এসএ কে শামছুদ্দীন জ্যোতি
বাবা তুমি কেমন আছো ছোট্ট মাটির ঘরে, হঠাৎ অজানা ঝড়ে তোমায় হােিয় নিঃস্ব হয়ে গেলাম, ভালোবাসি তোমায় বাবা বুকটা যে যায় চিরে, তোমার কথা বারে বারে পড়ছে যে হৃদয় মাঝে। বাবা কতদিন, কতদিন দেখিনা তোমায়। তোমার চশমাটা তেমনি আছে, আছে লাঠি ও পাঞ্জাবি তোমার, শুধু তুমি নেই। কতদিন কত রাত দেখিনা তোমায়। কেমন আছো বাবা তুমি আমায় ছেড়ে-
আমি অনেক ভালো আছি বাবা। তোমার দোয়ার বরকতে আল্লাহর অশেষ রহমতে তোমার সকল স্বপ্ন পূরণের পথে আজ আমি যাত্রা করতে পেরেছি। শুধু তুমি দেখে যেতে পারলে না। আমায় একা করে চলে গেলে গহীন অন্ধকারে। জানিনা কেমন আছো তুমি আর কোনদিন জানতেও পারবো না।
সেই যেদিন তুমি অসুস্থ হলে সেদিন বুঝতে পারলাম তুমি আমার কী ছিলে। ঘরের মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলে তবুও আমি ছিলাম রাজার রাজা। খালি পকেটে থাকলেও কোন ভয় ছিল না মনে কারণ আমার যে তুমি ছিলে। আজ আমি এতটাই নিঃস্ব যে কোন বিপদ হলে অসহায় হয়ে পড়ি তুমি নেই বলে। তোমার স্বপ্ন যা তুমি কোনদিনই কাউকে বলোনি হাতে গোনা দু-একজনকে আভাস দেয়া ছাড়া। আজ তোমার সেই চাওয়া দুনিয়ার বুকে তোমার প্রিয় স্থান নিউমার্কেটে একটুকরো ঠিকানা সবকিছুই আমি তোমার দোয়ার বরকতে আল্লাহার অশেষ রহমতে পূর্ণ করার পথে। শুধু তুমি নেই আমার সাথে। আমি জানি তুমি দেখছ বাবা ওই দূর আকাশ থেকে। আর আমাকে তোমার ভালোবাসার সবটুকু ঢেলে দিচ্ছ অবিররামভাবে। তা না হলে নিঃস্ব আমি এতকিছু করার শক্তি কোথায় পেতাম বল বাবা। তোমার পত্রিকা তোমার ঠিকানা আমি কিভাবে করতে পারতাম বাবা। কিন্তু তুমি ত চলে গেলে আমায় একা করে রেখে। সবকিছু পাওয়ার পরও যে নিঃসঙ্গতা নিঃস্বতা আমাকে ছাড়ে না বাবা তোমাকে পাশে না পাাওয়ার বেদনায়। আমি জানি বাবা তুমি ভালো আছো ওই দূর নক্ষত্রের মাঝে। মাটির ঘরের গহীন অন্ধকারকে আলোকিত করার সবটুকুই ত তুমি করে গেলে দুনিয়ার বুকে থাকার সময়। তাই আমার মহান রব তোমাকে অবশ্যই ভালো রাখবেন। ঠিক যেভাবে তুমি আমাকে ভালো রেখেছিলে। কোনদিন যেমন তোমাকে বলতে হয়নি আমার কি চাই। ঠিক যেভাবে তুমি বুঝে যেতে আমার সব চাওয়াগুলো। ঠিক যেভাবে আমার সকল অন্যায় আবদারগুলোও তুমি মেনে নিতে নির্দ্বিধায়। এখনও যেমন আমার কঠিন সময়গুলোতে তোমার ছায়া আমি ঠিকই খুঁজে পায়। কিন্তু কেন বাবা তুমি চলে গেলে ? আরো অনেকের বাবাই ত ঘুরে বেড়ায় আমার সামনে দিয়ে, শুধু তুমি নাই।
অসুস্থ অবস্থায় যখন ঘরে ছিলে তখন যে ঘরে ফিরেই তোমার কাছে ছুটে যেতাম আমি তুমি থাকবে আমার সবটুকু হয়ে সেই আশায়। সেই তুমি আমাকে তোমার ভাইকে আমি রাখতে গেলাম গহীন অন্ধকারের মাটির ঘরে আর তুমি আমাকে রেখে চলে গেলে সেই ফাঁকে। আমায় একা করে। দিয়ে গেলে তোমার সবটুকু আশির্বাদ আমায় ঢেলে। তাই ত যে কথা তুমি বলতে মাকে ‘ছেলে আমার বড় হবে; হবে মানুষের মত মানুষ এক’। সেই বড় হওয়ার পথে আমি যে আজ তোমায় ছাড়া বাবা। আজ তোমার জিশান বড় হয়েছে তোমার তাহমিদও বড় হয়েছে। এখনই ওদের সময় হয়না পড়া বাদে অন্যকিছু নিয়ে ভাবার। কিন্তু বাবা আমার যে সবকিছুর মাঝে শুধু তোমার ভাবনায় জড়িয়ে থাকে। তাই ত প্রতি শুক্রবারে তোমার থাকার ওই ছোট মাটির ঘরটা দেখতে আমি ছুটে যায় জুম্মার নামাজ আদায় করেই। কিন্তু জানতে চাই তুমি কেমন আছো বাবা। সেই মহান রবের কাছে আমার জানার সবটুকু নিয়ে বলি তোমায় যেন ভালো রাখেন তিনি। আর কি করতে পারি বলো বাবা আমি। তুমি যে সবকিছু করে গেলে আমার জন্য বাবা। কিন্তু আমি ত তোমার জন্য কিছুই করতে পারিনি। এতটা ব্যর্থ সন্তানকেও তুমি আজন্ম দোয়া দিয়ে গেছ বড় হওয়ার।
আজ ১১ টা বছর পূর্ণ হলো বাবা তুমি নেই আমার সাথে। তুমি যে দায়িত্ব আমায় দিয়ে গেছ তার কিছুই আমি পারিনি পালন করতে। শুধু তোমার দোয়ার বরকতে আল্লাহর অশেষ রহমতে দিনগুলো কেটে গেছে তোমার রেখে যাওয়া ছোট্ট পরিবারটার সহি সালামতে। মা আজ অসুস্থ তবুও অনেকটাই শান্তিতে থাকে শুধু আর্থিক অনটনটুকু ছাড়া। তোমার জিশান-তাহমিদ আজ যার যার জায়গায় অনেক বড়। তাদের দুনিয়াটা অনেক বড়। জানিনা ওরা কে কি হবে আর কিভাবেই বা হবে। আমার জায়গা থেকে আমি শুধু চেষ্টা করি ওরা যেন একটু ভালো থাকে ওদের মুখগুলোতে যেন হাসি থাকে। জানি আমি তা পারিনা তারপরও আমার চেষ্টাটুকু শুধু ওটুকুই। কারণ আমি জানি তুমিও চাইতে আমি যেন ওদের মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টাটুকু করি।