স্বাধীন মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ
যশোর টাউন হল মাঠে চেম্বর অব কমার্স এণ্ড ইন্ডাস্ট্রিজ আয়োজিত মাসব্যাপি শিল্প ও বাণিজ্য মেলা ক্রেতা সংকটে ভুগছে। মেলার এক তৃতীয়াংশ সময় অতিবাহিত হলেও আশানুরূপ জনসমাগম না হওয়ায় হতাশ বিক্রেতারা। সকাল থেকে অলস সময় পার করছেন তারা। বিকেলে কিছু ক্রেতার আনাগোনা দেখা গেলেও বিক্রি তেমন একটা হচ্ছে না বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

বুধবার বিকেলে মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন ধরনের দেশি-বিদেশি পণ্য ও খাবারের পসরা সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। মেলায় শিশুদের জন্য নাগরদোলা, নৌকা, জাম্পিং, ড্রাগন ট্রেন ও স্লিপারের মতো বিনোদন ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়াও বস্ত্র, নকশী কাঁথা, গৃহস্থালীর সরঞ্জাম, ফুসকা-চটপটি, আচার এবং ভূতের বাড়ির মতো আকর্ষণীয় স্টলও চোখে পড়ে।

তবে, বেশিরভাগ বিনোদন কেন্দ্র ও দোকানে ক্রেতাদের তেমন ভিড় দেখা যায়নি। নাগরদোলা ও নৌকার বেশিরভাগ আসনই ছিল ফাঁকা। শিশুদের স্লিপারে কিছুটা ভিড় দেখা গেলেও সেখানে টিকিটের উচ্চমূল্যের কারণে অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের অংশগ্রহণে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।

অন্যদিকে, ভূতের বাড়িতে অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশে ভূত ও জাদু প্রদর্শিত হচ্ছে। যার প্রবেশ মূল্য ৫০ টাকা। এই স্টলের সামনে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের কিছুটা আনাগোনা লক্ষ্য করা গেছে।

মেলার মাঠে কসমেটিক পণ্যের স্টল নিয়ে বসা পলাশ শেখ জানান, মেলায় মোটামুটি বিক্রি হচ্ছে। খেলনা ও কসমেটিক বিক্রি করলেও প্রত্যাশা অনুযায়ী লাভ হচ্ছে না। সন্ধ্যার পর কিছু ক্রেতা এলেও বেচাকেনা খুব বেশি ভালো নয়।
বিসমিল্লাহ বিগ বাজারের কর্মচারী রাব্বি হাসান জানান, তাদের দোকানে ১৫০ টাকার বেশি দামের শোপিস, খেলনা ও গৃহস্থালীর প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রয়েছে। সন্ধ্যা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত কিছু ক্রেতার আগমন ঘটে।

বরিশাল থেকে আচারের দোকান নিয়ে আসা খাইরুল ইসলাম হতাশা প্রকাশ করে বলেন, বেচাকেনার অবস্থা খুবই খারাপ। এমন পরিস্থিতি তিনি আগে কখনও দেখেননি।

সিরামিক ব্যবসায়ী আব্দুল মান্নান, সুন্দর মাঠ এবং শহরের প্রাণকেন্দ্রে মেলা হওয়া সত্ত্বেও বিক্রি না হওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, জীবনে এমন হতাশাজনক মেলা আর দেখেননি।

বাচ্চাদের স্লিপারের ইভেন্ট পরিচালনাকারী আলমগীর হোসেন অবশ্য এখনও আশাবাদী। তিনি বলেন, মেলা এখনও জমে ওঠেনি। তবে তারা আশা করছেন সামনে পরিস্থিতি বদলাবে।

মেলায় ঘুরতে আসা আতিকুর রহমান জানান, মেলার পরিবেশ ভালো লাগলেও জিনিসপত্রের দাম তুলনামূলকভাবে বেশি মনে হয়েছে।

অন্য একজন দর্শনার্থী তানিয়া ইয়াসমিন বন্ধুদের সাথে মেলায় এসে আনন্দ পেলেও উন্মুক্ত মঞ্চে গান-বাজনার অভাব বোধ করেছেন। তিনি মনে করেন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকলে মেলা আরও প্রাণবন্ত হয়ে উঠত।

মেলার ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের দায়িত্বে থাকা সাজ্জাদ হোসেন বাবু জানান, মেলায় ছোট-বড় ৭৫টি স্টলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যার মধ্যে এখনও ২৫টি খালি রয়েছে। তিনি বলেন, ১৩ থেকে ১৪ বছর পর যশোরে মাসব্যাপি মেলা হওয়ায় মানুষের মধ্যে আগ্রহ রয়েছে। তীব্র গরম এবং এসএসসি পরীক্ষার কারণে প্রচারণায় কিছুটা ঘাটতি থাকায় দর্শনার্থীর সংখ্যা কম। তবে, তারা চেম্বার অব কমার্স ও জেলা প্রশাসনের কাছে মেলার সময়সীমা বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছেন। এর ফলে পরবর্তীতে জনসমাগম বাড়লে বিক্রেতারা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে বলে মনে করেন তিনি।

Share.
Leave A Reply Cancel Reply
Exit mobile version