# হঠাও চাঁদাবাজ, বাঁচাও বিএনপি স্লোগান
# টিএস আইয়ুব অনুসারীদের পাল্টা শোডাউন
বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোর-৪ (বাঘারপাড়া-অভয়নগর) সংসদীয় আসনে বিএনপির অন্যতম প্রার্থী কেন্দ্রীয় নেতা প্রকৌশলী টিএস আইয়ুবকে ঠেকাতে এবার একাট্টা হয়েছেন আসনটির দুই উপজেলার শীর্ষ নেতারা। শনিবার দুপুরে বাঘারপাড়া ও অভয়নগর উপজেলার শীর্ষনেতারা এক অনুষ্ঠানে টিএস আইয়ুবকে হঠাতে একট্টা হওয়ার ঘোষণা দেন। একই মঞ্চে দুই উপজেলার নেতারা হাত উঠিয়ে আইয়ুবকে ‘চাঁদাবাজ ও ফ্যাসিস্ট’ আখ্যা দিয়ে ঘায়েল করেও বক্তব্য দেন। এদিকে, একাট্টা ঘোষণার কয়েক ঘন্টা পরেই নওয়াপাড়ায় শোডাউন দিয়েছেন আইয়ুব অনুসারীরা। পাল্টাপাল্টি এই কর্মসূচির মধ্য দিয়ে আসনটিতে বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে বলে মনে করছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। আইয়ুব শিবিরের দাবি, জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে একটি পক্ষ তাকে বিরোধিতা করছেন। আর আইয়ুব বিরোধীদের ভাষ্য, হঠাও চাঁদাবাজ, বাঁচাও বিএনপি স্লোগানে দু’ উপজেলার তৃণমূলে ঐক্যবদ্ধ রাজনীতির শুভ সূচনা হয়েছে। এরই মধ্যে দিয়ে আসনটি বিএনপির পুনরুদ্ধারের সঙ্গে তৃণমূলের রাজনীতিতে সৃষ্টি হবে নবজাগরণ।
যশোর-৪ (অভয়নগর-বাঘারপাড়া ও বসুন্দিয়া ইউনিয়ন) আসনটি আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। দেশ স্বাধীনের পর ১২টি নির্বাচনের ৮টিতেই বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী। এ আসনে দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীর তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও কৃষকদলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক প্রকৌশলী টিএস আইয়ুব। এরপর অভয়নগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ফারাজী মতিয়ার রহমান, বাঘারপাড়া পৌর বিএনপির সভাপতি ও সাবেক মেয়র আবদুল হাই মনা, জাতীয়তাবাদী যুবদল ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম আহ্বায়ক ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট নূরে আলম সিদ্দিকী সোহাগ।
নেতাকর্মীদের অভিযোগ, ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানের পর আসনটিতে অন্যান্য উপজেলার চেয়ে বেশি চাঁদাবাজির অভিযোগ ওঠে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। একক আধিপত্য বিস্তার করতে আসনটির দুই উপজেলাতেই কমিটি গঠনে একক নিয়ন্ত্রণ করেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা টিএস আইয়ুব। পলাতক আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান ও নেতা এবং ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনেরও অভিযোগ ওঠে আইয়ুবের বিরুদ্ধে। দীর্ঘদিন ধরে যারা আইয়ুবের সঙ্গে রাজনীতি করেছেন তারাই এখন বিরোধিতা করে রাজপথে নেমেছেন। একাট্টা হয়ে আইয়ুবের বিরুদ্ধে দিচ্ছেন নানা বক্তব্য। এতদিন আইযুবের জন্মস্থান বাঘারপাড়ায় নেতাকর্মীরা তাকে বিরোধিতা করলেও শনিবার সেটি নির্বাচনী এলাকার আরেক উপজেলা অভয়নগরে ছড়িয়ে পড়ে। বাঘারপাড়া ও অভয়নগরের শীর্ষ নেতারা আইয়ুবকে হঠাতে এবার একসাথে হয়েছেন।
শনিবার দুপুরে আসনটিতে বিএনপির নেতাকর্মীদের নিয়ে ঈদ পুনর্মিলনী করেছেন আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী শ্রমিকদল কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাতি ফারাজী মতিয়ার রহমান। উপজেলার একতারপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে এ ঈদ পুনর্মিলনীর আয়োজন করা হয়। ওই অনুষ্ঠান থেকে ফারাজী মতিয়ার রহমানকে বিএনপির প্রার্থী ঘোষণার দাবি জানান অভয়নগর ও বাঘারপাড়া উপজেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আরেক প্রার্থী আবদুল হাই মনাও। একই মঞ্চে নেতারা হাত উঠিয়ে ঘোষণা দেন আইয়ুবকে দলীয় মনোনয়ন ঠেকাতে দরকার হলে নেতাকর্মীরা ঢাকাতে গিয়ে অবস্থান নেয়ার।
অনুষ্ঠানে টিএস আইয়ুব ফ্যাসিস্ট ও দুর্নীতিবাজ আখ্যা দিয়ে মতিয়ার রহমান ফারাজী বলেন, ‘দুর্নীতিবাজ ব্যক্তিকে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন দেখতে চাই না। যারা সিণ্ডিকেট গড়ে, সিনিয়র নেতাদের বাদ দিয়ে রাজনীতি করে তাদেরকে রুখে দিতে হবে। যারা বিগত সময়ে আন্দোলন সংগ্রামে ছিলো না। যারা বিএনপির নেতাকর্মীদের উপর হামলা নির্যাতন করেছে, সেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পুনর্বাসন করছে টিএস আইয়ুব। আমাদের স্বাধীনতাকে হরণ করেছে সে। তার চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ। তাই হঠাও চাঁদাবাজ, বাঁচাও বিএনপি। চাঁদাবাজ ফ্যাসিবাদের হাতে জনগণ দায়িত্ব তুলে দিতে চাই না। এটা কেন্দ্রীয় নেতাদের বুঝাতে হবে, অবহিত করাতে হবে। দলের ক্লিন ইমেজের ব্যক্তিকে দলীয় মনোনয়ন দেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
বাঘারপাড়া পৌর বিএনপির সভাপতি আব্দুল হাই মনা বলেন, ‘৩০ বছর আগে এই ঐক্যবদ্ধ হওয়ার দরকার ছিলো। আওয়ামী লীগের গাটছড়া নিয়ে বিএনপি নেতৃত্ব দিচ্ছে টিএস আইয়ুব। আওয়ামী লীগের সাথে আঁতাত করে চলেছে সে। এখন আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করছে। এমন ব্যক্তিকে নেতাকর্মীরা চায় না। তাকে প্রতিহত করতে সবাই এক হতে হবে।’
এর আগে দুই উপজেলার নেতাকর্মীরা বাঘারপাড়া ও অভয়নগর বাজারে টিএস আইয়ুবকে হঠাতে মহড়া দেন। এদিকে, এদিন সন্ধ্যায় অভয়নগরের নওয়াপাড়া বাজারে টিএস আইয়ুবের অনুসারীরা আনন্দ মিছিল বের করেন। আনন্দ মিছিল হলেও মূলত এটি ছিলো আইয়ুব পক্ষে পাল্টা শোডাউন বলে মনে করছেন নেতাকর্মীরা।
এই বিষয়ে টিএস আইযুবের বক্তব্য জানার জন্য যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এজন্য তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।