বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোর সদরের ঝাউদিয়া গ্রামে এক বাড়িতে ডাকাতি, স্বর্ণালংকারসহ ২৫ লাখ টাকার মালামাল লুটের অভিযোগে বিল্লাল হোসেন নামে এক সন্দেহভাজন যুবককে পুলিশ হেফাজতে নিয়েছে। হেফাজতে নেয়া বিল্লাল হোসেন ঝাউদিয়া এলাকার বাসিন্দা। এদিকে, বিল্লালকে আটকের প্রতিবাদে যশোর-ঝিনাইদহ মহাসড়বের চুড়ামনকাটি বাজারে অবরোধ করে গ্রামবাসী। তাদের দাবি ডাকাতির ঘটনাটি সাজানো। বাড়ির মালিক শাহানা বেগম নিজেই ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়ে গ্রামের নিরীহ মানুষকে ফাঁসিয়ে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নেয়ার পায়তারা করছেন।
এর আগে গত শুক্রবার ভোররাতে যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের ঝাউদিয়া গ্রামে পূর্বপাড়ায় বিমান বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্য আলমগীর হোসেনের বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে।
অভিযোগে জানা যায়, আলমগীর হোসেনের ঘরের গ্রিল ভেঙ্গে রাতে দিকে ৬/৭ জন ডাকাতদলের সদস্য ঘরের ভেতর ঢুকে সবাইকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে। এ সময় তারা ২০ ভরি স্বর্ণালঙ্কারসহ ২৫ লাখ টাকার মালামাল নিয়ে পালিয়ে যায়। সকালে এলাকায় ডাকাতির ঘটনাটি জানাজানি হয়। এ সময় আলমগীর হোসেনের স্ত্রী শাহানা বেগম পুলিশ ও সাংবাদিকদের জানান, ডাকাত দলের সদস্যরা ঘরে ঢুকে তাদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সবাইকে হাত মুখ বেধে রাখে। এ সময় তারা আমার ঘরের সকল রুমের ভেতরে ঢুকে নগদ ৩ লাখ টাকা ও ২০ ভরি স্বর্ণসহ বিভিন্ন মালামাল নিয়ে যায়।
এলাকাবাসীর অভিযোগ এ ডাকাতির ঘটনা আলমগীরের স্ত্রী শাহানা বেগম শুরুতে কাউকে চিনতে পারেননি বললেও পরে তিনি এলাকার একাধিক নিরীহ ব্যক্তিকে ফাঁসানোর জন্য হুমকি দিতে থাকেন। এরপর ডাকাতির ঘটনায় বিল্লাল নামে এক নিরীহ যুবককে সন্দেহ করে পুলিশ দিয়ে আটক করান তিনি। এ ঘটনার পর গ্রামবাসী প্রতিবাদী হয়ে ওঠেন। তারা নিরীহ যুবককে মুক্তি ও ডাকাতির ঘটনাটি পাতানো দাবি করে সুষ্টু তদন্তের দাবিতে শুত্রুবার বেলা ১১ টায় চুড়ামনকাটি বাজারে যশোর-ঝিনাইদহ মহাসড়ক অবরোধ করে। এসময় সড়কের দু’পাশে শত যানবাহন আটকা পড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এ কর্মসূচিতে ঝাউদিয়া গ্রামের দলমত নির্বিশেষে শতাধিক নারী পুরুষ উপস্থিত ছিলেন। তাদের সকলের দাবি ডাকাতির সঠিক সত্যি উদঘাটন করা হোক।
মানববন্ধনে স্থানীয় ইউপি সদস্য গোলাম মোস্তফা বলেন, পুরো ডাকাতির ঘটনাটি তাদের নিকট সাজানো মনে হয়েছে। তিনি বলেন, ভুক্তভোগী শাহানা বেগম এলাকায় সুদে কারবারি হিসেবে পরিচিত। তিনি ডাকাতির ঘটনাটি সুষ্ঠু তদন্তের জন্য প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেন। স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ মানববন্ধনে বলেন, শাহানা বেগম এলাকায় মামলাবাজ হিসাবে পরিচিত। তিন ডাকাতির নাটক সাজিয়ে মামলা করে নিরীহ ব্যক্তিদের আসামি করে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার উদ্দেশ্যেই এমন কাজ করছেন। স্থানীয় চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দাউদ হোসেন ডাকাতির ঘটনাটি সঠিক তদন্তপূর্বক প্রকৃত তথ্য উদঘাটন করতে প্রশাসনের পদক্ষেপ দাবি করেন।
মহাসড়ক অবরোধের খবর পেয়ে চুড়ামনকাটি বাজারে যান কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক। তিনি ডাকাতির ঘটনাটি সঠিক তদন্ত করে দ্রুতই সত্য উদঘটন করে অপরাধী শনাক্ত করা হবে বলে স্থানীয়দের আশ^াস দেন। পরে রাতে এই প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ‘এই ঘটনায় ভুক্তভোগী লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অভিযুক্ত বিল্লাল হোসেনকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে। আমরা এলাকাবাসী, ভুক্তভোগী ও অভিযুক্তের সঙ্গে কথা বলেছি। এতে আমাদেরও ডাকাতি হওয়া নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। তারপরেও তদন্ত চলছে। ইতিমধ্যে পুলিশের একাধিক টিম কাজ শুরু করেছে।