মহেশপুর সংবাদদাতা
মহেশপুরের খালিশপুর পশু হাট একটি ঐতিহ্যবাহী হাট। দুই বছর আগে এ হাটের মূল্য ছিলো অর্ধকোটি টাকার উপরে। কিন্তু সিণ্ডিকেটের কবলে পড়ে দু’বছর ইজারা না হওয়ায় হাটের সরকারি মূল্য নেমেছে প্রায় ৩৯ লাখ টাকায়। প্রশাসনের তথ্য মতে তবুও কেউ ইজারা নেননি ওই হাট। তবে পর পর দু’বছর সিণ্ডিকেট করে ইজারা না দেয়ার অভিযোগ রয়েছে প্রশাসনের বিরুদ্ধে।
ওই সিণ্ডিকেটের কবলে পড়ে সরকার হারাচ্ছে লাখ লাখ টাকার রাজস্ব। খাস কালেকশনের নামে সেসব টাকা যাচ্ছে প্রশাসনের অসাধু কর্মকর্তা ও ক্ষমতাসীন সিণ্ডিকেটের পকেটে। তবে খাতা কলমে খাস কালেকশন উল্লেখ থাকলেও ১৪৩১ সনে পশু হাটটি ১২ লাখ টাকায় বিক্রি করা হয়েছিলো। সে বছর এ হাট থেকে সরকারি খাতায় রাজস্ব আদায় দেখানে হয়েছে মাত্র ৫ লাখ ৭২ হাজার ৭০০ টাকা। এ বছর পশু হাটের পাশাপাশি খাস কালেকশনে যোগ হয়েছে খালিশপুর সাধারণ হাটটিও। সিণ্ডিকেটের মাধ্যমে ওই হাট দুটি ২৭ লাখ টাকায় বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভূমি কর্মকর্তার খাস কালেকশনের কথা থাকলেও বর্তমানে ওই হাট দুটি থেকে সরকারি রাজস্ব উত্তোলন করছেন স্থানীয় বিএনপি নেতা আ. রহিম, শাহাদত হোসেন, মাহফুজ আহম্মেদ ও জামায়াত নেতা ফিরোজ আহম্মেদ। এদিকে মহেশপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে আগের বছরের খাস কালেকশনের হিসাব পাওয়া গেলেও এবছরের কোন হিসাব পাওয়া যায়নি।
জানা যায়, বাংলা ১৪৩১ সনের (ইং ২০২৪) খালিশপুর পশু হাটটি সিণ্ডিকেট করে ইজারা বঞ্চিত রাখেন প্রশাসন ও তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল আ.লীগের নেতা-কর্মীরা। খাতা কলমে খাস কালেকশন দেখালেও ওই হাটটি গোপনে ১২ লাখ টাকায় বিক্রি করে দেয়া হয় শহীদ সরকার নামে এক ব্যক্তির কাছে। গোপনে হাট বিক্রির নেপথ্য ছিলেন তৎকালীন উপজেলা চেয়ারম্যান ময়জদ্দীন হামিদ, নির্বাহী কর্মকর্তা নয়ন কুমার রাজবংশী ও ১নং এসবিকে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আরিফান হাসান চৌধুরী নুথান। পশুহাট থেকে গেল বছর সরকারি মূল্য ৫৬ লাখ ৭২ হাজার ৫০০ টাকার বিপরীতে মাত্র মাত্র ৫ লাখ ৭২ হাজার ৭০০ টাকা রাজস্ব দেখানো হয়েছে।
এ বছরও সিণ্ডিকেট করে খালিশপুর পশু হাটের পাশাপাশি সাধারণ হাটটিও ইজারা বঞ্চিত রাখেন প্রশাসন। হাট দুটি ক্রয়ের জন্য সিডিউল কিনলেও সিণ্ডিকেটের বাঁধার মুখে হাট ডাকতে পারেননি একাধিক সিডিউল ক্রেতা। যার ফলে পশু হাটের পাশাপাশি সাধারণ হাটটিও ইজারা বঞ্চিত হয়েছে। তবে গোপনে ওই হাট দুটি ২৭ লাখ টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। যে কারণে হাট দুটি থেকে সরকারি কোন রশিদ ছাড়ায় রাজস্ব আদায় করছেন স্থানীয় বিএনপি ও জামায়াতের নেতারা।
খালিশপুরের শহীদ সরকার বলেন, গত বছর আমি ১২ লাখ টাকায় খালিশপুর সরকারি পশু হাটটি ক্রয় করি। প্রতি হাটে আমি নিম্নে ৩০ হাজার উপরে ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত খাজনা আদায় করেছি। হাট কেনার জন্য উপজেলা চেয়ারম্যান ময়জদ্দীন হামিদ আমাকে ১নং এসবিকে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আরিফান হাসান চৌধুরী নুথানের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। সে মোতাবেক আমি চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলে ১২ লাখ টাকায় হাট কিনি। হাটের ১২ লাখ টাকা আমি চেয়ারম্যানের হাতে দিয়েছিলাম। তিন মাস হাটের খাজনা আদায় করতে পেরেছিলাম। ৫ আগষ্টের পর সরকার পতন হলে স্থানীয় বিএনপির নেতারা আমার কাছ থেকে হাট দখল করে নেন। পরে নুথান চেয়ারম্যান আমাকে সাড়ে ৪ চার লাখ টাকা ফেরত দেন।
খালিশপুরের তৈয়ব আলী জানান, বাংলা ১৪২৯ সনে আমি ডাকের মাধ্যমে পশু হাটটি ইজারা নিয়েছিলাম। প্রতি হাটে ৩০/৪০ হাজার টাকা উত্তোলন করেছি। পরের বছর আমি পুনরায় সিডিউল কিনেছিলাম। কিন্তু আমাকে সিডিউল জমা দিতে দেয়া হয়নি। পরবর্তীতে আমি ১৪ লাখ টাকায় হাটটি নিতে চেয়েছিলাম। তবে প্রশাসন আমাকে না দিয়ে ১২ লাখ টাকা শহীদ সরদারকে দিয়েছিলেন।
ফতেপুরের নুর ইসলাম বলেন, আমি খালিশপুর সাধারণ হাটের জন্য সিডিউল কিনেছিলাম। কিন্তু বিএনপির আ. রহিম ভাই আমাকে সিণ্ডিকেটের কথা বলে সিডিউল জমা দিতে নিষেধ করে আমার কাছ থেকে সিডিউল নিয়ে নেন। পরে আমার সাথে আর কোন যোগাযোগ রাখেননি। সাধারণ হাট থেকে প্রতি হাটে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকার মত খাজনা আদায় হয়। বর্তমান হাট মালিক আ. রহিম, শাহদত হোসেন, মাহফুজ ও ফিরোজ।
মহেশপুর বণিক কল্যাণ সমিতির সহ-সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মান্নান বলেন, আমি সাধারণ হাটের জন্য ডিসিউল কিনেছিলাম। প্রথম ডাকে আমি এক লাখ টাকা ড্র করি কিন্তু সাহাদত ভাই আমাকে পরবর্তীতে ডাক বাড়াতে নিষেধ করেন এবং আমাকে খাজনার একটি অংশ দিতে চান। কিন্তু ৫/৬ হাট ঘুরার পরও তারা আমার সাথে যোগাযোগ করেননি। এমনকি আমার ড্র করা এক লাখ টাকা ফিরে পাইনি।
রাজস্ব আদায়ের দায়িত্বে থাকা বিএনপির নেতা আ. রহিম জানান, হাটটি ইজারা না হওয়ায় প্রশাসনের কাছ থেকে হাট কিনে নেয়া হয়েছে। এ হাটে প্রায় ৩০ জনের শেয়ার আছে। পশু হাটের এক ভাগ শিয়ালমারী হাট মালিকের কাছে বিক্রি করা হয়েছে।
ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা তুষার আহম্মেদ বলেন, জনবল কম থাকায় অন্যদের দিয়ে খাস কালেকশন করা হচ্ছে। তবে আমি এর বেশি কিছু বলতে পারবো না। আরো কিছু জানতে চাইলে নির্বাহী অফিসের রুবেলের সাথে যোগাযোগ করেন।
অফিস সহকারী রুবেল যদিও এ ব্যাপারে এখন কোন উত্তর দিবেন না বলে জানিয়ে দেন।
সদ্য যোগদান করা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খাদিজা আক্তার বলেন, আমি এখানে নতুন যোগদান করেছি। বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।