বিলুপ্তির পথে। আধুনিক জিনিসপত্রের ভিড়ে মাটির দাম বৃদ্ধিসহ নানা সংকট এ শিল্প হারিয়ে যেতে বসেছে।
এক সময় শীতের মৌসুমে যে ব্যস্ততা দেখা যেতো মৃৎশিল্পীদের। সেই ব্যস্ততা নেই এখন মৃৎশিল্পীদের। সারি সারি মাটির তৈজসপত্র এখন তেমন নজরে পড়ে না। মাটির জিনিসপত্রের চাহিদা আগের মত না থাকায় এর স্থান দখল করে নিয়েছে দস্তা, অ্যালুমিনিয়াম ও প্লাস্টিকের তৈজসপত্র। তাই আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যাওয়ার পথে ঐতিহ্যবাহী এই মৃৎশিল্প।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কপিলমুনির পালপাড়ার মৃৎশিল্পীর কয়েকটি পরিবার এখন বাপ-দাদার এই শিল্পকে টিকিয়ে রেখেছেন। কেউ দধির পাতিল তৈরি করছেন। কেউ হাঁড়ি পাতিল পোড়ানোর চুলায় কাজ করছেন। আর দধির পাতিল রোদে শুকানো হচ্ছে। নারী ও পুরুষ উভয়ে কাজ করেন। আগের মতো যে ব্যস্ততা আর নেই।
মৃৎশিল্পীরা কয়েকটি পরিবার এখন বাপ-দাদার এই শিল্পকে টিকিয়ে রেখেছেন।
কপিলমুনির মৃৎশিল্পী তপন পাল বলেন, মাটির তৈজসপত্র বেচাকিনা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। দস্তা, অ্যালুমিনিয়াম ও প্লাস্টিকের তৈজসপত্র বের হওয়ায় মাটির তৈজসপত্র আর চলে না।
মাটির তৈজসপত্র আগে ভালোই চলতো। সেই ভোরে ঘুম থেকে উঠে কাজ করতাম। সারাদিন কাজ করতাম, হাট-বাজারে যেতাম দুই-চার হাজার টাকা বিকিকিনি করতাম। এখন আর আগের মতো বেচা কিনা নেই। দস্তা, অ্যালুমিনিয়াম ও প্লাস্টিকের তৈজসপত্র হয়ে মাটির তৈজসপত্র প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। দধির পাতিল আর টয়লেটের পাট এখন একটু চলে। দধির পাতিল ও টয়লেটের পাট যদি বন্ধ হয় আমরা কেমনে চলবো। আমাদের সংসার চালানো কষ্ট হয়ে যাবে।
মৃৎশিল্পী গোবিন্দ পাল বলেন, আধুনিক জিনিস বের হয়েছে। যার ফলে মাটির জিনিস কেউ আর ব্যবহার করতে চাই না। অল্প সংখ্যক পরিবার এখন মৃৎশিল্প টিকিয়ে রেখেছে। এখন সবাই দস্তা, অ্যালুমিনিয়াম ও প্লাস্টিকের তৈজসপত্র ব্যবহার করে। মাটির হাঁড়ি পাতিল আর এখন চলে না। মৃৎশিল্পীদের ছেলেরা বিভিন্ন কাজ করছে।
প্লাস্টিকের তৈজসপত্র বের হওয়ায় মাটির তৈজসপত্র আর চলে না।
উল্লেখ্য, এক সময়ে কপিলমুনিতে পালপাড়ার মৃৎশিল্পীরা এত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল যে, কপিলমুনি বাজারের একটি রাস্তার নাম পাল পাড়া রোড করা হয়েছিল।