বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোরে যথাযথ মর্যাদায় শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে শনিবার সকাল ৮টার দিকে শহরের শংকরপুরে অবস্থিত বধ্যভূমিতে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। প্রথমে জেলা প্রশাসনের পক্ষে শহিদদের স্মরণে বধ্যভূমিতে পুস্পমাল্য অর্পণ করা হয়। এরপর বীরমুক্তিযোদ্ধা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকমীরা শহীদ বেদিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে।
শ্রদ্ধা নিবেদন করেন, জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলামের নেতৃত্বে জেলা প্রশাসন। পুলিশ সুপার জিয়াউদ্দীন আহমেদের নেতৃত্বে পুলিশ প্রশাসন, কেন্দ্রীয় নেতা অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের নেতৃত্বে জেলা বিএনপি, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আছাদুজ্জামান, যশোর পৌরসভার প্রশাসক রফিকুল হাসান, সদর উপজেলা ও নগর বিএনপি, জেলা যুবদল, মহিলা দল, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদল, কৃষকদল, বাংলাদেশ বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, যশোরের সাংস্কৃতিক সংগঠন সমূহ, প্রেসক্লাব যশোর, যশোর সাংবাদিক ইউনিয়ন (জেইউজে), সাংবাদিক ইউনিয়ন যশোর, দৈনিক স্পন্দন, দৈনিক লোকসমাজ, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন যশোর, যশোরের সাংস্কৃতিক সংগঠন সমূহ, প্রথম আলো বন্ধু সভা, বিদ্রোহী সাহিত্য পরিষদ, পূজা উদযাপন পরিষদসহ প্রায় অর্ধশত সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করা হয়।
পরে সকাল ১০ টায় জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। জেলা প্রশাসক মো. আজাহারুর ইসলামের সভাপতিত্বে আলোচনা সভা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার জিয়াউদ্দীন আহমেদ, জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক রফিকুল হাসান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক খালেদা খাতুন রেখা, বীর মুক্তিযোদ্ধা এএইচএম মুযহারুল ইসলাম মন্টু, আফজাল হোসেন দোদুল, সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন যশোরের আহবায়ক রাশেদ খান প্রমুখ।
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, ১৪ ডিসেম্বর দিনটা অত্যন্ত দুঃখের দিন। এই দিন পাকিস্তানি আর্মিরা নির্বিচারে এদেশের শিক্ষক, ছাত্র, শিল্পী, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষকে হত্যা করে। পাকিস্তানিরা চেয়েছিলো এদেশকে মেধাশূন্য করতে। ১৯৭১ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত যখনই দেশের মানুষের অধিকার ক্ষুণ্ন করা হয়েছে তখনই এদেশের ছাত্র সমাজ প্রতিবাদ গড়ে তুলেছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ নিয়ে দেশ পরিচালনার ব্যত্যয় ঘটার কারণেই ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লব সংগঠিত হয়েছে। এই বিপ্লব জাতিকে আরও একবার পরিশুদ্ধ করার প্রক্রিয়া। ৭১ সালেও এক ধরনের দালাল ছিল। যারা রাজাকার, আলবদর, আলসামস বাহিনী গড়ে তুলে মহল্লায় মহল্লায় গণহত্যা করে। ২৪ সালে শাসন ক্ষমতা ধরে রাখতে ছাত্রদের উপর নির্বিচারে গুলি বর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছে। এটাও বুদ্ধিজীবী হত্যার অংশ।
অনুষ্ঠানের সভাপতি জেলা প্রশাসক মো. আজাহারুল ইসলাম বলেন, বিশ্বের যে জাতি স্বাধীন হয়েছে সবাই রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার জন্য যারা প্রাণ দিয়েছে তাদেরকে যে জাতি সম্মান ও শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে তারা উন্নত জাতি হিসেবে গড়ে উঠেছে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জন করলেও জাতির দ্বিধা বিভক্তি ভুলে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারেনি। আমাদের ভিতরে বৈষম্য কাজ করেছিল। ২০২৪ সালে এসে সেই বৈষম্যের বিরুদ্ধে আবার যুদ্ধ করতে হয়েছে। মহান মুুক্তিযুদ্ধের শহীদদের আত্মত্যাগ তখনই সার্থকতা পাবে যখন আমরা একটা উন্নত জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবো। শহিদ বুদ্ধিজীবী, শহিদ মুক্তিযোদ্ধা ও জুলাই বিপ্লবের শহীদদের চেতনা ধারণ করে তাদের দেখানো পথ অনুসরণ করে আমরা নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ করব।