♦ হত্যাকাণ্ডে পরিকল্পনাকারী বাল্যবন্ধু শাহীন
♦ মরদেহ টুকরো টুকরো করে গুম
♦ পাঁচ কোটি টাকা চুক্তিতে খুনের মিশনে কিলার
♦ নেপথ্যে সোনা চোরাচালানের অর্থ ভাগাভাগি
♦ যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়েছে শাহীন
বাংলার ভোর ডেস্ক
ঝিনাইদহ-৪ আসনের সরকারদলীয় এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ছিল তারই ছোটবেলার বন্ধু ও ব্যবসায়ীক পার্টনার আক্তারুজ্জামান শাহীন! এই হত্যার পরিকল্পনা করে তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল আরেক বন্ধু ও চরমপন্থী নেতা আমানুল্লাহ আমানকে। কলকাতায় বসে হত্যার চূড়ান্ত ছক এঁকে বাংলাদেশে চলে আসে শাহীন। পরে আমানসহ ছয় জন মিলে এমপি আজিমকে প্রথমে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করে। পরে লাশ কেটে টুকরো টুকরো ট্রলি ব্যাগের মাধ্যমে অজ্ঞাত স্থানে ফেলে দেয়। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ওয়ারী বিভাগ আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করেছে। তদন্ত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেওয়া চরমপন্থী দল পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির নেতা আমানসহ তিন জনকে আটক করা হয়েছে। এই ঘটনায় এমপি আনোয়ারুল আজিম আনারের মেয়ে ডরিন বাদী হয়ে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। একইসঙ্গে কলকাতায়ও পৃথক একটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। কলকাতার পুলিশ লাশের টুকরো বহনকারী এক প্রাইভেটকার চালককে আটক করেছে।
বুধবার সকালে এমপি আজিমের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের বলেছেন, এমপি আনার খুনের ঘটনায় বাংলাদেশিরাই জড়িত বলে আমরা জানতে পেরেছি। এটা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। ইতোমধ্যে তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আরও কয়েকজনকে গ্রেফতারের জন্য অভিযান চালানো হচ্ছে। ঘটনাটি নিয়ে যৌথভাবে দুই দেশের পুলিশ কাজ করছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান ও ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশিদ মিন্টু রোডের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, এটি একটি নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড। এটি পারিবারিক, আর্থিক, নাকি এলাকার কোনও দুর্বৃত্তকে দমন করার জন্য হয়েছে, তা আমরা তদন্ত করে দেখছি। বিষয়টি নিয়ে আমরা নিবিড়ভাবে ভারতীয় পুলিশের সঙ্গে কাজ করছি।
তিনি আরও বলেন, একজন সংসদ সদস্যকে বাংলাদেশের কিছু অপরাধী নৃশংসভাবে হত্যা করেছে, আমরা তাদের কয়েকজনকে আইনের আওতায় নিয়ে এসেছি। বাকিদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।
যেভাবে পরিকল্পনা করা হয়:
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের সূত্র ধরে এমপি আনারকে হত্যার পরিকল্পনা করে আক্তারুজ্জামান শাহীন। শাহীন ঝিনাইদহের বাসিন্দা ও যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। তার ভাই ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর পৌর মেয়র। গত ৩০ এপ্রিল আক্তারুজ্জামান শাহীন চরমপন্থী নেতা আমান ও সিলিস্তা রহমান নামে নিজের এক বান্ধবীকে নিয়ে কলকাতা যান।
সেখানে আগে থেকেই ভাড়া করে রাখা নিউ টাউন এলাকার সঞ্জীবা গার্ডেনের একটি ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাটে ওঠেন তারা। কলকাতায় আরও আগে থেকেই অবস্থান করছিল শাহীনের দুই সহযোগী সিয়াম ও জিহাদ। সেখানে বসে তারা এমপি আনারকে হত্যার পরিকল্পনা করে। হত্যার পুরো দায়িত্ব আমানকে বুঝিয়ে দিয়ে ১০ মে দেশে চলে আসেন শাহীন। পরিকল্পনা অনুযায়ী আমান বাংলাদেশ থেকে আরও দুই ভাড়াটে কিলারকে নিয়ে যায় কলকাতায়। ফয়সাল শাজী ও মোস্তাফিজ নামে দুই ভাড়াটে খুনি ১১ মে কলকাতায় গিয়ে আমানের সঙ্গে যোগ দেয়।
যেভাবে হত্যা:
আমানকে জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের বরাতে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, এমপি আনার যে ১২ মে কলকাতায় যাবেন তা আগে থেকেই জানতো শাহীন। সে তাকে হত্যার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে বলে। এমপি আনারকে হত্যার জন্য তারা একাধিক চাপাতিও সংগ্রহ করে রাখে। গত ১২ মে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা সীমান্ত দিয়ে কলকাতায় যান এমপি আনার। প্রথম দিন তিনি তার বন্ধু গোপালের বাসায় থাকেন। পরদিন ১৩ মে কৌশলে এমপি আনারকে নিউ টাউনের সেই ফ্ল্যাটে ডেকে নিয়ে যায় হত্যাকারীর।
বিকালের দিকে এমপি আনার সঞ্জীবা গার্ডেনের সেই ফ্ল্যাটে প্রবেশ করেন। এরপর আমান তার সহযোগী ফয়সাল, মোস্তাফিজ, সিয়াম ও জিহাদ মিলে এমপিকে চাপাতির মুখে জিম্মি করে। এসময় তারা এমপির কাছে শাহীনের পাওনা টাকা পরিশোধের কথাও বলে। বিষয়টি নিয়ে তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে সবাই মিলে আনারকে জাপটে ধরে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করে। হত্যার পর আমান বিষয়টি জানায় শাহীনকে।
লাশ গুম করতে করা হয় অসংখ্য টুকরা:
আমানের দেওয়া তথ্যের বরাতে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, শাহীনের পরামর্শ মতো লাশ গুম করতে এমপি আনারকে কেটে টুকরা টুকরা করা হয়। এরপর ফ্ল্যাটের কাছেই শপিং মল থেকে আনা হয় দুটো বড় ট্রলি ব্যাগ ও পলিথিন। এমপি আনারের মরদেহের টুকরোগুলো পলিথিনে পেঁচিয়ে ট্রলি ব্যাগে ভরা হয়। ঘটনার রাতে লাশের টুকরাসহ দুটি ট্রলি ব্যাগ বাসাতেই রাখা হয়। এর মধ্যে তারা বাইরে থেকে ব্লিচিং পাউডার এনে ঘরের রক্তের দাগ পরিষ্কার করে। সংশ্লিষ্টরা জানান, কলকাতা পুলিশ ওই ফ্ল্যাট ও আশেপাশের ভবনের সব সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছে। সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে আমান ও তার সহযোগীদের ট্রলি ব্যাগ আনা-নেওয়া, এমপি আনারের বাইরে রাখা জুতা ভেতরে নেওয়ার দৃশ্যও দেখা যায়। এছাড়া সিলিস্তা রহমান নামে শাহীনের বান্ধবী বাইরে থেকে পলিথিন ও ব্লিচিং পাউডার নিয়ে আসার দৃশ্যও সিসিটিভি ফুটেজে আছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আমানের স্বীকারোক্তি ও সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, হত্যাকাণ্ডের পরদিন বিকালে একটি ট্রলি ব্যাগ হাতে নিয়ে বাসা থেকে বের হয় আমান। সে জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে জানিয়েছে, বাসা থেকে বের হয়ে পাশের একটি শপিং মলের সামনে সেই ট্রলি ব্যাগটি সিয়ামের হাতে তুলে দেয়। সিয়াম সেই ব্যাগ নিয়ে তাদের আগে থেকেই ভাড়া করে রাখা গাড়ি নিয়ে অজ্ঞাতস্থানের দিকে চলে যায়। তবে সেই গাড়িচালক কলকাতা পুলিশকে জানিয়েছে, সিয়াম কিছুদুর যাওয়ার পর ব্যাগটি নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে পড়ে।
আমান জানায়, লাশের টুকরাসহ আরেকটি ব্যাগ বাসাতেই ছিল। সেই ব্যাগ থেকে দুর্গন্ধও ছড়ানো শুরু করেছিল। সে লাশের টুকরাসহ ব্যাগটি সহযোগীদের অন্য কোথাও ফেলে দেওয়ার নির্দেশনা দিয়ে ১৫ মে সিলিস্তাকে নিয়ে ঢাকায় চলে আসে।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, হত্যাকাণ্ডের পর আমানের নির্দেশনা অনুযায়ী তার দুই সহযোগী এমপি আনারের ব্যবহৃত দুটি মোবাইল ফোন নিয়ে দুই দিকে চলে যায় যাতে তদন্তকারী বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এমপি আনারের অবস্থান সম্পর্কে বিভ্রান্ত হয়।
পাঁচ কোটি টাকায় চুক্তি:
জিজ্ঞাসাবাদে আমান জানিয়েছে, এমপি আনোয়ারুল আজিম আনারকে হত্যার জন্য পাঁচ কোটি টাকা দিতে চেয়েছিল আক্তারুজ্জামান শাহীন। হত্যাকাণ্ডের আগে তাকে কিছু টাকা পরিশোধ করা হয়। বাকি টাকা দেওয়ার কথা ছিল হত্যাকাণ্ডের পর। তাদের মিশন সফল হওয়ার পর আনারের লাশের টুকরাগুলো গুম করার জন্য সিয়াম ও জিহাদকে দায়িত্ব দিয়ে ঢাকায় চলে আসে আমান। ঢাকায় এসে দেখা করে আক্তারুজ্জামান শাহীনের সঙ্গে। তবে আক্তারুজ্জামান শাহীন পরবর্তীতে তাকে কত টাকা দিয়েছে তার কোনও উত্তর দেননি তিনি। গোয়েন্দা পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আমান অনেক কিছুই এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। মামলা দায়েরের পর তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তখন হয়তো আরও অনেক প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, ঢাকায় এসে মোহাম্মদপুরের বোনের বাসায় আত্মগোপন করে ছিল আমান। সেখান থেকেই তাকে আটক করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়েছে শাহীন:
সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা সাজিয়ে দিয়ে ১০ মে ঢাকায় চলে আসে আক্তারুজ্জামান শাহীন। এমপি আনোয়ারুল আজিম নিখোঁজের বিষয়টি দেশে আলোচিত হলে সে ১৮ মে আবারো ভারত হয়ে নেপালে চলে যায়। ২১ মে নেপাল থেকে চলে যায় দুবাই। ২২ মে দুবাই থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমায়। যুক্তরাষ্ট্রে শাহীনের ঠিকানা নিউ ইয়র্কে ৩৭৯ ইস্ট সেভেন্থ স্ট্রিট ব্রুকলিন এলাকায় বলে জানা গেছে।
নেপথ্যে সোনা চোরাচালানের অর্থ ভাগাভাগি:
কর্মকর্তারা জানান, এমপি আনোয়ারুল আজিমকে নির্মমভাবে হত্যার নেপথ্যে স্বর্ণ চোরাচালানের অর্থ ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্ব রয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। আক্তারুজ্জামান শাহীন নিজেও একজন স্বর্ণ চোরাচালানকারী। এমপি আনোয়ারুল আজিমের বিরুদ্ধেও স্বর্ণ চোরাচালানের অভিযোগ রয়েছে। কলকাতায় শাহীন ও আজিমেরে যৌথ ব্যবসা রয়েছে। সংশ্লিষ্টদের ধারণা, স্বর্ণ চোরাচালানের বিপুল অর্থ ভাগাভাগি নিয়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কে এই আমান?
সংশ্লিষ্টরা জানান, ভাড়াটে কিলার হিসেবে এমপি আনার হত্যায় নেতৃত্ব দেওয়া আমানের পুরো নাম আমানুল্লাহ সাঈদ। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে পড়াশোনা করেছেন। তিনি পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির (লাল পতাকা) নেতা ছিলেন। ১৯৯১ সালে যশোরের অভয়নগর এলাকায় গণেশ নামে এক ব্যক্তিকে হত্যার অভিযোগে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত কারাবন্দি ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি ২০০০ সালে আবারো ইমান নামে আরেক ব্যক্তিকে হত্যার অভিযোগে গ্রেফতার হন। ২০১৩ সাল পর্যন্ত তিনি কারাবন্দি ছিলেন। জামিনে কারাগার থেকে বের হয়ে তিনি ভাড়াটে কিলার হিসেবে কাজ করতেন। জানা গেছে, আমানুল্লাহর গ্রামের বাড়ি খুলনার ফুলতলার দামোদার এলাকায়। তার বাবার নাম কায়সার সাঈদ। মায়ের নাম দোলানা বেগম। স্ত্রী ফারজানা আক্তার। তার বিরুদ্ধে দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চল এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় একাধিক মামলা রয়েছে।
মামলা হবে কলকাতায়ও:
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এমপি আনোয়ারুল আজিম হত্যাকাণ্ডে কলকাতাতেও একটি মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে। কলকাতার স্থানীয় পুলিশ ওই ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়ে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করেছে। ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে এমপি আজিমের পরিচয় নিশ্চিত করা হবে। সংশ্লিষ্টরা জানান, একইসঙ্গে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করে কলকাতার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা লাশের টুকরাগুলোর সন্ধানে মাঠে নেমেছে। এজন্য পলাতক আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। লাশের টুকরাগুলো কোথায় ফেলা হয়েছে তা জানার চেষ্টা চলছে।
এমপি আনার হত্যায় ঢাকায় মেয়ের মামলা:
ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীমকে অপহরণ করার অভিযোগে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। বুধবার সন্ধ্যায় তার মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ঢাকার শেরেবাংলা নগর থানায় এই মামলা করেন। মামলা হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার রোবায়েত জামান। মামলাটি ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ তদন্ত করছে বলে জানান তিনি।
শেরেবাংলা নগর থানায় হওয়া মামলার বরাত দিয়ে পুলিশ সূত্র জানায়, গত ৯ মে রাত আটটার দিকে আনোয়ারুল আজিম রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের বাসা থেকে গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হন। দুদিন পর ১১ মে মুমতারিন তার বাবার সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলেন। তাতে তার বাবার কথাবার্তায় কিছুটা অসংলগ্ন বলে মনে হয়। এরপর মুমতারিন তার বাবার মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিলে তা বন্ধ পান। এরপর ১৪ মে ভারতের মুঠোফোন নম্বর থেকে তার এক স্বজনের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে একটি খুদে বার্তা আসে। এতে লেখা ছিল, ‘আমি হঠাৎ করে দিল্লি যাচ্ছি, আমার সাথে ভিআইপি আছে। আমি অমিত সাহার কাছে যাচ্ছি। আমাকে ফোন দেয়ার দরকার নেই। আমি পরে ফোন দিব।’ এই খুদে বার্তা ছাড়াও ভারতের ওই মুঠোফোন নম্বর থেকে আরও কয়েকটি খুদে বার্তা আসে তাদের মুঠোফোন নম্বরে। এই খুদে বার্তাগুলো অপহরণকারীরা তারা বাবার মুঠোফোন ব্যবহার করে দিয়ে থাকতে পারে।
মামলায় মুমতারিন উল্লেখ করেন, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর বিভিন্ন জায়গায় তার বাবাকে খোঁজ করতে থাকেন। সন্ধান না পেয়ে ভারতে অবস্থানরত তার বাবার বন্ধু গোপাল বিশ্বাস ভারতের বরানগর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। এরপরও বাবাকে খোঁজাখুঁজি অব্যাহত রাখেন। পরে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানতে পারেন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে তাঁর বাবাকে অপহরণ করেছে।
পুলিশ সূত্র জানায়, ১২ মে সন্ধ্যা ৭টার দিকে ভারতে গিয়ে আনোয়ারুল আজীম কলকাতায় তাঁর পূর্বপরিচিত বন্ধু গোপাল বিশ্বাসের বাসায় ওঠেন। গোপালের সঙ্গে তাঁর ২৫ বছরের পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে। ১৩ মে বেলা ২টার দিকে তিনি চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার কথা বলে গোপালের বাসা থেকে বের হন। তখন সন্ধ্যায় বাসায় ফিরবেন বলে জানিয়েছিলেন। এরপর আর বাসায় না ফেরার কারণে ১৮ মে কলকাতার বরাহনগর থানায় জিডি করেন গোপাল বিশ্বাস।