কালীগঞ্জ প্রতিনিধি
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের দারুস-শেফা প্রাইভেট হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় লাভলী বেগম (২৬) নামে এক প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার দিবাগত রাতে তার মৃত্যু হয়। লাভলী খাতুন জেলার হরিণাকুণ্ডু উপজেলার তৈলটুপী গ্রামের এনামুল কবিরের স্ত্রী। এই দম্পতির সাফি নামে ৭ বছরের এক ছেলে সন্তান রয়েছে। স্বামীর চাকরির কারণে তারা কালীগঞ্জ শহরে থাকতেন।
স্বজনরা জানান, ২য় সন্তানের জন্ম দিতে লাভলী বেগমকে শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে শহরের দারুস-শেফা প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার শরীরে অস্ত্রপচার করেন চিকিৎসক রেক্সোনা পারভীন ইলোরা। অস্ত্রপচারের মাধ্যমে লাভলী বেগম কন্যা সন্তানের জন্ম দিলেও তার প্রচুর রক্তক্ষরণ হতে থাকে। ভুল অস্ত্রপচারে চিকিৎসক রেক্সোনা পারভীন প্রসূতির জরায়ু নারী কেটে ফেলেন। এরপরে রক্তক্ষরণ বন্ধ না হওয়ায় বিকেল ৪ টার দিকে পুনরায় লাভলী বেগমকে নেয়া হয় অপারেশন থিয়েটারে। প্রায় ৩ ঘন্টা ধরে চলা দ্বিতীয় অস্ত্রপচারের কথা বলে অপারেশন থিয়েটারেই রাখা হয় লাভলী খাতুনকে। স্বজনরা এ সময় রোগীর অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে অপারেশন থিয়েটারের ভেতর থেকে বারবার জানানো হয় রোগী ভালো আছে। সেলাই শেষ করেই তাকে বেডে দেয়া হবে। দীর্ঘ সময় পার হলেও রোগীকে অপারেশন থিয়েটার থেকে বের না করায় স্বজনদের মনে সন্দেহ জাগে। এরপর একজন অপারেশন থিয়েটারে প্রবেশ করে দেখেন রোগী অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে। এ সময় চিকিৎসক রেক্সোনা পারভীন ইলোরা প্রসূতিকে যশোরে রেফার্ড করেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ৩ টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
লাভলী খাতুনের স্বামী এনামুল কবির জানান, দারুস-শেফা প্রাইভেট হাসপাতালের চিকিৎসক রেক্সোনা পারভীন ইলোরার ভুল চিকিৎসায় তার স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে। রেক্সোনা পারভীন অপ্রয়োজনে তার স্ত্রীর জরায়ু কেটে ফেলেছেন। জরায়ু কেন কাটা হলো এমন প্রশ্নের কোন সদুত্তর তিনি দিতে পারেননি। রোগীর শরীরের রক্তক্ষরণ দেখে চিকিৎসক রেক্সোনা নিজেই ঘাবড়ে যান। তখন চিকিৎসক বলেন, আমি সাথে লোক দিচ্ছি আপনারা দ্রুত যশোর নিয়ে যান। অপচিকিৎসায় আমার স্ত্রীর মৃত্যুর জন্য জড়িতদের বিচার চাই।
এ ব্যাপারে জানতে দারুস-শেফা প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসক রেক্সোনা পারভীন ইলোরার মোবাইলে ফোন দিলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
কালীগঞ্জ উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার আলমগীর হোসেন বলেন, দারুস-শেফা প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগীরা বিভিন্ন সময় অভিযোগ করলেও পরবর্তীতে প্রাইভেট হাসপাতালটির মালিক পক্ষের সাথে সমঝোতা করায় শেষ পর্যন্ত হাসপাতালটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয়নি। এই ঘটনা শুনলাম, অবশ্যই এ ব্যাপারে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।