বাংলার ভোর প্রতিবেদক
দ্বিতীয়তলার ভবনটি জরাজীর্ণ। ভিতরে ঢুকতেই দেখা গেল ভবনের ছাদ ও দেয়ালে লোনা ধরেছে। জানালাগুলো মরিচা পড়ে নষ্ট। কক্ষের ভিতরে ছাদের পলেস্তার খসে পড়েছে। ছাদজুড়ে অসংখ্য ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টির পানি চুইয়ে স্যাঁতসাতে ছাদ ও দেয়াল। জরাজীর্ণ ভবনটির চারটি কক্ষে চলছে শিশু শিক্ষার্থীদের পাঠদান। কখন মাথায় ছাদ ভেঙে পড়ে, সেই আতংক নিয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করছেন শিক্ষকরা। এটি যশোর শহরের রামকৃষ্ণ আশ্রম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের হালচাল। একই অবস্থা সদর উপজেলার বলরামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনের। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে শিশুদের পাঠদান। আসন্ন ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে ওই বিদ্যালয় দুটি ভোট কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। ভোট কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে এমন যশোর জেলার ২৫৯টি বিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত নানা সংকট চিহ্নিত করা হয়েছে। এরমধ্যে ২৪৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ১১টি স্কুল-মাদরাসা রয়েছে। সংস্কারের জন্য বরাদ্দ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে সংশ্লিষ্ট দপ্তর।
ঝুঁকিপূর্ণ ও জরাজীর্ণ ভবনের বিকল্প নেই
২৫৯টি বিদ্যালয়ের সাধারণ, মধ্যম ও স্বল্প সংষ্কারের বরাদ্দ চেয়ে চিঠি পাঠানো হলেও ঝুঁকিপূর্ণ ভবন অপসারণ করে কবে নতুন ভবন হবে, সেটি নিশ্চিত নয় রামকৃষ্ণ আশ্রম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা। বিদ্যালয়টির তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র ইয়াসির আরাফাতের মা রুমা বেগম বলেন, ছেলেকে ক্লাসে দিয়ে বারন্দায় দাঁড়িয়ে আছি। ভবনের অবস্থা খুবই ভয়াবহ। খুবই ভয়ে থাকি, কখন দুর্ঘটনা ঘটে। আমার মত সব অভিভাবক সন্তানকে স্কুলে দিয়ে টেনশনে থাকে। ছেলে মেয়েদের নিরাপদে ক্লাসের ব্যবস্থা করা জরুরী। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’
সহকারী শিক্ষক সালমা আক্তার বলেন, শ্রেণি কক্ষে পাঠদান করি ভয়ে ভয়ে। কখন মাথায় ছাদ ভেঙে পড়ে, সেই আতংকে থাকি। ছাদের পলেস্তার ধসে পড়ে। দেয়ালে লোনা ধরেছে। জানালাগুলো মরিচা ধরে নষ্ট হয়েছে। পুরো ভবনটিই জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। দ্রুত নতুন ভবন নির্মাণ না হলে বড় ধরণের দুর্ঘটনার আশংকা করছি।’
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুপ্তা শিকারী বলেন, ১৯৮৯ সালে নির্মিত দ্বিতয়তলা বিশিষ্ট ভবনটি জরাজীর্ণ হয়েছে। শ্রেণি কক্ষগুলোর ব্যবহার উপযোগী নেই। ছাদের পলেস্তার ধসে পড়ছে। দেয়ালে লোনা ধরেছে। জানালার গ্রিল ভাঙা। কয়েক দফায় চোরে হানা দিয়ে ফ্যান চুরি করেছে। বিকল্প ভবন না থাকায় ঝুঁকি নিয়েই পাঠদান চালিয়ে যেতে হচ্ছে। অভিভাবকরা সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠাতে ভয় পায়। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বারবার জানানো হয়েছে। কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।’
সাধারণ ও মধ্যম সংস্কার প্রয়োজন :
জানা যায়, ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে যশোর জেলার ৮২৭টি ভোট কেন্দ্রের খসড়া তালিকা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। ওই তালিকার ২৫৯টি কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদরাসার অবকাঠামোগত নানা সংকট চিহ্নিত করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের মাধ্যমে বিদ্যালয় ভবন সংস্কারের জন্য বরাদ্দ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে তালিকা পাঠানো হয়েছে। দুটি বিদ্যালয়ের ভবন ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করা হয়েছে। একই সাথে প্রত্যেকটি বিদ্যালয়ের বিদ্যুৎ সংযোগ, বৈদ্যুতিক ফ্যান, দরজা, জানালা সংযোজন, পানি সংকট ও টয়লেটের সমস্যার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
এসব বিদ্যালয় ভবন সংস্কারের জন্য ৫০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ তিন লাখ টাকা পর্যন্ত বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের তথ্যমতে, যশোরের অন্তত ২৪৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে অবকাঠামোগত নানা সংকট রয়েছে। এরমধ্যে অভয়নগরে ৩৯টি, কেশবপুরে ১৩টি, চৌগাছায় ২৮টি, ঝিকরগাছায় ৪৪টি, বাঘারপাড়ায় ৫টি, মণিরামপুরে ৪৯টি, শার্শায় ২৬টি ও সদরে ৪৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে।
জেলা শিক্ষাপ্রকৌশলী অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলার ১১টি বেসরকারি স্কুল ও মাদরাসা ভোট কেন্দ্রের নানা সংকট রয়েছে। সেগুলো হলো- বাঘারপাড়ার সম্মিলিত বিদ্যাপীঠ, অভয়নগর উপজেলার চাপাতলা চেঙ্গুটিয়া আলিম মাদরাসা, নওয়াপাড়া হিজবুল্লাহ দাখিল মাদরাসা, শার্শার বাগআঁচড়া হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) মাদরাসা, উত্তর কাগজপুকুর স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা, রহিমপুর আলিম মাদরাসা, বাঘারপাড়ার জিসিটি কুটিবাড়ি দাখিল মাদরাসা, মাহমুদপুর আকবর আলী বালিকা দাখিল মাদরাসা, মাহমুদপুর দাখিল মাদরাসা, পশ্চিম বলরামপুর আলীম দাখিল মাদরাসা, ধুপখালি ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসা।
যা বলছেন কর্মকর্তারা :
জানতে চাইলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আশরাফুল আলম বলেন, ভোট কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর অবকাঠামোগত সংকট চিহ্নিত করে তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়ার পর সংস্কার করা হবে।’
জানতে চাইলে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী হাদিউজ্জামান খান বলেন, ভোট কেন্দ্র হিসেবে মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুল ও মাদরাসা ব্যবহৃত হয়। যশোর জেলার ১১টি স্কুল-মাদরাসা ভোট কেন্দ্রে অবকাঠামোগত নানা সংকট রয়েছে। ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো সংস্কারের জন্য বরাদ্দ চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। পরবতী সিদ্ধান্ত শিক্ষামন্ত্রণালয় নিবে।’
জানতে চাইলে যশোরের সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম রাকিব বলেন, খসড়া ভোট কেন্দ্রের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার কেন্দ্রে সংস্কার প্রয়োজন হলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর ছোটখাটো সমস্যা থাকলে স্থানীয়ভাবে সমাধান করা হবে।’