বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোর জেলা প্রশাসক গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন ছিল নন্দিত উদ্যোগ। সেই উদ্যোগকে বিতর্কিত করেছে টিকিটের নামে জুয়া (লটারি)। খেলা দেখার প্রবেশ মূল্য নামে ছাড়া লটারির টিকিট বিক্রি করা হয়েছে গোটা জেলায়। খোদ জেলা প্রশাসকের নাম ব্যবহার করে গ্রাম-গঞ্জের অলিগলিতে মাইকিং করে টিকিট বিক্রির ঘটনায় ক্ষুব্ধ যশোরবাসী। দামি পুরস্কারের লোভ দেখি বিক্রি করা টিকেট কিনে নিম্ন আয়ের মানুষ প্রতারিত হয়েছে। যা এই নন্দিত উদ্যোগে কলঙ্কের দাগ লেপে দিয়েছে ‘বিতর্কিত জুয়ার লটারি’। বিষয়টি ভাল ভাবে নেয়নি যশোরের রাজনৈতিক দলগুলোও। নেতারা বলছেন, নন্দিত উদ্যোগটির সুনাম ভেস্তে গেছে বিতর্কিত জুয়ারির লটারিতে। ভবিষ্যতে এ ধরনের কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নে দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান তাদের।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত ৯ নভেম্বর যশোর শামস উল হুদা স্টেডিয়ামে ৮ উপজেলার ৮টি টিম নিয়ে জেলা প্রশাসন ফুটবল টুর্নামেন্টের উদ্বোধন করেন সদ্য বিদায়ী জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম। বৃহস্পতিবার বিকেলে এই টুর্নামেন্টের ফাইনালের মধ্য দিয়ে পর্দা নামে প্রতিযোগিতার। উদ্বোধনের সময় সদ্য বিদায়ী জেলা প্রশাসক জানিয়েছিলেন, গত ১৬ বছর দেশের যুব সমাজকে বিপথগামী করতে পরিকল্পিতভাবে দেশীয় সব খেলাধুলাকে ধ্বংস করা হয়েছে। ৩৬ জুলাই বিপ্লবের পর নতুন করে দেশের ক্রীড়াঙ্গনকে সাজাতে ও খেলাধুলা মাঠে ফেরানোর মাধ্যমে যুব সমাজকে মাঠমুখি করতে এই আয়োজন। দীর্ঘ বছর পর জেলা প্রশাসনের এই আয়োজন ছিলো নান্দনিক। তবে নন্দিত উদ্যোগে কলঙ্কের দাগ লেপে দিয়েছে টিকিটের নামে জুয়া (লটারি)। প্রতিদিন খেলা শেষে হয়েছে র্যাফেল ড্র নামে লটারি নামক জুয়া। শুধু স্টেডিয়াম প্রাঙ্গণ নয়, এই টিকিট মাইক বাজিয়ে বিক্রি করা হয়েছে জেলার ৮ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে। আর পুরস্কারের মোহে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে মানুষ।
একাধিক সাবেক ফুটবলার ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, লটারির প্রতি মোহগ্রস্ত সাধারণ মানুষ তাদের আয়ের একটি বড় অংশ হারিয়ে ফেলছে। জেলা প্রশাসন আয়োজক থাকলেও টিকিট নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে রাজনৈতিক কিছু ব্যক্তিও পরোক্ষভাবে জড়িত। সে কারণে যশোরের সুধী সমাজের অনেকেই এ নিয়ে সমালোচনামুখর হলেও প্রকাশ্যে কিছু বলছেন না।
জেলা জামায়াতে ইসলামীর প্রচার সম্পাদক অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন বিশ্বাস বলেন, ‘আমরা সবসময় লটারি জুয়ার বিরুদ্ধে।
শহরছাড়া বিভিন্ন জায়গায় ফুটবল খেলার মাঠে প্রবেশের নামে লটারি বাণিজ্য এটা ঘৃণিত। নানা সমালোচনাও হচ্ছে; কিন্তু এটা যে স্বয়ং জেলা প্রশাসন জড়িত; সেটা জানা ছিলো না। নতুন ডিসি এসেছে; তার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আমরা বসবো।’
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খোকন বলেন, ‘জেলা প্রশাসক টুর্নামেন্ট নান্দনিক আয়োজন। তবে এটার সঙ্গে লটারি বিষয়টি ঢুকানোতে সমালোচনা হচ্ছে; এটা সঠিক। বিগত ডিসি এটার অনুমতি দিয়েছে। এটা না করেও আয়োজন করা যেত। টুর্নামেন্টটি নিয়েও স্বচ্ছতা থাকা দরকার ছিলো।’
জেলা প্রশাসন আয়োজক থাকলেও পুরো টুর্নামেন্টটি সমন্বয়ন করেছেন জেলা বিএনপির সাবেক ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক, সাবেক ফুটবলার ও টুর্নামেন্ট কমিটির সদস্য সচিব মাহতাব নাসির পলাশ। তিনি বলেন, ‘আপনারা যেটি লটারি বলছেন ; সেটা লটারি না। স্টেডিয়ামে দর্শকমুখি করতে ও দর্শকদের আকৃষ্ট করতে জেলা প্রশাসন এটির আয়োজন করেছে।
সমালোচনার বিষয়টি প্রশ্ন করাতে তিনি জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। বর্তমান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশেক হাসানের মন্তব্য জানতে কয়েকবার তার দাপ্তরিক ফোনে কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সুজন সরকার বলেন, টুর্নামেন্টটি আয়োজন করার পূর্ব প্রস্তুতি সভায় উপস্থিত নেতৃবৃন্দদের সঙ্গে আলোচনা করেই লটারির বিষয়টি আনা হয়। দর্শকদের টানতে ও উৎসাহ উদ্দিপনা যাতে কাজ করে; সেই কারণেই এই উদ্যোগ। এটা সমালোচনার কিছু না।’
