বাংলার ভোর প্রতিবেদক
ঢাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলা মামলায় যশোরের এক ‘নিরীহ’ হোমিও চিকিৎসক গ্রেফতার হয়ে কারাগারে রয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনার শিকার হোমিও চিকিৎসক পাভেল পারভেজ (৪০) যশোর শহরের মুজিব সড়ক বাইলেনের রাবেয়া ভিলা’র মৃত আব্দুল লতিফের ছেলে এবং শাহ হোমিও হলের স্বত্বাধিকারী।
গত ১ আগস্ট ঢাকার সায়েন্সল্যাব মোড়ে হামলার ঘটনায় ১৯ সেপ্টেম্বর ডিএমপি নিউমার্কেট থানায় দায়ের করা মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পরিবারের দাবি, হোমিও চিকিৎসক পাভেলের রাজনীতির সঙ্গে কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই এবং ঘটনার সময় সে যশোরেই ছিল। ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তাকে মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।
যশোর কোতোয়ালি থানা সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ১ আগস্ট ঢাকার সায়েন্সল্যাব মোড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় ১৯ সেপ্টেম্বর ডিএমপি নিউমার্কেট থানায় একটি মামলা করেন ঢাকা কলেজের ছাত্র জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুর উপজেলার ভাটকুড়ি গ্রামের সাইফুল ইসলামের ছেলে পারভেজ আলী। মামলার এজাহারে আওয়ামী লীগের কয়েকজন শীর্ষ নেতা, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের পদধারীসহ ৩৫ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত ৪০-৫০ জনের বিরুদ্ধে এই মামলা দায়ের করা হয়। মামলার ১২ নম্বর আসামি হিসেবে পাভেল পারভেজের নাম উল্লেখ করে বর্তমান ঠিকানা ঢাকার ধানমন্ডি দেখানো হয়েছে। এই মামলায় ৭ অক্টোবর রাতে পাভেলকে যশোরের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে ৮ অক্টোবর যশোরের আদালতে সোপর্দ করা হয়। আদালত তাকে কারাগারে পাঠানের নির্দেশ দেয়।
হোমিও চিকিৎসক পাভেল পারভেজের স্ত্রী মেহেরুন আক্তার জানান, ঢাকায় আমাদের কোনো ঠিকানা নেই। পাভেল কবে ঢাকায় গেছে তাও মনে পড়ে না। ছাত্র আন্দোলনের সময় সে যশোরেই ছিল। আর তার কোনো রাজনৈতিক পরিচয় বা সংশ্লিষ্টতা নেই। হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার পাশাপাশি মধু’র ব্যবসা করে। ঢাকায় এই মামলা আসামি শুনে আমরা হতবাক হয়ে গেছি। নিরীহ পাভেলের নাম দিয়ে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মামলায় তাকে ফাঁসানো হয়েছে বলে তিনি দাবি করে।
মেহেরুন আক্তার দাবি করেন, কোনো ধরনের তদন্ত ছাড়াই তার স্বামীকে এই মামলায় আটক করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তিনি সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচার চান।
পাভেলের প্রতিবেশী জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব আলম শাহীন বলেন, নিরীহ প্রকৃতির পাভেল ভাই হোমিও চিকিৎসা ও মধু’র ব্যবসা করেন। রাজনীতির সাথে তার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। ছাত্র আন্দোলনের সময় তিনি যশোরেই ছিলেন। এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ কিম্বা তার ফোন লোকেশন বা কললিস্ট পরীক্ষা করলে তা জানা যাবে।
শহরের শংকরপুর এলাকার বাসিন্দা গৃহবধূ ইয়াসমিন আক্তার জানান, তিনিসহ পরিবারের সদস্যদের শারীরিক সমস্যা করে পাভেল পারভেজের কাছ থেকে হোমিও ওষুধ নেন। ডায়াবেটিস রোগের জন্যও তার ওষুধ খুবই কার্যকরি। নিরীহ হোমিও ডাক্তারকে এই মামলায় ফাঁসানোয় তিনি হতবাক হয়েছেন।
যশোর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাড. সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু জানান, ‘পাভেল আসলেই নিরীহ প্রকৃতির ছেলে। কনস্প্রেসি করে তাকে এই মামলা জাড়ানো হয়েছে। শুনেছি জমি-জমা বা পারিবারিক কারণে এই মামলায় তাকে জড়ানো হতে পারে।’
মামলার বাদী ঢাকা কলেজের ছাত্র পারভেজ আলী জানান, তার দায়েরকৃত মামলার এক আসামি যশোর গ্রেফতার হয়েছে বলে জেনেছেন। তবে ‘পরিবারের দাবি, পাভেল ষড়যন্ত্রমূলক মামলার শিকার হয়েছেন’ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি ‘আদালতে কথা হবে’ উল্লেখ করে আর কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক জানিয়েছেন, ঢাকার ডিএমপি নিউমার্কেট থানায় দায়েরকৃত মামলায় পাভেলকে গ্রেফতারে আদালতে সোপর্দ করা হয়।