# অভিযুক্তদের দাবি রোগী ভাগিয়ে নিচ্ছে দালাল চক্র
বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের ক্যাশ কাউন্টার বন্ধ হয় বেলা ১টায়। এরপর কোন সেবার জন্য সরকারিভাবে ফি জমা দেয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু হাতে হাতে নগদ টাকা নিয়ে প্যাথলজি সেবা দিচ্ছে হাসপাতালের একটি চক্র। পরবর্তীতে রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে নগদে নেয়া ফির টাকা ভাগবাটোয়ারা করে নিচ্ছে তারা। এভাবেই চলছে দিনের পর দিন। এদিকে দুপুরের পর প্যাথলজি বিভাগ বন্ধ এ অজুহাতে সরকারি হাসপাতালের রোগীর সিটিস্ক্যান, আল্ট্রাসনো ও এক্স-রে করানোর কথা বলে ভাগিয়ে নিচ্ছে বেসরকারি হাসপাতালের নিয়োগকৃত দালাল চক্র। প্যাথলজি বিভাগের দুষ্ট চক্র ও বেসরকারি ক্লিনিকের দালাল চক্রের খপ্পরে রোগীর স্বজনদের যেমন পকেট কাটা যাচ্ছে, তেমনি ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, অভিযোগের সত্যতা পেলে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, বেলা ১টার পরে সিটিস্ক্যান করাতে হাসপাতালের সেন্ট্রাল ক্যাশ কাউন্টারে গেলে টাকা জমা নেয়া হয়না। কাউন্টার থেকে জানানো হয়, সিটিস্ক্যানের জন্য টাকা জমা দেয়ার সময় শেষ। এরপর তাদেরকে সিটিস্ক্যান রুমে গিয়ে যোগাযোগের পরামর্শ দেয়া হয়। সেখানে রোগী নিয়ে গেলে নগদ টাকার বিনিময়ে সিটিস্ক্যান করা হয়। এ কার্যক্রম রাত ৮টা পর্যন্ত চলে। যা সরকারি কোষাগারে জমা হয় না। হাতে হাতে নেয়া টাকা ভাগবাটোয়ারা করে নেন হাসপাতালের সিটিস্ক্যান সিণ্ডিকেট প্রধান টেকনিশিয়ান মৃত্যুঞ্জয় রায় ও তার সহযোগিরা। তাকে সহযোগিতা করেন এক্স-রে টেকনিশিয়ান রোকন, জরুরি বিভাগের স্বেচ্ছাসেবী খায়রুল, বিভিন্ন ওয়ার্ডে কর্মরত স্বেচ্ছাসেবী অনিমা, হালিমা, বাবু, রোজিনা, সাগর দাস, শাহনাজ ও মোমেনা।
ওয়ার্ড বয়দের সাথে প্রতি দুই হাজার টাকার সিটিস্ক্যানে ২০০ টাকা কমিশন দেয়া হয়। তারা নির্ধারিত সময়ের পর রোগী আনেন সিটিস্ক্যান করাতে। এছাড়া হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগে শহরের দুটি নামকরা বেসরকারি ক্লিনিকের অন্তত চারজন দালাল নিয়োগ দেয়া আছে। তারা সরকারি হাসপাতালে অল্প খরচে সিটিস্ক্যান করতে আসা রোগীদের ভাগিয়ে নিয়ে যান তাদের ক্লিনিকে। তারা মাসিক বেতন ও কমিশনে রোগী ভাগিয়ে নেয়ার কাজ করেন। এই সিণ্ডিকেট সদস্যরা মূলত গ্রাম থেকে আসা সহজ সরল ও কম শিক্ষিত রোগীর স্বজনদের টার্গেট করে। তারা রোগীদের বিনা মেমোতে এবং তুলনামূলক কম খরচে সিটিস্ক্যান করানোর প্রলোভন দেখায়। রাজি হলে ২০০০ টাকার মধ্যে ২০০ টাকা তাদের পকেটে যায়। বাকি এক হাজার ৮০০ টাকা আত্মসাৎ করেন মৃত্যুঞ্জয় রায়ের নেতৃত্বে সিণ্ডিকেটের সদস্যরা। অবৈধ আয়ের একটি অংশ হাসপাতালের উপর মহলসহ প্রভাবশালী কয়েকজন ব্যক্তিকে মাসিক ভিত্তিতে দেয়া হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে। বেলা ১টার পর রোগীর কাছ থেকে হাতে হাতে টাকা নেয়ার প্রমাণ রয়েছে বাংলার ভোরের কাছে। অন্তত ২০ জন রোগীর কাছ থেকে সিটিস্ক্যান বাবদ নগদ টাকা গ্রহণ করেছে সিণ্ডিকেটের সদস্যরা।
অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিতে এ প্রতিবেদক রোগীর স্বজন পরিচয়ে গিয়ে কথা বলে নিশ্চিত হয়েছে। তারা টাকার বিনিময়ে রোগীর সিটিস্ক্যান করিয়ে দিতে রাজি হয়। শুধু সিটিস্ক্যান নয়, একই প্রক্রিয়ায় এক্স-রে ও আল্ট্রাসনোগ্রাফি করে রোগী ও স্বজনদের কাছ থেকে প্রতিদিন মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
অভিযোগ অস্বীকার করে টেকনিশিয়ান মৃত্যুঞ্জয় রায় বলেন, বাইরের ক্লিনিকের দালাল চক্র চায়না হাসপাতালে সিটিস্ক্যান মেশিন চালু থাকুক। তাদের কাছে আমরা জিম্মি। একপ্রকার জোর করে আমাদেরকে মেমো করতে বাধা দেয়া হয়। বিশেষ করে শহরের দুটি প্রভাবশালী ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের দালালরা তাদের কথামত না চললে হুমকি ধামকিও দিয়ে থাকে। তারপরও আমরা সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত বৈকালিক সেবার অংশ হিসেবে সিটিস্ক্যানসহ সকল পরীক্ষা নিরীক্ষা করে থাকি। আর ওই টাকা পরের দিন ক্যাশ কাউন্টারে সঠিকভাবে জমা দিই। এ কারণে ক্ষিপ্ত হওয় ওই দালাল চক্র আমাদের বিরুদ্দে মিথ্যা অভিযোগ দিচ্ছে।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক হুসাইন সাফায়েত বলেন, বিষয়টি আপনাদের মাধ্যমে জানলাম। আমি হাসপাতালে নতুন দায়িত্ব নিয়েছি দেড় মাস মত হচ্ছে। আমরা খোঁজ খবর নিবো। যদি এমন কিছু ঘটে আমরা উর্ধতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবো। সিটিস্ক্যান রুমের ওখানে সিসি ক্যামেরা লাগাতে পারলে ভালো হত। কিন্তু বাজেট না থাকার কারণে পারছি না।