যশোরের রাজনীতি, উন্নয়ন ও জনকল্যাণের ইতিহাসে একটি নাম চিরস্মরণীয় হয়ে আছে তরিকুল ইসলাম। তিনি ছিলেন একাধারে দূরদর্শী রাজনীতিক, নিবেদিতপ্রাণ সংগঠক এবং একজন স্বপ্নদ্রষ্টা উন্নয়নকারিগর। তাঁর নেতৃত্বে যশোর পেয়েছে আধুনিক অবকাঠামো, শিক্ষার প্রসার, স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন এবং মানবিক প্রশাসনের মডেল।
তরিকুল ইসলামের নাম শুনলেই মানুষ আজও স্মরণ করে এক নির্ভীক, পরিশ্রমী ও সৎ জননেতাকে, যিনি দল-মতের উর্ধ্বে উঠে কাজ করেছেন নিজের জেলার মানুষের জন্য।
রাজনীতি তাঁর কাছে ছিল সেবার মাধ্যম
তরিকুল ইসলামের রাজনৈতিক জীবনের শুরু হয়েছিল জনগণের অধিকার আদায়ের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। তিনি বিশ্বাস করতেন, রাজনীতি মানে ক্ষমতা নয়, এটি মানুষের কল্যাণের এক নিরন্তর প্রয়াস।
তিনি সবসময় মনে করতেন, একজন জনপ্রতিনিধির আসল শক্তি হলো জনগণের ভালোবাসা ও আস্থা। তাই তিনি রাজনীতিকে দেখেছিলেন দায়িত্ব হিসেবে, ব্যক্তিগত সুবিধার উপায় হিসেবে নয়।
দুঃখে-দুর্দশায়, প্রাকৃতিক দুর্যোগে কিংবা সামাজিক সংকটে তিনি ছুটে গেছেন মানুষের পাশে।
যশোরের গ্রামেগঞ্জে তাঁর পায়ের ছাপ পড়েনি এমন জায়গা হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে না।
শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অবকাঠামোয় অনন্য অবদান
যশোরের উন্নয়নের ইতিহাসে তরিকুল ইসলামের ভূমিকা অনন্য ও যুগান্তকারী।
তাঁর হাতেই যশোর মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা পায়, যা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের জন্য চিকিৎসা ও শিক্ষা— দুই ক্ষেত্রেই নতুন অধ্যায় খুলে দেয়।
এই কলেজ শুধু যশোর নয়, আশেপাশের জেলাগুলোর মানুষকেও আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা ও চিকিৎসা শিক্ষা পাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে।
তিনি জানতেন একটি অঞ্চলের উন্নয়ন তখনই টেকসই হয়, যখন সাধারণ মানুষ তার সুফল ভোগ করতে পারে।
তাঁর উদ্যোগেই যশোর পায় নতুন সড়ক নেটওয়ার্ক, বাজারে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং কৃষকদের জন্য সেচ ও উৎপাদন সহায়তা।
তিনি উন্নয়নের প্রতিটি ক্ষেত্রেই স্বচ্ছতা, পরিকল্পনা ও জনঅংশগ্রহণকে গুরুত্ব দিয়েছেন।
দূরদর্শী নেতৃত্ব ও মানবিক রাজনীতি
জাতীয় রাজনীতিতেও তরিকুল ইসলাম ছিলেন প্রজ্ঞা, শালীনতা ও নীতির প্রতীক।
দলীয় নেতৃত্বে তাঁর অবদান, সহনশীল রাজনীতি চর্চা এবং পরামর্শদাতা হিসেবে ভূমিকা তাঁকে জাতীয় পর্যায়ে একটি সম্মানজনক অবস্থানে নিয়ে যায়।
তিনি বিশ্বাস করতেন, রাজনীতিতে মতভেদ থাকতে পারে, কিন্তু মনভেদ নয়।
প্রতিপক্ষকেও তিনি দেখতেন সহকর্মী হিসেবে, শত্রু হিসেবে নয়, এটাই ছিল তাঁর মানবিক রাজনীতির দর্শন।
যশোরের মাটিতে অমর এক নাম
তরিকুল ইসলামের মৃত্যুতে যশোর হারিয়েছে তার এক সত্যিকারের অভিভাবককে।
কিন্তু তাঁর স্বপ্ন, আদর্শ ও উন্নয়নচিন্তা আজও বেঁচে আছে যশোরের প্রতিটি ইট-পাথরে।
মেডিকেল কলেজের ভবনে, নতুন সড়কের বুকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে, স্কুল-কলেজের মাঠে, মানুষের মুখের হাসিতে এখনো তাঁর অবদান ঝলমল করে।
তরিকুল ইসলাম শুধু একজন রাজনীতিক ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন পথপ্রদর্শক, একজন সমাজগঠক, একজন নির্মাতা। যশোরের আধুনিকতার পেছনে তাঁর হাতের ছোঁয়া, তাঁর পরিকল্পনা ও তাঁর অদম্য ইচ্ছাশক্তি আজও অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে আছে।
তিনি ছিলেন যশোরের উন্নয়নের প্রকৃত কারিগর, যাঁর স্বপ্ন আর কর্ম একাকার হয়ে আজও বেঁচে আছে যশোরের মাটিতে, মানুষের হৃদয়ে।
লেখক : অন-লাইন ইনচার্জ, দৈনিক বাংলার ভোর
