হাসান আদিত্য
‘আমার বড় মেয়ে শাম্মী খুব মেধাবী ছিল। ওর স্বপ্ন ছিল বিসিএস ক্যাডার হয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হওয়ার। কিন্তু সব স্বপ্নই ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেছে। সবসময় উচ্ছ্বাস-আনন্দে মেতে থাকা মেয়েটা কেন এমন করলো ? কান্নাজড়িত কন্ঠে এভাবে কথাগুলো বলছিলেন জাহিদুর রহমান।
রোববার রাজধানীর পুরান ঢাকার কাঠেরপুলের তনুগঞ্জ লেনের একটি মেস থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাবরিনা রহমান শাম্মীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শাম্মীর বাড়ি যশোরের চৌগাছা উপজেলার নারায়ণপুর গ্রামে। তার মৃত্যুতে শোকে স্তব্ধ স্বজনেরা। মৃত্যুর সংবাদে শোকের ছায়া নেমে এসেছে এলাকায়।
শাম্মীর বাবা জাহিদুর রহমান যশোরের কেশবপুর উপজেলার একটি ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘ছোট বেলা থেকেই মেধাবি ছিলো শাম্মী। তার স্বপ্ন ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। নিজে না পড়তে পারলেও সেই স্বপ্নটা দেখতে থাকেন ছোট বোনকে ঘিরে। তাই কয়েক মাস আগে ছোট বোনকে ঢাকার ফার্মগেট এলাকার একটি কোচিং সেন্টারে নিয়ে যায়। তার পছন্দের কোচিং সেন্টারে ভর্তি করে ও পাশে একটি মেসে রেখে আসে।
শনিবার ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা। সেখানে অংশ নেয় তার ছোট বোন। এরপর তারা দুই বোন ঘোরাঘুরি করে ছোটবোনের বাসাতে রেখে আসে। এরপর সন্ধ্যায় শাম্মীর মেসে ফেরে। তখন তার সঙ্গে শেষ কথা হয়। সে আমাকে কিছু টাকা দিতে বলে; আামি তার চাহিদা অনুযায়ী কিছু টাকাও পাঠায়। শেষ কথা বলার সময়ও শাম্মীর কথাবার্তার ভিতর কোন পরিবর্তন লক্ষ্য করেনি। রোববার সকালে আমার এক ভাই আমাকে জানালো শাম্মি আর নেই।
কান্না জড়িত কন্ঠে তিনি বলেন, ও স্বপ্ন দেখতো বিসিএস ক্যাডার হবে। তার সেই স্বপ্ন আজ মাটিতে মিশে গেলো। বাবা হলেও বন্ধুর মতো মিশতাম দুজনে। হঠাৎ কি হলো তার, যে আত্মহত্যার পথ বেঁচে নিতো হলো? গেল বার বাড়িতে এসে বলেছিলো এই সপ্তাহে আবার বাড়ি ফেরবে, বাড়ি সে ফিরলো; তবে লাশ হয়ে।’
২০২২ সালে শাম্মী ঢাকার কাঠেরপুলের তনুগঞ্জ লেনের একটি ছাত্রী মেসে উঠেন। তিনি ওই মেসের একটি কক্ষে একাই থাকতেন। রোববার ভোর সাড়ে চারটার দিকে স্থানীয়দের খবরে ঘটনাস্থলে গিয়ে তাঁর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে সূত্রাপুর থানার পুলিশ। রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে ময়নাতদন্ত শেষে রাতে চৌগাছায় পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে।
শাম্মীর গ্রামের কয়েকজন জানান, ‘শাম্মীরা দুই বোন। শাম্মীর বয়স যখন সাত তখন তার মা শাম্মী ও তার চার বছরের আরেক ছোট বোনকে রেখে অন্যত্র বিয়ে করে। এর কিছুদিন পর তার মা দ্বিতীয় স্বামীর সঙ্গে পারিবারিক কলহে সেখানে আত্মহত্যা করে। ছোট বেলা থেকে মা হারানো বলেই অনেক আদরের ছিল শাম্মী। ছোট বেলা থেকেও মেধাবি ছিলেন শাম্মী। স্থানীয় দুটি নামকরা স্কুল ও কলেজ থেকে সাফল্যের সঙ্গে পাস করে চান্স পান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। ভর্তি হয়ে সেখানেই একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি বিসিএস পরীক্ষারও প্রস্তুতি নিচ্ছিল। চলতি বছরের প্রথম সপ্তাহের দিকে কয়েকদিনের জন্য গ্রামেও এসেছিলো শাম্মী। তখন সে বলে ছিল এ মাসের শেষের দিকে আবার বাড়িতে আসবেন।
স্থানীয় কয়েকজন জানান, ‘বুয়েটের এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে শাম্মির প্রেমজ সম্পর্ক ছিল। প্রেমের অবনতি হওয়াতে আত্মহত্যা করেছে বলে শুনেছি।
শাম্মীর প্রতিবেশি রনি মৃধা বলেন, ‘ছোট বেলা থেকেই শাম্মি মেধাবি ছিল। এলাকায় তাকে দিয়েই আমরা উদাহরণ দিতাম। তার এই অকাল মৃত্যুতে এলাকায় শোকে ছায়া নেমে এসেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. তাজাম্মুল হক গণমাধ্যমকে জানান, মৃত্যুর খবর পেয়ে আমরা মিডফোর্ড হাসপাতালে যাই। প্রাথমিকভাবে আমরা ধারণা করছি প্রেমঘটিত কারণে মেয়েটি আত্মহত্যা করেছে। কারণ পুলিশ জানিয়েছে, ফাঁস দেয়ার সময় প্রেমিককে কলে রেখে আত্মহত্যা করেছে এই শিক্ষার্থী। পুলিশ ইতোমধ্যে মোবাইল ফোন জব্দ করেছে।’