কালীগঞ্জ সংবাদদাতা
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চাকুরি করেন তৃতীয় শ্রেণির পদে। আবার তিনিই করেন হিসাবরক্ষকের কাজ। আর এরই সুবাদে তিনি গড়েছেন কোটি টাকার সম্পদ। একটি ব্যাংক হিসাব নম্বরে মিলেছে ২ কোটি টাকার বেশি লেনদেন। এছাড়াও রয়েছে কোটি টাকার সম্পদ। বলছিলাম ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিসংখ্যানবিদ মইনুর রহমানের কথা। মইনুর রহমান উপজেলার বারবাজার মিঠাপুকুর এলাকার গহর আলী মন্ডলের ছেলে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সুত্রে জানা গেছে, একটানা একই স্থানে ১১ বছরের বেশি সময় চাকুরি করছেন তিনি। বিগত সরকারের সময় তিনি স্থানীয় আওয়ামী প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় থাকতেন। ৫ আগস্টের পর আবার খোলস পাল্টাতে চেষ্টা করছেন। তার খারাপ ব্যবহারে অতিষ্ঠ হাপাতালের নার্সসহ অন্য সহকর্মীরা। কিন্তু ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করতে পারেন না। দীর্ঘদিন হিসাবরক্ষক পোস্টটি খালি থাকায় তিনি পরিসংখ্যানবিদ হয়ে হিসাবরক্ষকের কাজটি করেন। আবার কেউ হিসাবরক্ষক পদে এলে তাকে দায়িত্ব না বুঝিয়ে দেওয়ার অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। নার্সদের বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা এলে সেখান থেকে ভাগ বসানোর অভিযোগ রয়েছে। এদিকে আগামী ডিসেম্বরে নার্সদের শ্রান্তি বিনোদনের টাকা দিবে সরকার। নার্স প্রতি ২ হাজার টাকা চাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

হাসপাতালের কয়েকজন নার্স নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মইনুর রহমানের আচার-ব্যবহার খুবই খারাপ। তার ভয়ে কেউ মুখ খুলতে পারে না। সরকারি বিভিন্ন টাকা আনতে গেলে তাকে ঘুস দিতে হয়। এছাড়াও আগামী ডিসেম্বরে সরকার প্রদত্ত শ্রান্তি বিনোদন পাওয়ার জন্য মাথাপিছু ২ হাজার টাকা চেয়েছেন। বিভিন্ন সময় অভিযোগ দিয়েছি কোন প্রতিকার পাইনি।

পরিসংখ্যানবিদ মইনুর রহমানের একটি ব্যাংক হিসাবের লেনদেনের তথ্য এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। সোনালী ব্যাংক কালীগঞ্জ শাখার হিসাব নম্বরটি ২৪০৯১০১০১৫৭২০। ২০১৭ সালের ১২ জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের ০৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। ব্যাংক হিসাবটি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে এই সময়কালে এই হিসাব নম্বরে টাকা জমা হয়েছে ২ কোটি ১৩ লক্ষ ৮৭ হাজার ৫০৫ টাকা। আর উঠানো হয়েছে ২ কোটি ১৪ লক্ষ ২৭ হাজার ২১৯ টাকা। এরমধ্যে তিনি বেতন পেয়েছেন প্রায় ৩১ লক্ষ টাকা। সবচেয়ে বেশি অস্বাভাবিক লেনদেন হয়েছে ২০১৯, ২০২০, ২০২১ ও ২০২২ সালে। ২০১৮ সালে তার বেতন ছিল ১৩ হাজার ৮৩০ টাকা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মইনুর রহমান এ বছরের শুরুতে উপজেলার মিঠাপুকুর এলাকায় ৬ শতকের একটি জমি কিনেছেন। এই জমির দলিলমূল্য দেখানো হয়েছে ৩০ লক্ষ টাকা। এছাড়াও প্রায় ৫ বছর আগে কালীগঞ্জ শহরের বলিদাপাড়া এলাকায় রাস্তার পাশেই ৬ শতকের একটি জমি কিনেছেন। বর্তমানে জমিটি কাঁটাতার দিয়ে ঘেরা অবস্থায় আছে।

এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিসংখ্যানবিদ মইনুর রহমান বলেন, প্রাক্তন এমপি আনোয়ারুল আজীম আনারের ভাগ্নে সম্পর্কে মুহিবের সাথে ফুড অফিসে চাউলের ব্যবসা করতাম। অনুমতি ছিল না তবে একজনের সাথে পার্টনারে ব্যবসা করতাম। টাকা-পয়সা ঝামেলার কারণে সেই ব্যবসা বন্ধ করে দেই। উনার সাথে টাকার যে লেনদেন ছিল তার বিনিময়ে তিনি মিঠুপুকুর এলাকায় জমি রেজিস্ট্রি করে দিয়েছেন। নার্সদের কাছ থেকে ২ হাজার টাকা নেয়ার ব্যাপারে বলেন, শ্রান্তি বিনোদনের টাকা আনতে গেলে কিছু খরচ দিতে হয়। সেজন্য চাওয়া হয়েছিল।

কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রেজাউল করিম বলেন, আমি এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১ বছর যাবৎ আছি। এখানে এসে হিসাবরক্ষক পদে কাউকে পাইনি। পরিসংখ্যানবিদ মইনুর সাহেব এটা করেন। টাকা নেয়ার অভিযোগ পেয়েছিলাম সেটি মৌখিকভাবে নিষেধ করা হয়েছে। এছাড়া তার সম্পদের ব্যাপারে কোন তথ্য জানা নেই।

Share.
Leave A Reply Cancel Reply
Exit mobile version