মহেশপুর সংবাদদাতা
তৎকালিন প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক অপশক্তিকে কাজে লাগিয়ে ভূমিহীনদের জমি দখল করে স্বরপপুর ইউনিয়নের উখরির বিল সংলগ্ন ১শ’ বিঘা জমিতে বিশাল প্রজেক্ট তৈরি করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সাময়িক সচিব ও ঝিনাইদহ-৩ আসনের সাবেক এমপি সালাহ উদ্দিন মিয়াজি। ওই প্রজেক্টের দায়িত্বে নিয়োজিত করেন আওয়ামী লীগের দোসর তৈলটুপি গ্রামের কবির হোসেনকে। ভূমিহীন নামে সরকারি বৈধ দলিল থাকলেও প্রায় ১৭ বছর ওই জমি জবর দখল করে রেখেছেন তিনি। ৫ আগস্টের পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াসমিন মনিরা সাবেক এমপি সালাহ উদ্দিনের দোসরদের সাথে যুক্ত হয়ে কব্জা করা জমি দখলে রাখতে ভূমিহীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে হয়রানি করার অভিযোগ করেছেন ভূমিহীনরা।
এদিকে বোরবার বিকেলে মহেশপুর থানার সামনে জমি ফেরত চেয়ে মানববন্ধন করেছেন তৈলটুপি ও পাশ্ববর্তী গ্রামের বাসিন্দারা। মানববন্ধনের পর জেলা প্রশাসক, নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেন তারা।
মানববন্ধন ও স্মারকলিপিতে ভূমিহীনরা জানান, ১৯৮১-৮২ সালে উখরির বিল সংলগ্ন ২৬০ একর জমি সরকারি ভাবে বন্দোবস্ত পান তৈলটুপি গ্রামের ৪০টি ভূমিহীন পরিবার। ভূমিহীনরা ওই জমি চাষাবাদ করাকালিন জোর পূর্বক দখল র্যাব-পুলিশ দিয়ে ওই জমি দখল করেন নেন সালাহ উদ্দিন মিয়াজি। এরপর সেখানে ওই জমি তৈরী করেন মাছ, মাল্টা কমলা লেবুর বিশাল প্রজেষ্ট। ৫ আগস্টে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর সালাহ উদ্দিন মিয়াজিকে গ্রেফতার করা হলে জমি দখল চেয়ে লিখিত আবেদন করেন তৎকালীন নির্বাহী কর্মকর্তার ইয়াসমিন মনিরার কাছে। কিন্তু নির্বাহী কর্মকর্তা ভূমিহীদের পক্ষে না গিয়ে সালাহ উদ্দিন মিয়াজির লোকজনের সাথে হাত মিলিয়ে হত্যা চেষ্টা মামলা ও লুট পাটের মামলা দেন প্রায় ১০০ ভূমিহীন পরিবারের বিরুদ্ধে। ওই মামলায় পুলিশ সাত জনকে আটক করেন। সেনাবাহিনীর সদস্য সমস্যা সমাধানে ভূমিহীনদের জমি ফেরত, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করার নির্দেশ দিলেও মানেননি সালাহ উদ্দিনের দোসররা।
তৈলটুপি গ্রামের ভূমিহীন লান্টু বলেন, সরকারের দেয়া ৫০ শতক জমিতে আমি আফা কাটি। কিছুদিন পর দেখি সালাহ উদ্দিন মিয়াজী ওই জমি দখল করে নিচ্ছেন। আমি দখল ঠেকাতে গেলে মেরে মাটি চাপা দিয়ে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়। পরে আমার জমি দখল করে নিজ কব্জায় রাখেন সালাহ উদ্দিন মিয়াজি।
এছাড়াও কৈখালী গ্রামের ইউনুচ আলী বলেন, সালাহ উদ্দিন মিয়াজী আমাদের জমি দখল করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন সেই ২০১০ সাল থেকে। ওই জমি দখল নিতে আমাদের উপর চালিয়ে অমানুবিক জুলুম নির্যাতন। ১’শর বেশি মামলা দিয়েছেন আমাদের নামে। মিথ্যা মামলায় রাতের পর রাত বাড়িতে ঘুমাতে পারিনি। প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতাকে ব্যবহার তিনি এমন ন্যাক্কারজনক কাজ করেছেন। জমি দখলের বাজে নেশা রয়েছে তার। তবে সালাহ উদ্দীন মিয়াজীর করা সকল মামলাতে আমরা জিতে গেছি। কিন্তু ৫ আগস্টের পর সালাহ উদ্দিন মিয়াজির দোসরদের সাথে বিএনপির একাংশের কিছু নেতারা হাত মিলিয়ে আমার পুকুরের ১ কোটি টাকার মাছ লুটপাট করে নিয়েছে। এছাড়াও আমাদের জমি দখল পাঁয়তারা করছেন।
মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন, কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আমিরুজ্জামান খান শিমুল, উপজেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক এস এম নাঈম নেওয়াজ রুমেল প্রমুখ।