বাংলার ভোর প্রতিবেদক
‘বাঘারপাড়া উপজেলার সকল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা টিএস আইয়ূবের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে কাজ করছেন। বাংলাদেশে একটি নজিরবিহীন ঘটনা হচ্ছে, পাঁচ আগস্টের পর থেকে বাঘারপাড়ার সকল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এখনও ইউনিয়ন পরিষদে বসে নির্বিঘ্নে কাজ করছেন। যা টিএস আইয়ূবের কারণেই সম্ভব হয়েছে। আগামীতে সকল চেয়ারম্যান তার নেতৃত্বেই কাজ করবে। বাঘারপাড়ার উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাকে নির্বাচিত করেই আমরা ঘরে উঠব।’
যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার জামদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফুল ইসলাম তিব্বতের এমন বক্তব্য শনিবার রাত থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এক মিনিট ৪৬ সেকেণ্ডের এই ভিডিও নিয়ে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা চলছে। বিএনপি নেতাকে এমপি বানাতে আওয়ামী লীগ নেতাদের একাট্টা হওয়ার ঘোষণায় নিজ দলের নেতাকর্মীরা যেমন বিব্রত; তেমনি তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যেও। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বলছেন, দলের দুর্দিনে দলের আদর্শের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন তিব্বত। আর বিএনপি নেতারা বলছেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পুনর্বাসনে ব্যস্ত খোদ বিএনপি নেতারা। বিএনপি নেতাদের ছত্রছায়াতেই আওয়ামী লীগের নেতারা মাঠে নামছে।
স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার জামদিয়া ইউনিয়নের জয়ারামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে গত ৪ ও ৫ এপ্রিল দু’দিনব্যাপি বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিনের প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির জাতীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও কৃষক দলের যুগ্ম সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার টিএস আইয়ুব। প্রথম দিন রাতের অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, জামদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফুল ইসলাম তিব্বত। তার বক্তব্যে তিনি উপরোক্ত কথা বলেন। এছাড়াও তিব্বত তার বক্তব্য আরো বলেন, বাঘারপাড়ার শেষ ঠিকানা হচ্ছে টিএস আইয়ূব। আগামীতে নয়টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তার নেতৃত্বেই চলবে।
আরিফুল ইসলাম তিব্বতের এ বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা ভাইরাল হয়। তার নিজ দলের নেতা কর্মীরা তার বিপক্ষে বিভিন্ন মন্তব্য করতে থাকেন। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে আড্ডায় ও চায়ের দোকানে এ বিষয়টিই দিনভর ছিলো প্রধান আলোচনায়। অনেকেই অন্য ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে ফোন করে জানতে চেয়েছেন, আসলেই সব চেয়ারম্যান টিএস আইয়ূবের সাথে একাত্মা হয়েছেন কিনা।
উলে¬খ্য, আরিফুল ইসলাম তিব্বত জামদিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বাঘারপাড়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহবায়ক। বিগত ইউপি নির্বাচনে বাঘারপাড়া উপজেলার নয়টি ইউনিয়নের সাতটিতে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বিজয়ী হন। এর মধ্যে আরিফুল ইসলাম তিব্বত একজন। এই সাতজনের বাইরে রায়পুর ইউনিয়নে স্বতন্ত্র ও বন্দবিলা ইউনিয়নে নির্বাচিত হন ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী।
দোহাকুলা ইউপি চেয়ারম্যান আবু মোতালেব তরফদার জানিয়েছেন, তিব্বত যখন বক্তব্য দিয়েছে তখন সে সুস্থ ছিলো কিনা আমার সন্দেহ হয়। টিএস আইয়ূব একটি রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে আছেন। ইউনিয়ন পরিষদের কাজে কর্মে তার সাথে যোগাযোগ করা বা একসাথে কোন সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার বিষয়টি ঘটতেই পারে। তার মানে এই নয় যে, ঘোষণা দেবেন বাঘারপাড়ার সব চেয়ারম্যান টিএস আইয়ূবের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন।
বন্দবিলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সবদুল হোসেন খান জানিয়েছেন, আরিফুল ইসলাম তিব্বত যে বক্তব্য দিয়েছেন তা তার নিজস্ব মতামত। বাঘারপাড়ায় ইউপি চেয়ারম্যানদের কোন বৈঠকে টিএস আইয়ূবের সাথে একাত্মতা প্রকাশের ঘোষণা হয়নি। বাকি আট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তিব্বতের ওই বক্তব্যের আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ করবেন।
এ বিষয়ে জামদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফুল ইসলাম তিব্বত জানিয়েছেন, ‘অনুষ্ঠানের প্রথম দিন বিকেলে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গোলযোগ হয়। প্রায় তিন ঘন্টা অনুষ্ঠান বন্ধ ছিল। সন্ধ্যায় পরিস্থিতি সামাল দিতে আমি ওই বক্তব্য দিয়েছি।
এই বিষয়ে বিএনপি নেতা টিএস আইয়ূব সাংবাদিকদের জানান, ইউপি চেয়ারম্যান তিব্বত যে বক্তব্য দিয়েছে তা তার নিজস্ব ব্যাপার। এর সাথে তার (টিএস আইয়ুব) কোনো সম্পর্ক নেই। বরং এটি নিয়ে বিএনপির বহিস্কৃত একটি অংশ অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছে। এ ব্যাপারে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।