বাংলার ভোর প্রতিবেদক:
আসন্ন ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যশোরে ছয়টি আসনে ৩১ জন প্রার্থী তাদের মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন। গত পাঁচ দিনে জেলা রির্টানিং ও সহকারী রির্টানিং কার্যালয় থেকে নিজ নিজ দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে তারা মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন।
জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মনোনিত প্রার্থীরা মনোনয়ন সংগ্রহ করলেও বিএনপি থেকে একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন। জেলা রির্টানিং কার্যালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। এদিকে জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনে একক প্রার্থী থাকলেও বিএনপি কৌশলগত কারণে একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন।
নেতাকর্মীরা বলছেন, কয়েকটি আসনে প্রার্থী বদলের সম্ভাবনা দেখেছেন তারা। একই সাথে ঘোষিত প্রার্থীদের কয়েকজনের ঋণ খেলাপির কারণে মনোনয়ন বাতিল হতে পারে। সেই কারণে কৌশলগত কারণে অনেকেই মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন। তবে দলীয়ভাবে কঠোর অবস্থানে থাকাতে জেলায় কোন বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন না জেলা বিএনপি।
তথ্যমতে, যশোর-১ (শার্শা) আসনে মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থী মুহাম্মদ আজীজুর রহমান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের বকতিয়ার রহমান, বিএনপির মফিকুল হাসান তৃপ্তি, স্বতন্ত্র শাহজাহান আলী গোলদার। এই আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী তৃপ্তি থাকলেও দলের একটি অংশ আশায় বুঁক বেঁধেছে তৃপ্তির মনোনয়ন বাতিলের আশায়। তৃপ্তি বিরোধীদের ভাষ্য, এক-এগারো সরকারের (সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকার) সঙ্গে যারা হাত মিলিয়ে বিএনপির ক্ষতি করেছেন, সেই সংস্কারপন্থীকে দলীয় মনোনয়ন চান না তৃণমূলের নেতা-কর্মী। আর তৃপ্তি অনুসারীদের ভাষ্য তৃপ্তি দলের দুর্দিনে তৃণমূলের পাশে ছিলেন। তৃপ্তিকে মনোনয়ন দেয়ায় দীর্ঘদিনের বিএনপির নেতাকর্মীরা সক্রীয় হয়েছে। তৃণমূলে সৃষ্টি হয়েছে গণজোয়ার।
যশোর-২ (ঝিকরগাছা-চৌগাছা) আসনে মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন ইসলামী আন্দোলনের ইদ্রিস আলী, স্বতন্ত্র মেহেদী হাসান, বিএনপির সাবিরা সুলতানা, জামায়াতে ইসলামীর মোহাম্মদ মোসলেহ উদ্দিন ফরিদ, বিএনএফ শামসুল হক, বিএনপির ইমরান হাসান সামাদ, স্বতন্ত্র জহুরুল ইসলাম, মিজানুর রহমান, বিএনপির মোহাম্মদ ইসহক। আসনটিতে বড় দল জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনের একক প্রার্থী থাকলেও বিএনপিতে একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন। মনোনয়ন দ্বন্দ্বে বিরোধের রেশ মনোনয়ন সংগ্রহ পর্যন্ত পৌঁছেছে। তবে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের ভাষ্য দলীয় প্রার্থী ছাড়াও দল থেকে যে চারজন মনোনয়ন সংগ্রহ করেছে, তারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করবেন। যশোর-৩ (সদর) আসনে জামায়াতে ইসলামীর আব্দুল কাদের ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মোহাম্মদ শোয়াইব হোসেন। এই আসনে হেভিওয়েট প্রার্থী বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত এখনো মনোনয়ন সংগ্রহ করেননি। আগামী দুই তিন দিনের মধ্যে সংগ্রহ করবেন বলে জানা গেছে।
যশোর-৪ (বাঘারপাড়া ও অভয়নগর) জামায়াতে ইসলামীর গোলাম রসুল, ইসলামী আন্দোলনের বায়জীদ হোসাইন, স্বতন্ত্র মতিয়ার রহমান ফারাজী, খেলাফত মজলিস আশেক এলাহী, স্বতন্ত্র এম মাসুদ আহমেদ, বিএনপি আব্দুল হাই মনা, টিএস আইয়ূব, ফারহান সাজিদ। আসনটির স্থানীয় বিএনপির গ্রুপিংয়ের রেশ রয়েছে মনোনয়ন সংগ্রহের মধ্যেও। স্থানীয় বিএনপির একাংশের ভাষ্য আসনটির মনোনীত প্রার্থী টিএস আইয়ূব ঋণ খেলাপি। মনোনয়ন যাচাই বাছাইকালে তার মনোনয়ন বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কৌশলগত কারণে টিএস বিরোধীদের একটি পক্ষ থেকে মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন বিএনপি নেতা আব্দুল হাই মনা ও মতিয়ার রহমান ফারাজী।
যশোর-৫ (মণিরামপুর) জামায়াতে ইসলামীর গাজী এনামুল হক, স্বতন্ত্র কামরুজ্জামান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ জয়নাল আবেদীন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ রশীদ আহম্মদ, বিএনপি শহীদ ইকবাল হোসেন। আসনটিতে মনোনয়ন নিয়ে গ্রুপিং দ্বন্দ্ব থাকলেও শরিককে ছাড় না দেয়ায় খুশি বিএনপির নেতাকর্মীরা। ফলে বিএনপির ঘোষিত প্রার্থীকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বিজয়ী করতে একসাথে কাজ করতে দেখা গেছে।
যশোর-৬ (কেশবপুর) জামায়াতে ইসলামীর মোক্তার আলী, ইসলামী আন্দোলন শহিদুল ইসলাম, স্বতন্ত্র অমলেন্দু দাস। আসনটিতে জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনের একক প্রার্থী মনোনয়ন সংগ্রহ করছেন। তবে আসনটিতে বিএনপির ঘোষিত প্রার্থী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ। আসনটিতে দলীয়ভাব প্রার্থী বদলের ঘোষণা আসতে পারে। সেই কারণে এখনো চূড়ান্ত মনোনয়ন ঘোষণা পর্যন্ত তাকিয়ে আছেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল হোসেন আজাদ ও অমলেন্দু দাস। আজাদ এখনো মনোনয়ন সংগ্রহ না করলেও স্বতন্ত্র মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন অমলেন্দু দাস।
এই বিষয়ে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খোকন বলেন, ‘দল এখনো মনোনয়ন চূড়ান্ত করেনি। প্রাথমিক মনোনীতরা মাঠে রয়েছে। দ্রুতই মনোনয়ন চূড়ান্ত হবে। মনোনয়ন নিয়ে ভেদাভেদ থাকলেও মনোনয়ন চূড়ান্ত হলে সবাই নিজ দলের প্রার্থীকে ঐক্যবন্ধ হয়ে কাজ করবে। কারও দলের বিদ্রোহী হওয়ার সুযোগ নেই।

