# ‘আ.লীগ নেতার কালো টাকায় ভোট ক্রয়
# তালিকায় ১১ পরিবারের ৭০ ভোটার
বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোরের চৌগাছা উপজেলায় গণতান্ত্রিক পদ্ধতির নামে ‘আওয়ামী লীগ নেতার কালো টাকা ও অস্বচ্ছ ভোটার তালিকায়’ বিএনপির কমিটি গঠনের অভিযোগ করেছেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. জহুরুল ইসলাম। তিনি অভিযোগ করেছেন, জেলা বিএনপির কতিপয় নেতার হস্তক্ষেপে কারচুপির মাধ্যমে গোটা নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। এসব বিষয় তুলে ধরে বিএনপির কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বরাবর লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন চৌগাছা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. জহুরুল ইসলাম।
বিএনপি সংশ্লিষ্ট স্থানীয় সূত্র জানায়, চৌগাছা উপজেলা বিএনপি দুটি ধারায় বিভক্ত। একটির নেতৃত্বে এমএ সালাম, অপরটি নেতৃত্ব দেন জহুরুল ইসলাম। নির্বাচনে তাদের দু’জনের নেতৃত্বে দুটি প্যানেল অংশ নেয়। গত ৭ সেপ্টেম্বর এই নির্বাচনে চৌগাছা উপজেলা বিএনপির তিন পদে নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতি পদে এমএ সালাম, সাধারণ সম্পাদক পদে মাহমুদুল হাসান এবং সাংগঠনিক সম্পাদক পদে আলীবুদ্দিন খান ও মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক নির্বাচিত হন।
নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ:
নির্বাচনের পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত অভিযোগে নানা অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ এনেছেন চৌগাছা উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সভাপতি, আহ্বায়ক জহুরুল ইসলাম। অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেছেন, বিএনপি থেকে আমাকে বাদ দেয়ার জন্য গভীর ষড়যন্ত্র করে জেলা বিএনপি কয়েকটি ইউনিয়নে নিজেরাই কমিটি করেছে। উপজেলা বিএনপির অনুমোদন না নিয়ে ওইসব কমিটিতে একই পরিবারের ৬ থেকে সর্বোচ্চ ১২জন পর্যন্ত ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। নির্বাচন প্রক্রিয়ার শুরু থেকেই অবৈধ ভোটারদের নিয়ে গঠনতন্ত্র পরিপন্থী কার্যকলাপ ও পক্ষপাতমূলক আচরণ শুরু করা হয়।
এজন্য প্রকৃত বিএনপির নেতারা নির্বাচনে সঠিক নেতা নির্বাচিত হতে পারেনি। ইউনিয়ন বিএনপির কমিটি গঠন ও অনুমোদনের দায়িত্ব থানা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের। কিন্তু জেলা বিএনপি নিজেরাই কমিটি গঠন করে অনুমোদন দিয়ে ভোটার তালিকা তৈরি করেছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। তিনি আরও অভিযোগ করেন, জেলা বিএনপি পছন্দমত পৌরসভা ইউনিট থেকে লোক নিয়ে ইউনিয়ন কমিটির ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে সাংগঠনিক সম্পাদক প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ নেতা জসিম উদ্দিনের কাছ থেকে ৩৮ লাখ টাকা, আওয়ামী লীগের নেতা কাউন্সিলর উজ্জ্বল হোসেনসহ নেতাদের কাছ থেকে বড় অংকের টাকা দিয়ে ভোট ক্রয় করার সুযোগ করে দিয়েছেন। তাদের মনোনীত প্রার্থীরা আওয়ামী লীগ নেতাদের টাকা দিয়ে মসজিদে বসে শপথ করিয়ে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা দিয়ে প্রতিটি ভোট ক্রয় করেছেন। ভোটের পরে টাকা নেয়াসহ বিষয়গুলি প্রকাশিত হয়েছে। চিহ্নিত ভোটগুলোও বাতিলযোগ্য। ফুলসারা ইউনিয়নের ভোট ব্যালটে ইউনিয়নের নাম লেখা, ব্যালটের মধ্যে টাকা, কয়েন, ছবিসহ বিভিন্নভাবে চিহ্নিত করেছে। যশোর শহরে অবস্থানরত ভোটারদের প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে ভোট দিতে বাধ্য করেছে।
অভিযোগে তিনি আরও উল্লেখ করেন, জগদীশপুর ইউনিয়ন ও সুখপুকুরিয়া ইউনিয়নে কোন পূর্ণাঙ্গ কমিটি নেই। সুখপুকুরিয়া ইউনিয়ন ৯টি ওয়ার্ড কমিটি গঠন করেছে জেলা বিএনপির টিম। ওই কমিটিতে আওয়ামী লীগ ও জামায়াতের লোককে বিএনপির সদস্য করা হয়।
১১ পরিবারের ৭০ ভোটার:
অভিযোগপত্রের সঙ্গে প্রমাণপত্র হিসেবে উপজেলা বিএনপির নির্বাচনের কাউন্সিলর (ভোটার) তালিকা সংযুক্ত করা হয়েছে। ওই তালিকায় দেখা গেছে, চৌগাছা সদর, হাকিমপুর, জগদীশপুর, নারায়ণপুর, সুখপুকুরিয়া, স্বরূপদাহ ও ধুলিয়ানি ইউনিয়নের ১১টি পরিবার থেকে ৭০জনকে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে চৌগাছা ইউনিয়নে উপজেলা বিএনপি নেতা এমএ সালামসহ তার ভাই, নিকট আত্মীয় ৬ জনকে ভোটার করা হয়েছে। সদর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আবদুর রহিমসহ ভাই, বোন, চাচা, চাচাতো ভাইসহ ৫ জন ও সাংগঠনিক সম্পাদক জাহিদুল ইসলামসহ ভাই ও চাচাতো ভাইসহ ৪ জনকে ভোটার করা হয়েছে। এছাড়াও জামায়াত নেতাকে ভোটার করা হয়েছে। হাকিমপুর ইউনিয়নে বিএনপি নেতা মাসুদুল হাসান ও তার মামাতো, চাচাতো ভাইসহ ৪ জনকে ভোটার করা হয়েছে। জগদীশপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আলীবুদ্দিন খান ও তার পিতা, ভাই, বোন, স্ত্রী, ভগ্নিপতি, বেয়াই, চাচাসহ নিকটাত্মীয় ১১ জনকে ভোটার করা হয়েছে। একই ইউনিয়নে আবু বক্কর সিদ্দিক নামে এক জামায়াত কর্মীকে ভোটার করা হয়েছে।
নারায়াণপুর ইউনিয়নের সভাপতি তরিকুল ইসলাম ডাবলু ও তার স্ত্রী, ভাই, চাচা শ^শুর, জামায়াত ও আ.লীগ পরিবারে ৬ জনকে ভোটার করা হয়েছে। একই ইউনিয়নে যুবদল নেতা সাইফুল ইসলাম ও তার পিতা, ভাই ও স্ত্রীকে ভোটার করা হয়েছে। সুখপুকুরিয়া ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শরিফুল ইসলাম ও তার চাচা শ^শুর ও শ্যালকসহ নিকটাত্মীয় ৭ জনকে ভোটার করা হয়েছে। একই ইউনিয়নের রামকৃষ্ণপুর গ্রামের নজরুল ইসলাম ও রাজ্জাক মল্লিক নামে দুই ভাইকে এবং বল্লভপুর গ্রামের সেলিম রেজা ও তার পিতা ইনতাজ আলী, আত্মীয় মনিরুজ্জামানকে ভোটার করা হয়েছে। স্বরূপদাহ ইউনিয়নের খড়িঞ্চা গ্রামের মো. রায়হান ও তার স্ত্রী, শ^শুর ও ভায়রাভাইসহ ৪ জনকে ভোটর করা হয়েছে। একই ইউনিয়নের বাজে খড়িঞ্চি গ্রামের শফিকুল ইসলাম ও তার স্ত্রী, বেয়াই, ভাইপোসহ ৫ জনকে ভোটার করা হয়েছে। ধুলিয়ানি ইউনিয়নের স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা মেহেদী হাসান ও তার চাচা জহুরুল ইসলাম, ছাত্রদল নেতা ইমন হাসান রকি ও তার চাচা, মা, মামাতো ভাইসহ ৬ জনকে ভোটার করা হয়েছে।
যা বলছেন নেতারা:
নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অনিয়ম ও কারচুপি প্রসঙ্গে চৌগাছা উপজেলা বিএনপির নবনির্বাচিত সভাপতি এমএ সালাম বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন দলের সভাপতি ছিলাম, দুর্দিনে নেতাকর্মীদের পাশে ছিলাম। এ জন্যই তারা আমাকে নির্বাচিত করেছেন। আমি অপকর্ম করলে নেতাকর্মীরা আমাকে ভোট দিতো না। দলীয় ভোট কেনাবেচা হয় না। ভোটাররা সুষ্ঠুভাবে ভোট দিয়ে কমিটি নির্বাচন করেছেন।’
এমএ সালাম দাবি করেন, ‘তুমি (জহুরুল) তো আমার কমিটিতে সেক্রেটারি ছিলে, তুমি (জহুরুল) আমার পাঁচ ভোট খেয়ে তিন ভোটে হারিয়ে দিলে; আমি তো কারো কাছে অভিযোগ করিনি। তুমি তো (জহুরুল) ৫০ ভোটে হেরেছো।’
অস্বচ্ছ নির্বাচন প্রক্রিয়ায় ও কারচুপি এবং জেলা কমিটির মাধ্যমে ইউনিয়ন কমিটি গঠন প্রসঙ্গে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ও চৌগাছা উপজেলা বিএনপির প্রধান নির্বাচন কমিশনার অ্যাড. সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু বলেন, যখন কমিটি গঠন করা হয় তখন সবাই মেনে নিয়েছে। এখন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ ও ফলাফলের পর এসব অভিযোগ তোলা হচ্ছে। এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন। নির্বাচনে কোনো ধররের অনিয়ম বা কারচুপি হয়নি।