ইসমাইল হোসেন:
বিদ্যুৎ চলে গেলেই যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পুরো ওয়ার্ড অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে যায়। জেনারেটর থাকলেও সেটি চালানো হয়না। এমনকি হাসপাতালের জরুরি বিভাগে মোবাইলের টর্চ জ্বালিয়ে চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়। প্রচণ্ড গরম আর মশার অত্যাচারে অতিষ্ঠ রোগী ও স্বজনরা।
দুই বছর ধরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জেনারেটর চালানো হয়না। এর ফলে চলমান বিদ্যুৎ বিভ্রাটের মধ্যে বিপাকে পড়ছেন রোগী ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকগণ। রাতে বিদ্যুৎ চলে গেলে চিকিৎসক, নার্স এবং রোগী ও তাদের স্বজনদের মোবাইল ফোনের টর্চ কিংবা মোমবাতি জ্বালিয়ে সেবা দিতে হয়। দিনের বেলাতে সিজারিয়ান অপারেশন করার প্রয়োজন হলে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে আগেভাগেই জানিয়ে দেয়া হয় যাতে লোডশেডিং না হয়। নার্স রুম ও জরুরি বিভাগে একটি করে রিচার্জেবল এলইডি বাল্ব থাকলেও সেটি বেশিক্ষণ জ্বলেনা।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, একটি প্রকল্প থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জন্য জেনারেটর বরাদ্দ দেয়া হতো। ২০২২ সাল পর্যন্ত জেনারেটর চালানোর জন্য তেল পাওয়া যেত। এরপর আর তেলের বরাদ্দ না থাকায় জেনারেটর চালানো সম্ভব হচ্ছেনা। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি চালাচালি করা হলেও কোন ফল মেলেনি। এখন অন্য কোন খাত থেকে বরাদ্দ পেলে জেনারেটর সচল করা সম্ভব হবে।
সরেজমিন হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার সাথে সাথেই পুরো হাসপাতাল অন্ধকারে ঢেকে যায়। পুরুষ ওয়ার্ডে বেশির ভাগ শয্যার পাশে মোবাইল ফোনের লাইট জ্বালিয়ে রাখা হয়েছে। নারী ওয়ার্ড অন্ধকারে নিমজ্জিত। ওপরতলায় নার্স রুমে একটি মাত্র রিচার্জেবল বাল্ব রয়েছে। তবে বেশিক্ষণ এই আলো থাকেনা বলে জানায় সংশ্লিষ্টরা। অন্ধকারেই রোগী ও তাদের স্বজনরা বসে আছেন। অনেকে মোমবাতি বা মোবাইল ফোনের লাইট জ্বালিয়ে খাবার খাচ্ছেন। প্রচন্ড গরমে তাদের হাসফাস অবস্থা, মশার কয়েল জ্বালিয়ে হাতপাখা দিয়ে রোগীদের বাতাস করছে স্বজনরা। এমন পরিস্থিতিতে রাউন্ডে থাকা ডাক্তার ও নার্স মোবাইলের আলো জ্বালিয়ে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন।
জরুরি বিভাগে একটিমাত্র রিচার্জেবল বাল্ব থাকলেও সেটির আলো খুবই কম। কিছুক্ষণ এই বাল্ব জ্বলে, তারপর পুরো অন্ধকার। এসময় কোন রোগী আসলে তাদের সেলাই দেয়া প্রয়োজন হলেও সেটি বিঘ্নিত হয়। মোবাইলের আলো জ্বালিয়েই সেবা দিতে হয় দাবি তাদের।
রাতে ৫০ শয্যার বিপরীতে হাসপাতালে রোগী ভর্তি থাকে ৬০ থেকে ৬৫ জন। রোগীরা জানান, প্রতি রাতে ৩ থেকে ৪ ঘন্টা বিদ্যুৎ থাকেনা। প্রচন্ড গরমে রোগীরা আরো অসুস্থ হয়ে পড়ছে। অন্ধকারে মশার উৎপাত বাড়ে, কয়েল জ্বালিয়েও কাজ হয়না। মোবাইলের লাইট বা মোমবাতি জ্বালিয়ে খাবার খেতে হয়। তাদের দাবি জেনারেটর চালালে এই সমস্যার সমাধান হতো। হাসপাতালের লাইনে লোডশেডিং না দিতেও অনুরোধ জানান তারা।
ঝিকরগাছা পল্লী বিদ্যুৎ জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল (ডিজিএম) ম্যানেজার টিএম মেসবাহ উদ্দীন বলেন, পিক আওয়ারে (সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১১টা) চাহিদার তুলনায় অন্তত ১৫ শতাংশ বিদ্যুৎ কম পাওয়া যাচ্ছে। এজন্য লোডশেডিং হচ্ছে। গরম কমে আসলে কিংবা বৃষ্টিপাত হলে এই সমস্যার সমাধান হবে বলে তিনি জানান।
চারদিন ধরে ঠান্ডাজনিত কারণে স্ত্রীকে নিয়ে হাসপাতালে আছেন কাউরিয়া গ্রামের রফিকুল ইসলাম ঢালি। তিনি বলেন, হাসপাতালে আসলাম রোগ ভাল করতে কিন্তু উল্টো স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়ছে। কারেন্ট না থাকলে ভোগান্তির শেষ নেই। পুরো হাসপাতাল অন্ধকার হয়ে যায়। গরম আর মশার কামড়ে অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছি। পুরন্দরপুর গ্রামের বৃদ্ধা সুন্দরী বেগম (৬৫) তার মেয়েকে নিয়ে হাসপাতালে আছেন। তিনি বলেন, রাতে কারেন্ট যায় আর আসে। খুব গরম পড়ছে, মেয়েকে পাখা দিয়ে বাতাস করার শক্তিও নাই। একটা মোবাইল আছে। সেটার আলো জ্বালিয়ে বাথরুমে গেলে অন্যজন অন্ধকারে থাকে।
ঝিকরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. রশিদুল আলম বলেন, জেনারেটর এর তেল বরাদ্দের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও সিভিল সার্জনকে জানিয়েছি। কিন্তু সেখান থেকে কোন বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। বাধ্য হয়ে বুধবার স্থানীয় সংসদ সদস্যকে একটি চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানিয়েছেন বলে তিনি জানান। এমনকি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকেও বিষয়টি জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, কোন ফ্রিল্যান্স খাত থেকে যদি বরাদ্দ পাওয়া যেত তাহলে হয়তো জেনারেটর সচল রাখা যেত।
সিজারিয়ান অপারেশন চলাকালীন বিদ্যুৎ চলে গেলে কি করা হয় এমন প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জানান, অপারেশনের দিনে যাতে লোডশেডিং না হয় সে বিষয়ে বিদ্যুৎ অফিসকে জানিয়ে দেয়া হয়। এজন্য অপারেশনের সময় লোডশেডিং হয়না।
এদিকে হাসপাতালের স্বাস্থ্য সেবার মান এবং পরিবেশ নিয়েও ক্ষোভের শেষ নেই রুগী ও তাদের স্বজনদের। এমতাবস্থায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকার সাধারণ জনগন।