ভি পি ইলিয়াস
গরমের শুরুতেই হাত পাখা তৈরির কাজে ব্যস্ত হয়েছেন যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার শিওড়দাহ গ্রামের মধ্যপাড়ার জিন্নাহ, ফারুক, রুস্তম ও মিলনের পরিবারের সদস্যরা। এলাকার মানুষ মধ্যপাড়াকে ‘হাতপাখার গ্রাম’ হিসেবে চিনে থাকেন এলাকাবাসী।
এখান থেকেই ঢাকা, যশোর, সাতক্ষীরা অঞ্চলে তৈরি তালপাতার হাতপাখা সরবরাহ হয়ে থাকে। ফরিদপুর জেলা থেকে তালের পাতা কিনে নিয়ে আসতে হয়। পাঁচজনের হাতের ছোঁয়ায় তৈরি হওয়া হাতপাখাটি মানুষের হাতে পৌঁছায়। প্রতিটি তালের হাতপাখা ২৫ থেকে ২৮ টাকা দরে পাইকারিতে বিক্রি করে থাকেন। যা শহরের মানুষ ৫০ থেকে ৯০ টাকা পর্যন্ত দরে কিনে থাকেন।
যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার নির্বাসখোলা ইউনিয়নের শিওড়দাহ গ্রামের (মধ্যপাড়া) ‘হাতপাখার গ্রাম’ এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে তথ্যগুলো পাওয়া যায়।
নিজের বাড়ির উঠানে তালপাখা তৈরির কাজে ব্যস্ত আঁখি আক্তার (৩২) জানান, আমার স্বামী রুস্তম আলী তালপাতার পাখা ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত। তিনি বিভিন্ন স্থান থেকে ১০ টাকা দরে প্রতিটি তালপাতা কিনে নিয়ে আসেন। আমরা বাড়ির সদস্যরা সেটাকে হাতপাখা হিসেবে তৈরি করে বাজারে বিক্রি করি। কথা হয় রুস্তম আলীর সাথে। তিনি জানান, প্রতি ১০০ পাখা তৈরিতে সুতা ২০০ টাকা, ১০ কেজি তার ১৭০০ টাকা, সেলাই করতে ১৫০ টাকা, তালপাতা কেটে নিয়ে আসেন শ্রমিক প্রতি ৫০০ টাকা, রং খরচ ৫০ টাকা খরচ হয়। নিজেদের পারিশ্রমিক বাদ দিয়ে প্রতি হাত পাখায় আমাদের লাভ হয় ৫ থেকে ৮ টাকা।
কথা হয় অপর পাখা কারিগর ফারুক হোসেনের সাথে। তিনি জানান, আমরা পাখা তৈরিতে ফরিদপুর জেলা থেকে তাল পাতা কিনে নিয়ে আসি। এরপর ওই কাঁচা পাতা শুকিয়ে পানিতে ভিজিয়ে রাখি। নির্দিষ্ট সময়ের পর ওই পাতাগুলো উঠিয়ে চাপাতি দিয়ে পাখার আকৃতি তৈরি করি। তালের হাতপাখা সাধারণত ৩ প্রকার। আস্ত ডাঁটি (তালপাতার পূর্ণ ডাঁটিযুক্ত) হাত পাখা, আধা ডাঁটি (তালপাতার অর্ধ ডাঁটি যুক্ত) হাতপাখা, কান্তি (তালপাতার সাথে চটা দিয়ে বাধা) হাতপাখা।
তিনি বলেন, একটি তালের হাতপাখা তৈরি করতে পাঁচটি মানুষের হাতের ছোঁয়া লাগে। তারপরে আমরা সেই পাখাটি ক্রেতাদের হাতে পৌঁছাতে পারি। তবে আমরা অনলাইনে হাত পাখার অর্ডার পাইলে আমরা যত্ন সহকারে পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করব।
তিনি আরো জানান, পৌষ (জানুয়ারি) মাস থেকে পাতা সংগ্রহের কাজ শুরু হয়। হাত পাখা তৈরির কাজ শুরু হয় মাঘ (ফেব্রুয়ারি) মাস থেকে ফাগুন (মার্চ) মাস পর্যন্ত। ভাদ্র (সেপ্টেম্বর) মাসে এ কাজ শেষ হয়। ৯ মাস ধরে পাখা তৈরি কাজ চলে।
ইতিমধ্যেই এই গ্রামে যশোর ও সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে তালের হাতপাখা কিনে নিয়ে গেছে বলে তারা জানিয়েছেন। বর্তমানে হাতপাখা কারিগররা প্রতি ১০০ হাতপাখা ২ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকায় বিক্রি করছেন। যা খুচরা বাজারে প্রতিটি পাখা বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা থেকে ৬০ টাকা।
এই গ্রামে ঢাকা সহ যশোর, সাতক্ষীরা, ঝিকরগাছা, নাভারণ, বাঁকড়া, বাগআঁচড়া থেকে ব্যবসায়ীরা তালের হাত পাখা কিনতে আসেন।
হাত পাখার কারিগররা জানিয়েছেন, সরকার আমাদের আর্থিক সাহায্য দিলে আমরা নিজেদেরকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলতে পারবো।