♦পর্দা টাঙিয়ে ‘উন্মুক্ত’ ইসিজি, সমালোচনার ঝড়
♦দ্রুত নারী স্বাস্থ্যকর্মী সংযোজনের আশ্বাস হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের
♦ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দায় এড়াতে পারেন না : সনাক সভাপতি
কাজী নূর
যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসা নারীদের ইসিজি পরীক্ষার সময় পুরুষ স্বাস্থ্যকর্মীদের উপস্থিতি এবং পদ্ধতি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা ও ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। হাসপাতালের জরুরি বিভাগে পর্দা টাঙিয়ে উন্মুক্তভাবে নারী রোগীদের ইসিজি করে বহিরাগত পুরুষ স্বাস্থ্যকর্মীরা। রোগীর শরীরের কাপড় সরিয়ে পরীক্ষা করার দৃশ্য দেখার পর চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনেরা এই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন।
হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ইসিজি করাতে আসা নারী রোগীদের পরীক্ষা করছেন পুরুষ স্বাস্থ্যকর্মীরা। জরুরি বিভাগের ভেতরেই একটি স্থানে পর্দা টাঙিয়ে তৈরি করা হয়েছে পরীক্ষার ব্যবস্থা। সেখানেই এক নারী রোগীর ইসিজি করছিলেন এক ব্যক্তি। যিনি হাসপাতালের কর্মচারী নন, বরং একজন বহিরাগত কর্মী বলে জানা যায়। অভিযোগ উঠেছে, ওই পুরুষ কর্মী অত্যন্ত অশালীনভাবে নারী রোগীর শরীরের কাপড় সরিয়ে ইসিজি করছিলেন। হাসপাতালটিতে এমন চিত্র নিত্য দিনকার ঘটনা। এমন ঘটনার ভিডিও চিত্র বাংলার ভোর টিমের হাতে এসেছে।
এই ঘটনায় উপস্থিত অন্যান্য রোগী ও তাদের স্বজনেরা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। তাদের অভিযোগ, নারী রোগীর জন্য এমন সংবেদনশীল একটি পরীক্ষা কোনোভাবেই পুরুষ কর্মীর মাধ্যমে করানো উচিত নয়। বিশেষত যেখানে গোপনীয়তা বজায় রাখার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। অনেকে বিষয়টিকে নারীদের প্রতি চরম অবহেলা এবং পেশাদারিত্বের অভাব বলে অভিহিত করেছেন।
রোগী ও স্বজনদের সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি নিয়ে হাসপাতাল প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারাও এই অনভিপ্রেত ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন।
কর্তৃপক্ষ স্বীকার করেছে যে ইসিজি করার জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক নারী স্বাস্থ্যকর্মী বর্তমানে ওই বিভাগে নেই। তবে তারা আশ্বাস দিয়েছেন, খুব দ্রুত নারীদের ইসিজি করানোর জন্য নারী স্বাস্থ্যকর্মীদের সেখানে সংযোজন করা হবে এবং এই ধরনের সংবেদনশীল পরীক্ষার ক্ষেত্রে যাতে নারীদের সর্বোচ্চ গোপনীয়তা ও সুবিধা নিশ্চিত করা যায়, সেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা ধর্মতলা এলাকার নিলু আহমেদ জানান, আমরা হাসপাতালে নারীদের চিকিৎসা সেবা নিতে আসি। এখানে এসে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। নারীদের ইসিজিসহ নানা ধরনের টেস্ট করে পুরুষ স্বাস্থ্যকর্মীরা।
অনেক পরিবার ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলে। অর্থ সংকটের কারণে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ এখানে চিকিৎসা নিতে আসে। সবার কথা চিন্তা করে বিবেচনা করে নারীদের পরীক্ষা নিরিক্ষা নারী স্বাস্থ্যকর্মীদের দিয়ে করানো উচিৎ।
সচেতন নাগরিক কমিটি যশোরের সভাপতি অধ্যক্ষ পাভেল চৌধুরি বলেন, আমরা হাসপাতাল নিয়ে কাজ করি। কিন্তু এ জাতীয় অভিযোগ আগে কখনো শুনিনি। এটি ঘোরতর অন্যায়। এই ধরনের অন্যায় মানা যায়না। একই সাথে এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। বহিরাগতরা এসে সেবা দেবে এটা কেমন কথা। এর সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এর দায় এড়াতে পারেন না।
যশোর জেনারেল হাসপাতালের তত্বাবধায়ক হুসাইন শাফায়াত বলেন, অফিশিয়ালি বলতে গেলে বর্তমানে ইসিজিতে আমাদের পুরুষ স্বাস্থ্যকর্মীর সংকট। নারী রোগীদের গোপনীয়তা রক্ষায় আমরা খুব দ্রুত ইসিজিতে নারীদের জন্য নারী স্বাস্থ্যকর্মী সংযোজন করব।
এদিকে, যশোর জেনারেল হাসপাতালের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি সরকারি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে এমন ঘটনা শুধু স্বাস্থ্যসেবার মান নিয়েই প্রশ্ন তুলছে না, একই সঙ্গে নারী রোগীদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা ও মর্যাদার বিষয়টিকেও প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দ্রুত তাদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করে এই সমস্যার সমাধান করবেন এমনটাই প্রত্যাশা সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষের।
