♦যশোর পুলিশের সাড়াশি অভিযানে আটক ২৫৩, ১০৩ মামলা
বাংলার ভোর প্রতিবেদক
সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, মাদক, কিশোর গ্যাং, চোরকারবারি ও এদের গডফাদারদের বিরুদ্ধে সাড়াশি অভিযান পরিচালনা করছে যশোর জেলা পুলিশ। চলতি ফেব্রুয়ারি মাসের ১৭দিনে এই অভিযানে যশোর পৌরসভার কাউন্সিলর জাহিদ হোসেন মিলন ওরফে টাক মিলন, বহিস্কৃত যুবলীগ নেতা মেহবুব রহমান ম্যানসেলসহ অন্তত ২৫৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে মাদক ও অস্ত্র। এসব ঘটনায় ১০৩টি মামলা দায়ের হয়েছে। পুলিশের চলমান অভিযানে স্বস্তি প্রকাশ করেছে সাধারণ মানুষ। পুলিশের অভিযানে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জড়িতরা ও এদের মদদদাতারা গ্রেফতার এড়াতে গা ঢাকা দিয়েছেন। অবশ্য আওয়ামী লীগের একাংশের নেতারা পুলিশের অভিযান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। পুলিশের অভিযানকে স্বাগত জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন রাইটস যশোর।
এমন পরিস্থিতিতে আজ (রোববার) নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় সন্ত্রাস দমনে পুলিশের দৃঢ় অবস্থান তুলে ধরেন পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার। তিনি বলেন, আমাদের ইন্টেলিজেন্সের ভিত্তিতেই আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি। সেই অভিযান চলমান আছে। যশোরের যারা চিহ্নিত শীর্ষ সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, মাদকাসক্ত, মাদকের গডফাদার ও আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতা তাদের বিরুদ্ধে পুলিশের সাড়াশি অভিযান চলছে। কোন জনপ্রতিনিধি কিংবা কোন শ্রেণি পেশার মানুষের বিরুদ্ধে এই অভিযান নয়। জনপ্রতিনিধিরা সম্মানিত ব্যক্তি। আমরা অপরাধীকে অপরাধী হিসেবেই দেখি। যে ফৌজদারি অপরাধের সঙ্গে জড়িত, যে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত, যে চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত, যে মাদকের সঙ্গে জড়িত, যে চোরকারবারি ও জনশৃংখলা বিঘ্নে অবদান রাখেন, তার বিরুদ্ধে আমাদের সুষ্পষ্ট অবস্থান। আমরা মনে করি পুলিশের চলমান অভিযানে চিহ্নিত সন্ত্রাসী জাহিদ হোসেন মিলন ওরফে টাক মিলন ও ম্যানসেলসহ অনেককেই গ্রেফতার করেছি। অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার করেছি।
সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে পুলিশ সুপার বলেন, আপনাদের কাছে কোন চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড সম্পর্কে তথ্য থাকলে আমাদের দিবেন। আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিবো। আমাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব আমরা আইনানুগভাবে, সততা ও সাহসিকতার সাথে পালন করবো। অপরাধীকে অপরাধী হিসেবে বিবেচনা করবো, তার অন্য যে পরিচয় থাকুক বিবেচ্য নয়। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবো।
সংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রলয় কুমার জোয়ারদার বলেন, আমাদের অভিযান কোন জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে নয়। আমরা শান্তি ও স্বস্তির যশোর নিশ্চিত করতে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছি। জেলার অপরাধের কেন্দ্রবিন্দু সদর। এজন্য সদরে অভিযানে জোর দেয়া হয়েছে। এই উপজেলার আইনশৃংখলা নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে, বাকি উপজেলায়ও সহজে নিয়ন্ত্রণে আসবে। তাই যশোর সদর উপজেলার পাশাপাশি অন্য উপজেলায়ও অভিযান চলমান রয়েছে। সব উপজেলায় অভিযান জোরদার করা হবে।
সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, সকল প্রকার অসংগতি, অন্যায়, মাদক কারবার, অস্ত্র, চাকুর কালচার বন্ধে আমরা প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছি। অপরাধী যেই হোক না কেন, তার অন্য যে পরিচয়ই থাকুক না কেন, সে আইনের চোখে অপরাধী হিসেবে গণ্য হবে। অপরাধীকে কঠোর হস্তে দমন করা হবে।
মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন প্রেসক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন, সাধারণ সম্পাদক এসএম তৌহিদুর রহমান, যশোর সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মনোতোষ বসু, সাধারণ সম্পাদক এইচ আর তুহিন, সাংবাদিক সাজেদ রহমান, শিকদার খালিদ, মনিরুল ইসলাম, ইন্দ্রজিৎ রায় প্রমুখ।
সাংবাদিকরা বলেন, সন্ত্রাস দমনে পুলিশের সাড়াশি অভিযানকে স্বাগত জানিয়েছে সাধারণ মানুষ। জেলার আইনশৃংখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে পুলিশের আরও কঠোর হওয়া দরকার। মানুষ শান্তি ও স্বস্তিতে বাস করতে চায়। পুলিশের ইতিবাচক কাজে সাংবাদিক সমাজ পাশে থাকবে বলেও সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ উল্লেখ করেন।
মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোসাইন, ডিবি ওসি রুপণ কুমার সরকার প্রমুখ।
এদিকে, যশোরে পুলিশের চলমান অভিযানকে স্বাগত জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন রাইটস যশোর। গতকাল সংস্থাটির এক বিবৃতিতে সাধারণ সম্পাদক বিনয় কৃষ্ণ মল্লিক বলেন, যশোর পুলিশ প্রশাসনের এই অভিযান যাতে শেষ পর্যন্ত একটি শান্তি ও স্বস্তিময় সমাজ বিনির্মাণে পর্যবসিত হয়, সেই ব্যাপারে পুলিশ সুপারসহ জেলা পুলিশের অন্যান্য পদস্থ কর্মকর্তারা আন্তরিকতা অব্যাহত রাখবেন। একই সাথে চলমান অভিযানে প্রকৃত অপরাধীদের সকলকেই আইনের আওতায় আনাও জরুরি মনে করে সংস্থা। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক পক্ষপাতহীন ভূমিকা প্রত্যাশা করে মানুষ। আইনের দৃষ্টিতে সকলেই সমান-সংবিধানের এই মহান বাণীকে কাজে ব্যবহার করে, কে নেতা , কে জনপ্রতিনিধি আর কে সাধারণ অপরাধী, তার বিচার না করে, অপরাধী মাত্রই সবাইকে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। জেলা পুলিশের সাড়াশি অভিযানকে যশোরবাসী সাধুবাদ জানিয়েছে উল্লেখ করা হয়েছে বিবৃতিতে।