বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোর জেলার আইনশৃংখলা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মো. আজাহারুল ইসলাম। তিনি বলেছেন, কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নিতে হবে। একই সাথে স্কুলগামী শিক্ষার্থীরা যাতে কিশোর গ্যাং সংস্কৃতিতে না জড়িয়ে পড়ে সেজন্য শিক্ষকদের সতর্ক থাকতে হবে। প্রয়োজনে প্রতিমাসে একবার অভিভাবক সমাবেশ করতে হবে। দশম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা তাদের ব্যাগের ভেতরে বই ছাড়া আর কিছু নিয়ে আসছে কিনা সেগুলো নিয়মিত মনিটরিং করার বিষয়ে শিক্ষকদের যত্নশীল হতে।
জেলার আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় নভেম্বর মাসের অপরাধ পর্যালোচনা করা হয়। এতে উল্লেখ করা হয়, নভেম্বর মাসে যশোর জেলায় খুন, ডাকাতি, চুরি, অপহরণ, নারী নির্যাতন, অস্ত্র ও মাদকের ২৪০টি মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। যা অক্টোবরের তুলনায় ১৫টি কম। নভেম্বরে জেলায় ৮জন খুন হয়েছেন। এর মধ্যে কোতয়ালিতে ৪জন, ঝিকরগাছায় ২ জন, বেনাপোল ও অভয়নগরে একজন করে খুন হয়েছেন। অক্টোবর মাসে জেলায় ১২জন খুন হয়েছিল। নভেম্বর মাসে একটি ডাকাতি, একটি দস্যুতা, ১৬টি নারী নির্যাতন, ৪টি অপহরণ, ৩০টি চুরির মামলা, অস্ত্র আইন ও মাদকদ্রব্য আইনে মামলা হয়েছে ৯৭টি।
অন্যদিকে, বিগত দিনের তুলনায় মামলা নিষ্পত্তির সংখ্যা বেড়েছে গ্রাম আদালতে। নভেম্বর মাসে ৮ উপজেলায় ২০৪টি মামলা দায়ের হলেও নিষ্পত্তি হয়েছে ২১৫টি মামলা। নিষ্পত্তির তালিকায় সবার উপরে যশোর সদর উপজেলা। নভেম্বরে গ্রাম আদালতে সদর উপজেলায় ৩৫টি মামলা দায়ের হয়েছে। নিষ্পত্তি হয়েছে ৫৯টি, অনিষ্পন্ন মামলা রয়েছে ১২টি। বাঘারপাড়ায় দায়েরকৃত মামলা ২৩টি, নিষ্পত্তি হয়েছে ২২টি, অনিষ্পন্ন রয়েছে ৮টি মামলা। অভয়নগরে দায়ের হয়েছে ৩০টি, নিষ্পত্তি ৩২টি, অনিষ্পন্ন মামলার সংখ্যা ৩৩টি। মণিরামপুর দায়েরকৃত মামলার সংখ্যা ৪৩, নিষ্পত্তি ৪৯, অনিষ্পন্ন রয়েছে ১৬টি। কেশবপুরে দায়েরকৃত মামলার সংখ্যা ২৯টি, নিষ্পত্তি হয়েছে ১০টি, অনিষ্পন্ন মামলা রয়েছে ৭১টি। ঝিকরগাছায় ৮টি দায়েরকৃত মামলার মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে ৫টি, অনিষ্পন্ন রয়েছে ১১টি মামলা। শার্শায় ১১টি মামলা দায়ের হয়েছে। নিষ্পত্তির সংখ্যা ১৩, অনিষ্পন্ন ২৯টি ও চৌগাছায় ২৫টি মামলার মধ্যে ২৫টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে, অনিষ্পন্ন রয়েছে ২টি।
আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় নভেম্বর মাসের সড়ক দুর্ঘটনার চিত্রে দেখা যায়, ১০টি দুর্ঘটনায় ১১জন নিহত ও ২ জন আহত হয়েছেন। এছাড়াও বিভিন্ন ধারায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে ৪ লাখ ১০ হাজার ৭শ’ টাকা জরিমানা আদায় হয়েছে।
সভায় উন্মুক্ত আলোচনায় জেলায় কিশোর গ্যাং তৎপরতা বৃদ্ধির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন বক্তারা। যশোর চেম্বারের সভাপতি মিজানুর রহমান খান বলেন, ৫ আগস্টের পর কিশোর গ্যাং এর তৎপরতা খুব বেশি দেখা না গেলেও সম্প্রতি বিভিন্ন মোড়ে তাদের আবার দেখা যাচ্ছে। সন্ধ্যার পর শহরের বিভিন্ন জায়গায় চিহ্নিত কিশোর গ্যাং সদস্যদের আড্ডা জমে উঠেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার আগেই প্রশাসনের উচিৎ এবিষয়ে কার্যকরি প্রদক্ষেপ নেয়া।
তিনি আরও বলেন, বেশ কিছুদিন বিসিক শিল্প এলাকায় চাঁদাবাজি এবং ছিনতাই বন্ধ ছিলো। সেখানে আবারও অপরাধীরা মাথাচারা দিয়ে উঠছে। ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তার স্বার্থে ওই এলাকায় পুলিশি নজরদারী বাড়ানো উচিৎ। একই সাথে দ্রব্যমূল্যে নিয়ন্ত্রণে চেম্বার অব কমার্স কার্যকরি ভূমিকা রাখবেও বলেও তিনি আশ্বাস দেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) নূরে আলম সিদ্দিকি বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের তুলনায় স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। ট্রাফিক পুলিশ নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে। সার্বিক বিষয়ে গোয়েন্দা নজরদারিও বৃদ্ধি করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মো. আজাহারুল ইসলাম আরও বলেন, জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেই সবাই ভালো থাকবেন। তাই অপরাধীদের চিহ্নিত করে তাদের বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। আমাদের চেষ্টা থাকবে কোন অপরাধ ঘটার আগেই যেনো আমরা সেটি প্রতিরোধ করতে পারি। এজন্য গোয়েন্দা বাহিনীকে আরও তৎপর হতে হবে।