চৌগাছা পৌর সংবাদদাতা
প্রতিবছর ভাদ্রমাসের শেষ মঙ্গলবার যশোরের চৌগাছায় পীর বলুহ দেওয়ানের ওরস উপলক্ষে মেলা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু এ বছরে মেলার অনুমতি দেয়নি প্রশাসন। প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই অবৈধ কমিটি গঠনের মাধ্যমে মেলার আয়োজন করেছেন স্থানীয় স্বার্থান্বেষী একটি মহল। অনুমতিহীন এ মেলায় অবৈধভাবে চলছে চাঁদা আদায়, জুয়ার আসর। বসেছে গাজার দোকানও! এতে ধ্বংস হচ্ছে এলাকার যুবসমাজ। বাড়ছে সামাজিক অবক্ষয়। এমন মন্তব্য এলাকাবাসীর।
অনুমতি ছাড়াই চারদিন ধরে মেলার নামে চলছে প্রকাশ্য মাদকসেবন ও বেচাকেনা। পাশাপাশি চলছে জুয়ার আসর ও অশ্লীল নৃত্য। তবে উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসন এসব বিষয়ে জেনেও নিরব রয়েছেন বলে অভিযোগ সচেতন নাগরিকদের।
প্রতি বাংলা সনের ভাদ্র মাসের শেষ মঙ্গলবার চৌগাছা উপজেলার নারায়নপুর ইউনিয়নের কপোতাক্ষ নদের তীরবর্তী হাজরাখানা গ্রামে ঐতিহ্যবাহী পীর বলুহ দেওয়ানের ওরশের সময় স্থানীয়রা যশোর জেলা প্রশাসকের অনুমতিক্রমে মেলার আয়োজন করে থাকেন। বিগত বছরগুলোতে ৩ থেকে ৭ দিন ধরে এই মেলা চলতে দেখা গেছে। কিন্তু এ বছরে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো না থাকায় জেলা প্রশাসক মেলার অনুমতি দেয়নি বলে জানা গেছে।
অনুমতি ছাড়াই এলাকার স্বার্থন্বেষী কিছু মানুষ অর্থের লোভে মেলার আয়োজন করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অনুমতি ছাড়াই মেলাকে কেন্দ্র করে মাজারের এক কিলোমিটার আশপাশে বসেছে বিভিন্ন দোকান। তবে মেলায় আসা ভক্তদের দোকানে প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে গাঁজা। রাতে চলছে অশ্লীল নৃত্য। আর এসব দোকান থেকে তোলা হচ্ছে ভাড়ার নামে চাঁদা।
মেলা এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, হাজারো মানুষের ভিড়। দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে চলছে মেলাটির নানা কার্যক্রম। বিভিন্ন জিনিসের পসরা সাজিয়ে বসে আছেন বিক্রেতারা। মাজারটির পূর্ব-দিকে কপোতাক্ষ নদের ধারে বাগানে গাঁজা সেবন ও বিক্রির জমজমাট আসর বসছে। মেলার বিভিন্ন জায়গায় তাবু টাঙিয়ে বসানো হয়েছে গাঁজার দোকান। এছাড়া অনেকে পাটি পেতেও গাঁজা বিক্রি করছেন।
মেলার অনুমতি না থাকায় পুলিশ প্রহরা নেই বললেই চলে। যে কারণে সেখানে প্রকাশ্যে গাঁজাসহ বিভিন্ন মাদকের পসরা সাজিয়েছেন বিক্রেতারা। চলছে গানের আড্ডা ও গাঁজা সেবন। তবে বেশিরভাগ ভক্তদের আস্তানায় অল্প বয়সী কিশোর ও শিক্ষার্থীরা ভিড় করতে দেখা গেছে। এছাড়া নেশাখোররা সেখানে এসে আড্ডা দিচ্ছেন। এদিকে মেলা এলাকায় সার্কাস নামে রাতে অশ্লীল নৃত্য ও জুয়ার আসর তো আছেই।
মেলার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত হাজরাখানা দাখিল মাদ্রাসার সুপার আতিয়ার রহমান বলেন, মেলার কারনে প্রতিষ্ঠানের স্বাভাবিক ক্লাস ব্যাহত হচ্ছে। তা ছাড়া শিক্ষার্থীরা অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়ার শঙ্কা রয়েছে।
মেলা কমিটি সভাপতি মিজানুর রহমান বলেন, ‘অনুমতির ব্যাপারে কেউ জানতে চাইলে ওসি সাহেব বলেছেন, তার সাথে কথা বলতে’। মেলায় মাদক বিক্রি হলে তা প্রতিহত করা হবে।
চৌগাছা থানার ওসি ইকবাল বাহার চৌধুরী বলেন, মেলার অনুমতির কোনো অনুলিপি আমি পাইনি। তবে মেলার বিষয়টি এসপি স্যারকে অবহিত করেছি। মাদক বিক্রি ও অশ্লীলতার ব্যাপারে তিনি বলেন, অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
চৌগাছা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) গুঞ্জন বিশ্বাস বলেন, মেলার অনুমতির বিষয়টি আমার জানা নেই। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবো এবং অনুমতি না থাকলে পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে তিনি জানান।