খুলনা প্রতিনিধি
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি না থাকায় খুলনার ছয়টি আসনে নৌকার প্রতিপক্ষ হিসেবে শক্ত কোনো প্রার্থী নেই। আওয়ামী লীগের বিপক্ষে নির্বাচনে স্বতন্ত্র হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন আওয়ামীপন্থী আট নেতা। তাদের অনেকেই আবার ‘ডামি’ প্রার্থী। এছাড়া ‘কিংস পার্টি’ নামে পরিচিতি পাওয়া দলগুলো খুলনার আসনগুলোতে যেসব প্রার্থী দিয়েছে, ভোটারদের কাছে তাদের পরিচিতি নেই তেমন একটা। এমনকি জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক ভিতও শক্তিশালী নয় খুলনা জেলায়।
এ পরিস্থিতিতে খুলনা-৫ (ডুমুরিয়া-ফুলতলা) আসন বাদে অন্য পাঁচটি আসনে নৌকার প্রার্থীরা এগিয়ে আছেন। খুলনা-৫ আসনে নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে শক্ত স্বতন্ত্র হিসেবে মাঠে থাকছেন ফুলতলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। বাকি পাঁচটি আসনে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে কি না, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাধারণ ভোটাররা মনে করছেন, খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মতো এবারও বেশির ভাগ আসনে একতরফা নির্বাচনই হবে। আর ভোটার কেন্দ্রে নিয়ে আসা না-আসা অনেকটা নির্ভর করছে প্রার্থীদের ওপর।
সুশাসনের জন্য নাগরিক খুলনা জেলা সম্পাদক কুদরত-ই-খুদা বলেন, আমাদের দেশের রাজনীতির মূল মন্ত্র হলো ক্ষমতায় যাওয়া ও টিকে থাকা।
খুলনা-১ (দাকোপ-বটিয়াঘাটা) আসনে স্বতন্ত্র হিসেবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব প্রশান্ত কুমার রায় ও খুলনা সিটি করপোরেশনের ২৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা আবেদ আলী শেখ। প্রশান্ত রায় গত কয়েক বছর ধরে এলাকায় মনোনয়নপ্রার্থী হিসেবে পোস্টার দিয়ে যাচ্ছেন, কমবেশি গণসংযোগও চালিয়ে গেছেন। তবে নিজের এলাকার বাইরের মানুষের কাছে তিনি তেমন পরিচিত নন। খুলনা সিটি করপোরেশনের ২৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা আবেদ আলী শেখ মূলত একজন আবাসন ব্যবসায়ী। রাজনীতিক হিসেবে তিনি মানুষের কাছে পরিচিত নন। এই আসনে তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী বাংলাদেশ হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক। হিন্দু জনসংখ্যা-অধ্যুষিত এই আসনে আগে তার তেমন কোনো কর্মকাণ্ড দেখা যায়নি। এখানে মনোনয়ন পাওয়া জাতীয় পার্টি ও জাকের পার্টির প্রার্থীরাও ভোটারদের কাছে তেমন পরিচিত নন।
খুলনা-২ (সদর-সোনাডাঙ্গা) আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই সেখ সালাহউদ্দীন জুয়েল এবারও মনোনয়ন পেয়েছেন। সেখানে স্বতন্ত্র হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন তাঁর একান্ত ব্যক্তিগত সহকারী সাঈদুর রহমান। এই আসনেও সালাহউদ্দীন জুয়েলের কোনো শক্ত প্রতিপক্ষ নেই। আওয়ামী লীগের কয়েক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে সাঈদুরকে ‘ডামি’ প্রার্থী হিসেবে রাখা হয়েছে। জানতে চাইলে খুলনা মহানগর আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সহসভাপতি সাঈদুর রহমান বলেন, ‘নির্বাচন করার জন্যই মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছি। এখন দেখা যাক কী হয়।’
খুলনা-৩ (খালিশপুর-দৌলতপুর-খানজাহান আলী) আসনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন এবার প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন। ওই আসনে নগর আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক শেখ ফারুক হাসান মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেও দাখিল করেননি। ওই আসনের অন্য প্রার্থীরা ভোটারদের কাছে খুব পরিচিত মুখ নন।
খুলনা-৪ (রূপসা-তেরখাদা-দিঘলিয়া) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দাখিল করেছেন নৌকাবঞ্চিত রেজভী আলম ও এসএম মোর্ত্তজা রশিদী। রেজভী আলম বর্তমানে স্পেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। এস এম মোর্ত্তজা রশিদী জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক হুইপ এস এম মোস্তফা রশিদী সুজার ভাই। মোর্ত্তজা সর্বশেষ জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে হেরেছিলেন। রেজভী আলম মূলত নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করার জন্য প্রার্থী হয়েছেন। মোর্ত্তজা রশিদী ভাইয়ের পরিচিতি কাজে লাগাতে চান। তবে নেতা-কর্মীরা বলছেন, নৌকা মার্কার প্রার্থী আব্দুস সালাম মুর্শেদী এখানে এগিয়ে থাকছেন।
খুলনা-৫ (ডুমুরিয়া-ফুলতলা) আসনে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন নৌকাবঞ্চিত শেখ আকরাম হোসেন। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করে স্বতন্ত্র হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তিনি। ওই আসনে নৌকার প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য নারায়ন চন্দ্র চন্দ। আসনটিতে নারায়ন চন্দ্র ও আকরাম হোসেনের মধ্যে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে নেতা-কর্মীরা মনে করছেন। ওই আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী, জাকের পার্টি, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশ কংগ্রেস দল ও ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। এর আগে ওই এলাকায় এসব প্রার্থীর কোনো রাজনৈতিক বা সামাজিক কর্মকাণ্ড ছিল না।
খুলনা-৬ (কয়রা-পাইকগাছা) আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ১২ জন। এর মধ্যে নৌকার প্রার্থী হয়েছেন পাইকগাছা উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মো. রশীদুজ্জামান। পাইকগাছায় তিনি পরিচিত মুখ হলেও কয়রা উপজেলায় একেবারেই অপরিচিত। তবে দলের সব পর্যায়ের নেতা-কর্মী তাঁর সঙ্গে আছেন। ওই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ জি এম মাহবুবুল আলম। তিনি দলীয় মনোনয়ন চেয়েও পাননি। দলের মনোনয়ন পাওয়ার আগে তার পক্ষে অনেক নেতা-কর্মী সক্রিয় ছিলেন। এখন তারা নৌকার পক্ষেই কাজ করছেন। ওই আসনে জাতীয় পার্টির হয়ে নির্বাচন করবেন জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি শফিকুল ইসলাম। অন্য প্রার্থীরা অনেকটাই অপরিচিত মুখ।
জানতে চাইলে স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ জি এম মাহবুবুল আলম বলেন, এবারের নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হতে হবে। আমরা চেষ্টা করব বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের কেন্দ্র নিয়ে আসতে। কেন্দ্রে ভোটার নিয়ে আসা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। চেষ্টা করলে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ভোটার উপস্থিতি সম্ভব।
Subscribe to Updates
শিরোনাম:
- গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে জেকে বসেছে শীত
- পুনশ্চ’র ১৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপিত
- শীতে বাড়ছে রোগীর চাপ নাজুক চিকিৎসা সেবা
- মাগুরায় পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেসি কনফারেন্স অনুষ্ঠিত
- যশোরে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষায় সভা
- সাজা শেষে দেশে ফিরলেন ২ ভারতীয়
- শালিখার চিকিৎসা নিতে আসা অজ্ঞাত বৃদ্ধার মরদেহ উদ্ধার
- বিশ্ব ইজতেমায় হামলার প্রতিবাদে যশোরে বিক্ষোভ