বিবি ডেস্ক
বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা জাতির পিতার বড় মেয়ে ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার পঞ্চমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেয়ার পর ৩৭ সদস্যের মন্ত্রিসভা নিয়ে টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠন করেছেন।
তার মন্ত্রিপরিষদে ২৫ জন মন্ত্রী ও ১১ জন প্রতিমন্ত্রী রয়েছেন।
সন্ধ্যা ৭টা ৬ মিনিটে বঙ্গভবনের দরবার হলে শেখ হাসিনা ও তাঁর নতুন মন্ত্রীদের শপথবাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।
শপথ গ্রহণের পর শেখ হাসিনা শপথ ও গোপনীয়তার শপথে স্বাক্ষর করেন।
শপথ নেয়া মন্ত্রীরা হলেন- আ ক ম মোজাম্মেল হক, ওবায়দুল কাদের, নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, আসাদুজ্জামান খান, ডা. দীপু মনি, তাজুল ইসলাম, মুহাম্মদ ফারুক খান, আবুল হাসান মাহমুদ আলী, আনিসুল হক, ডা. হাসান মাহমুদ, আবদুস শহীদ, সাধন চন্দ্র মজুমদার, র আ ম ওবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, আব্দুর রহমান, নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, আব্দুস সালাম, মহিবুল হাসান চৌধুরী, ফরহাদ হোসেন, ফরিদুল হক খান, জিল্লুল হাকিম, সাবের হোসেন চৌধুরী, জাহাঙ্গীর কবির নানক, নাজমুল হাসান, স্থপতি ইয়াফেস ওসমান ও সামন্ত লাল সেন।
প্রতিমন্ত্রীরা হলেন- সিমিন হোসেন রিমি, নসরুল হামিদ, জুনায়েদ আহমেদ পলক, মোহাম্মদ আলী আরাফাত, মহিববুর রহমান, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, জাহেদ ফারুক, কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, রুমানা আলী, শফিকুর রহমান চৌধুরী ও আহসানুল ইসলাম টিটু।
অফ-হোয়াইট শাড়ি পরা শেখ হাসিনাকে দরবার হলে আত্মবিশ্বাসী ও প্রাণবন্ত দেখাচ্ছিল। প্রশস্ত হলটি আমন্ত্রিত অতিথিদের ভিড় যেন উপচে পড়ছিল।
শেখ হাসিনা সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিটে দরবার হলে প্রবেশ করলে তাঁকে দাঁড়িয়ে অভিবাদন জানানো হয়। কয়েক মিনিট পর রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন দরবার হলে প্রবেশ করেন। প্রধানমন্ত্রী সন্ধ্যা ৭টা ৬ মিনিটে শপথ নেন।
পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়।
শেখ হাসিনা প্রথমে জাতীয় সংবিধান ও রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব রক্ষার শপথ নেন এবং পরে রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা রক্ষার শপথ নেন।
বঙ্গভবনের আলো-ঝলমলে দরবার হলে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের প্রথম সারিতে সরকারপ্রধানের এক পাশে ছিলেন শেখ রেহানা এবং অন্যপাশে রাষ্ট্রপতির স্ত্রী রেবেকা সুলতানা। শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিকও ছিলেন প্রথম সারিতে।
জাতীয় সংসদে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান উপস্থিত ছিলেন শপথ অনুষ্ঠানে।
একাদশ সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের এবং জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদারকে শপথ অনুষ্ঠানে দেখা গেছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ফজলে নূর তাপসও অতিথি সারিতে ছিলেন।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক নেতাদের মধ্যে ভোট জয় পাওয়া ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, ভোটে হেরে যাওয়া জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু এবং সাম্যবাদী দলের সভাপতি দিলীপ বড়ুয়া এসেছিলেন মন্ত্রিসভার শপথ অনুষ্ঠানে।
স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করে ভোটে জয়ী সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, তার ভাই কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকীও এসেছিলেন।
আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মতিয়া চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর চাচা শেখ কবীর হোসেন ও চাচাতো ভাই শেখ হেলাল শপথ অনুষ্ঠানে ছিলেন।
বিদায়ী সরকারের যারা নতুন মন্ত্রিসভায় জায়গা পাননি, তাদের মধ্যে সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, সাবেক প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমেদকে অনুষ্ঠানে দেখা গেছে।
প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা মসিউর রহমান, তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী এবং সালমান এফ রহমানও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস, যুক্তরাজ্যের হাই কমিশনার সারাহ কুক, রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেক্সান্ডার মন্টিটাস্কি, ভারতের রাষ্ট্রদূত প্রণয় ভার্মা, চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন, বিচারপতি, দেশের তিন বাহিনী প্রধান, আইনজীবী, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকসহ আমন্ত্রিত অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন বঙ্গভবনের দরবার হলে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানটি দেখতে প্রায় ১,৪০০ অতিথিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়।
গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগ ‘নৌকা’ প্রতীক নিয়ে ২২২টি আসনে জয়লাভ করে।
জাতীয় পার্টি ১১টি আসনে, স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৬২টি এবং আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিক দল-ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) একটি করে আসন পেয়েছে। নির্বাচনে একটি আসনে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি।
নতুন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গভবন থেকে ফেরার পথে রাজউক এভিনিউ ও বঙ্গবন্ধু এভিনিউ মোড়ে সর্বস্তরের হাজারো মানুষের ঢল নামে।

চীনা প্রেসিডেন্টের অভিনন্দন
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা পুনঃনির্বাচিত হওয়ায় তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লেখা এক চিঠিতে চীনের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, তার দেশের সরকার ও জনগণের পক্ষ থেকে এবং নিজের পক্ষ থেকে ‘আমি আপনাকে আমার উষ্ণ অভিনন্দন ও শুভ কামনা জানাচ্ছি।’
তিনি বলেন, চীন ও বাংলাদেশ দীর্ঘ দিনের প্রতিষ্টিত বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী। তিনি আরো বলেন, ‘কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিগত ৪৯ বছরে আমাদের উভয় দেশই সবসময় একে অপরকে সম্মান করে, একে অপরের সাথে সমান আচরণ করে এবং পারস্পরিক সুবিধা অর্জন এবং উভয়পক্ষ সমানভাবে লাভবান হয়েছে।’

ব্রুনাইয়ের সুলতানের অভিনন্দন
ব্রুনাইয়ের সুলতান হাজি হাসানাল বলকিয়াহ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পুনরায় নিয়োগ পাওয়ায় শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লেখা এক চিঠিতে ব্রুনাইয়ের সুলতান বলেন, আমি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আপনার পুনঃনিযুক্তির জন্য আমার আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি।’

মালদ্বীপের সাবেক প্রেসিডেন্টের অভিনন্দন
মালদ্বীপের সাবেক রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ নাশিদ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জনের মধ্য দিয়ে পুনরায় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ায় শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। গতকাল বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে তিনি এই অভিনন্দন জানান। বৈঠকে দুই নেতা ৭ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করেন।

ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীর অভিনন্দন
ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী অধ্যাপক (ড.) মানিক সাহা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয়ের জন্য তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো এক অভিনন্দন বার্তায় তিনি লিখেছেন, “গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আপনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের বিজয়ের জন্য আমি আপনাকে এবং বাংলাদেশের সকল নাগরিককে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই।”
ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মনে করি এই বিজয় এই উপমহাদেশে শান্তি ও অগ্রগতির পথ প্রশস্ত করবে।’
অভিনন্দন বার্তায় নেতৃবৃন্দ শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের সুস্বাস্থ্য ও সুখ, জনগণের মঙ্গল এবং বাংলাদেশের অব্যাহত অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি কামনা করেন।