# সম্পদের মালিক পক্ষকে মিথ্যা মামলায় হয়রানি
বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোরের চৌগাছা উপজেলার কাঁদবিলা গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের সম্পদ দখলের উদ্দেশ্যে হামলা করতে গিয়ে প্রতিরোধের মুখে আহত হয়েছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। অথচ এই ঘটনাকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করে হিন্দুদের সম্পদের উত্তরাধিকারীসহ ও স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলায় আসামি করে গ্রেফতার ও হয়রানি করা হচ্ছে। প্রকৃত ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে ফায়দা লুটছে বিএনপির আরেক অংশের কতিপয় নেতাকর্মী। এতে বিএনপির দলীয় ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ন হচ্ছে। আজ বুধবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেছেন কাঁদবিলা গ্রামের বাসিন্দা ও স্থানীয় নারায়ণপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি সেলিম আজাদ সালাম। এ সময় ভুক্তভোগী সনাতন সম্প্রদায়ের লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত বক্তব্যে বিএনপি নেতা সেলিম আজাদ সালাম বলেন, চৌগাছার কাঁদবিলা গ্রামের ললিত মোহন রায় মৈত্রের চার পুত্র সন্তান। তারা হলেন, বিপ্র দাস রায় মৈত্র, সুরদাস রায় মৈত্র, তুলসিদাস রায় মৈত্র। তারাই ললিত মোহন রায়ের সম্পদের মূল উত্তরাধিকারী। তাদের সম্পত্তি তুলসি দাস রায় মৈত্রের পুত্র সুশান্ত রায় মৈত্র দীর্ঘদিন যাবৎ দেখভাল করে আসছেন। বিপ্রদাস রায় মৈত্রের পুত্র অ্যাড. জ্যোতির্ময় রায় মৈত্র সকল সম্পত্তির সুবিধা এককভাবে ভোগ করার উদ্দেশ্যে অন্যান্য শরিকদের না জানিয়ে কাঁদবিলা গ্রামের নিজাম উদ্দিনের ছেলে আবুল কাশেমের কাছে বর্গা দেন। পরবর্তীতে সম্পত্তির লোভে ২০০৩ সালে মো. কাশেম তার অন্যান্য ভাই ও তার সন্ত্রাসী গ্রুপ নিয়ে বিপ্রদাস রায় মৈত্রের পুত্র অ্যাড. জ্যেতির্ময় রায় মৈত্রকে স্থানীয় ঝাউতলা বাজারে বেধড়ক মারপিট করে সকল জায়গা জোরপূর্বক দখল করে নেন। সাত বছর ওই সম্পদ তার দখলে ছিল। ২০১০ সালের মাঝামঝি সময় তুলসি দাস রায় মৈত্রের পুত্র সুশান্ত রায় মৈত্র তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি নিজ দখলে নেয়ার জন্য বিভিন্নভাবে চেষ্টা করলে মো. কাশেম ও তার সন্ত্রাসী গ্রুপ সুশান্ত রায় মৈত্রের পুত্র অপূর্ব রায় মৈত্রকে স্থানীয় ঝাউতলা বাজারে বেধড়ক মারপিট করে। ২০১১ সালের শুরুর দিকে স্থানীয় লোকজন কাশেম গ্রুপের দখলবাজির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে জমি উদ্ধার করে সুশান্ত রায় মৈত্রকে ফিরিয়ে দেয়। ওই জায়গা জমি উদ্ধার করতে গিয়ে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে কাশেম গ্রুপের আবদুর রহিম নামে এক ব্যক্তি মারা যান। ২০১৩ সালে কাশেম গ্রুপ পুনরায় সুশান্ত রায় মৈত্রের জমি দখল করতে গিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এসময় কাশেম গ্রুপের মমিন নামে একজন নিহত হন। পরবর্তীতে স্থানীয় নেতাকর্মী ও প্রশাসনের মধ্যস্থতায় দুই পক্ষের সকল মামলা আইনের মাধ্যমে নিষ্পত্তি ও নিহত পরিবারের মধ্যে ক্ষতিপূরণ দেয়ার মাধ্যমে মীমাংসা করা হয়। সুশান্ত রায় মৈত্রের মৃত্যুর পর তার ছেলে অপূর্ব রায় মৈত্র সকল সম্পত্তি দেখভাল করছিলেন।
তিনি আরও বলেন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আবুল কাশেমসহ তার সন্ত্রাসী গ্রুপ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী কৃষকদলের কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শফিকের ইন্ধনে পুনরায় সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর দফায় দফায় আক্রমণ চালায় কাশেম গ্রুপ। তারা বিএনপির বিপক্ষ গ্রুপের লোকজনকেও নানাভাবে হুমকি-ধামকি দিতে থাকে। গত ২৪ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কাশেমের ছোট ভাই আবুল হোসেন তার তিন ছেলেসহ সন্ত্রাসীদের সাথে নিয়ে অপূর্ব রায় মৈত্র ও তার জমিতে কর্মরত কয়েজন শ্রমিকের উপর সশস্ত্র হামলা চালায়। এ সময় হামলার শিকার লোকজন প্রতিরোধ করেন। এতে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। উভয় পক্ষের কয়েকজন আহত হন।
পরবর্তীতে কাশেমের ছোটভাই আবুল হোসেন বাদি হয়ে অপূর্ব রায় মৈত্রকে প্রধান আসামি করে ১৩জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ১০ থেকে ১৫জনের নামে চৌগাছা থানায় মামলা দায়ের করেন। এই ঘটনায় কয়েকটি পত্রিকায় ভুল তথ্য দিয়ে রিপোর্ট করা হয়েছে। মামলা দায়ের করার পর কাশেম গ্রুপের বিপক্ষের লোকজন ভয়ে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এই সুযোগে কাশেম গ্রুপের লোকজন মাঠ থেকে তিনটি সেলাই মেশিন, গ্রামের কয়েকটি বাড়ির মালামাল লুটপাট ও বাজারে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাংচুর করেছে। সন্ত্রাসীরা অস্ত্রের মহড়া ও প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। ঘটনার সুষ্ঠ বিচার ও গ্রামের সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানাচ্ছি। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অপূর্ব রায় মৈত্রের স্বজন কৃষ্ণা রায়মৈত্র, তৃপ্তি রায় মৈত্র, অনামিকা রায় মৈত্র, কাজল রায় মৈত্র প্রমুখ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মো. কাশেম বলেন, ‘সালাম গ্রুপ যেসব অভিযোগ করেছে, সব মিথ্যা বানোয়াট। উল্টো তারা আমাদের উপর হামলা করে;বাঁচার জন্য আমাদের উপর দায় চাপাচ্ছে। আমরা মামলা করেছি, তদন্ত করলে মূল ঘটনা উঠে আসবে। ’