পার্টি অফিস হয়ে ওঠে শোক, নীরবতা ও আবেগের এক প্রাঙ্গণ
বাংলার ভোর প্রতিবেদক
মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টা। যশোর শহরের লালদীঘি পাড়স্থ যশোর জেলা বিএনপির কার্যালয় এলাকা জুড়ে শত শত মানুষ। তবে আর দশটা দিনের মতো এদিন স্লোগানে স্লোগানে উত্তাল কিংবা মঞ্চে কেউ বক্তৃতায় রাজনীতিক উত্তাপ ছড়াচ্ছিলেন না। দাঁড়িয়ে থাকা মানুষদের চোখেমুখে ছিল গভীর শোকের ছায়া। কেউ চুপচাপ দাঁড়িয়ে, কেউ চোখ মুছছিলেন।

এই শোক, এই চুপচাপ বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যুর খবরে। তিন বারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, আপসহীন নেত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যুর খবরে যশোরের বিএনপি অফিসে নেতা-কর্মী, সবাই মিলিয়ে জায়গাটি পরিণত হয় শোক, নীরবতা ও আবেগের এক প্রাঙ্গণে।

মঙ্গলবার সকাল ৬টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। বাংলাদেশের প্রথম এ নারী প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। মঙ্গলবার সকালে তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে নেতাকর্মীরা বাকরুদ্ধ ও স্তব্ধ হয়ে পড়েন যশোর বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

সাত সকালেই ছুটে আসেন যশোর জেলা বিএনপি কার্যালয়ে। কান্না, হাহাকার আর নিস্তব্ধতায় হৃদয়বিদারক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। সকালে জেলা বিএনপি কার্যালয়ে শুরু হয় শোকের কর্মসূচি। দলীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার পাশাপাশি কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। শোকাহত নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষ যার যার অবস্থান থেকে বেগম খালেদা জিয়ার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনায় প্রার্থনা করেন।

দলের ভাইস অধ্যাপক নার্গিস বেগমসহ দলীয় নেতাকর্মীরা কালো ব্যাজ ধারণ করেন। এর আগে জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাড. সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু এবং সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খোকন দলীয় এবং কালো পতাকা উত্তোলন করেন। সেখানে শোক বই রাখা হয়েছে। অধ্যাপক নার্গিস বেগম নিজে শোক বইয়ে স্বাক্ষর করেন। এছাড়া জেলা বিএনপি অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সাধারন মানুষ শোক বইয়ে স্বাক্ষর করেন।

এদিকে জেলা শহরের পাশাপাশি উপজেলার বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা ও গ্রামে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে দোয়া ও বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে। মসজিদে মিলাদ মাহফিল ও দোয়া অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে নেতাকর্মীরা প্রয়াত নেত্রীর রুহের মাগফিরাত কামনা করেন। খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত।

শোক প্রকাশ করে যশোর জেলা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু বলেন, আজ আমরা আমাদের রাজনৈতিক অভিভাবককে হারিয়েছি। তিনি ছিলেন আপোষহীন নেত্রী, যিনি কখনো অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেননি। তাঁর শূন্যতা কোনোভাবেই পূরণ হওয়ার নয়।

এটি দলের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। তিনি আরও বলেন, এই আপোষহীন নেত্রীকে যারা দীর্ঘদিন কষ্ট দিয়েছে, যাকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার করা হয়েছে তাদের বিচার আল¬াহই করবেন। ইতিহাস তাদের কখনোই ক্ষমা করবে না।

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খোকন বলেন, বেগম খালেদা জিয়া শুধু বিএনপির নেত্রী নন, তিনি ছিলেন গণতন্ত্রের প্রতীক। তার নেতৃত্বে দল বহু সংকট ও দমন-পীড়ন মোকাবিলা করেছে। আজ তার মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত।

জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার রবিউল ইসলাম বলেন, আমাদের সবার আশা ছিল বেগম খালেদা জিয়া আবার সুস্থ হয়ে ফিরে আসবেন এবং এ দেশের নেতৃত্ব দেবেন। কিন্তু সেই আশা আর পূরণ হলো না। তার মৃত্যু আমাদের জন্য এক অপূরণীয় বেদনা।

শোক কর্মসূচিতে জেলা বিএনপি ছাড়াও যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দলসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। সবাই প্রয়াত নেত্রীর আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং তার আদর্শে ঐক্যবদ্ধ থেকে আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

Share.
Exit mobile version