প্রতিবেদক, ঝিকরগাছা
আপামর বাঙালির কাছে ফেব্রুয়ারি হলো অমর একুশে, ভাষার মাস। কিন্তু দেশের ফুলের রাজধানীখ্যাত যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার ফুলচাষিদের কাছে এ মাসটির গুরুত্ব অপরিসীম। সারাটাবছর এখানকার চাষিরা চেয়ে থাকেন ফেব্রুয়ারি মাসের দিকে। বছরের এ মাসটিতেই যে বসন্ত উৎসব, বিশ^ ভালোবাসা দিবস আর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।
এই তিন দিবসেই ভালোবাসা আর শ্রদ্ধার বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে ব্যবহৃত হয় ফুল। বছরের মোট বিক্রির ষাটভাগই বিক্রি হয় ফেব্রুয়ারিতে।
বর্তমানে ফুলের রাজধানীখ্যাত যশোরের ঝিকরগাছার গদখালি-পানিসারা-হাড়িয়া অঞ্চলের ফুল চাষিরা বসন্ত বরণ, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে শেষ প্রস্তুতি নিচ্ছেন। নিজেদের ক্ষেতের ফুলগাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। যদিও মৌসুমের কয়েক দিন আগে অনেকের ফুল ক্ষেতেই হানা দিয়েছে পঁচন রোগ। শুকিয়ে যাচ্ছে গাছ ও ফুল। তারপরও ফেব্রুয়ারির এই তিন দিবস ঘিরে জমে উঠেছে গদখালি ফুলবাজার। অন্য সময় থেকে বেশি দামে ফুল বিক্রি হওয়ায় এ সময়ে ফুল গাছের বাড়তি যত্ন নেন কৃষক। সময় যত ঘনিয়ে আসছে পাইকারি বাজারে ফুলের দামও তত বাড়ছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ফুলের দাম বেড়েছে কয়েকগুণ। ফুলচাষের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সামনের এই তিন দিবসে অন্তত ১০০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে।
গতকাল কাঁকডাকা ভোরে চাষিরা বিভিন্ন যানবাহনে করে তাদের উৎপাদিত ফুল নিয়ে আসেন ফুলের পাইকারি বাজারে গদখালিতে। ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁকডাকে সরব হয়ে ওঠে ফুলবাজার। যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের দুধারে বিভিন্ন রকমের ফুলের পসরা সাজিয়ে বসেন কৃষক। কেউ ভ্যান, কেউ সাইকেল, মোটরসাইকেল বা ঝুড়িতে ফুল রেখে ঢাকা ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দামাদামিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। দামে পটলে বিক্রি করে দেন ফুল।
গতকাল বাজারে প্রতিটি গোলাপ বিক্রি হয়েছে ১৪ থেকে ২০ টাকা দরে, যা এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ১০ থেকে ১২ টাকায়। প্রতি পিস রজনীগন্ধা বিক্রি হয়েছে ১০-১২ টাকায়, যা আগে ছিল ৮-১০ টাকা। রঙিন গ্লাডিওলাস প্রতিটি মানভেদে বিক্রি হয়েছে ১২ থেকে ১৬ টাকা, যা আগে ছিল ৮-১০ টাকা। জারবেরা বিক্রি হয়েছে ৮ থেকে ১০ টাকা। এ বছর জারবেরার উৎপাদন বেশি হওয়ায় দাম অপরিবর্তিত আছে বলে জানান চাষিরা।
ফুল বাঁধাইয়ের জন্য কামিনীর পাতা বিক্রি হয়েছে প্রতি আঁটি ২০ টাকায়। জিপসির আঁটি বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকায়। যা আগে ছিল ২০-২৫ টাকায়। মালা গাথার জন্য চন্দ্রমল্লিকা বিক্রি হয়েছে শতকরা ২০০ টাকা। গাঁদা ফুল বিক্রি হয়েছে প্রতি হাজার ২৫০-৩০০ টাকায়, যা আগে ছিল ১০০-১৫০ টাকা। লিলিয়াম প্রতি পিস বিক্রি হয়েছে ১৫০ টাকা। দুদিন আগেও যা ১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
হাড়িয়া নিমতলা গ্রামের চাষি হোসেন ৩০০ গোলাপ এনেছিলেন বিক্রির জন্য। প্রতি ১০০ ফুল তিনি বিক্রি করেন ১৯৫০ টাকায়। তিনি বলেন, দুই বিঘা জমিতে গোলাপ চাষ করেছি, এবছর পঁচন রোগের কারণে উৎপাদন কম। তবে দাম বেশি হওয়ায় ক্ষতি পুষিয়ে যাবে।
টাওরা গ্রামের আমিনুল ৯ কাঠা জমিতে গোলাপ চাষ করেছেন। তিনি বলেন, গত সপ্তাহে ৮-১০ টাকা গোলাপের দাম ছিল। আজ ২০ টাকা পর্যন্ত দাম উঠেছে।
পানিসারা গ্রামের সোহান আড়াই বিঘা জমিতে জারবেরা চাষ করেছেন। তিনি বলেন এবছর ফুলের ভাল দাম পাওয়া যাচ্ছে। ইজতেমার কারণে শুক্রবার একটু দাম কম আছে। জারবেরা ৮-১০ টাকায় বিক্রি করছি। আগামী দুই-তিনদিনে দাম আরও বাড়বে।
ফুল ব্যবসায়ী রনি বলেন, বাজারে গোলাপের খুবই সংকট। ভালবাসা দিবসের আগের বাজারে ২৫ টাকায় ফুল পাওয়াও মুশকিল হয়ে যাবে।
আরেক ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান বলেন, গাঁদা ফুলের দাম একটু কম ছিল তবে এখন দেখছি দাম উঠতে শুরু করেছে। প্রতি হাজার গাঁদা বিক্রি হচ্ছে ২৫০-৩০০ টাকা।
টাওরা গ্রামের ইসলাম বলেন, এ বছর পঁচা রোগের কারণে গোলাপের উৎপাদন কম হয়েছে এজন্য দাম বেশি।
টাওরা গ্রামের চাষি কামাল বলেন, ভালোবাসা দিবসে রজনীগন্ধা ও ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা দিবসে গাঁদা ফুল বিক্রি করবো। এজন্য এখন ফুলের পরিচর্যা করছি। বিশেষ করে, ফুল মান ভালো রাখতে এবং পোকামাকড়ের হাত থেকে রক্ষা করতে ভিটামিন ও কীটনাশক ব্যবহার করছি। আশা করছি, ভালো দামে ফুল বিক্রি করতে পারবো।
ঝিকরগাছা উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, এই অঞ্চলে অন্তত ৬৫০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের ফুলের চাষ হয়। ফুল উৎপাদন, বিপণন, প্রক্রিয়াজাতকরণসহ ফুল সংশ্লিষ্ট কাজে লক্ষাধিক মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে।
১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, পহেলা ফাল্গুন বসন্ত উৎসব ও ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের বাজার সামনে রেখে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছেন ফুল চাষিরা। উৎসব পর্যন্ত গাছে ফুল ধরে রাখতে, পোঁকার আক্রমণ ও পঁচন রোধে তারা বাড়তি পরিচর্যা করছেন।
যশোর ফুল উৎপাদক ও বিপণন সমবায় সমিতির সভাপতি আব্দুর রহিম জানান, সারা বছর ফুল বিক্রি হলেও মূলত বসন্ত বরণ, ভালোবাসা দিবস আর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘিরে বেচাকেনা বেশি হয়। এ মৌসুমে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে বিশেষ করে গোলাপ ফুলের উৎপাদন কম হয়েছে। তবে আসন্ন তিন দিবসকে ঘিরে অন্তত শত কোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে বলে আমরা আশা করছি।
উল্লেখ্য, ফুলের রাজধানী খ্যাত ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালি, নাভারণ ও পানিসারা ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে রয়েছে নানা জাতের ফুল। এই অঞ্চলের কৃষকরা বাণিজ্যিকভাবে চাষ করছেন গোলাপ, জারবেরা, গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা, গাঁদা, লিলিয়াম, জিপসি, চন্দ্রমল্লিকাসহ অন্তত ১১ ধরনের ধরনের ফুল।
শিরোনাম:
- সব রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখবে বাংলাদেশ: প্রধান উপদেষ্টা
- যশোর মটর পার্টস ব্যবসায়ী সমিতির নির্বাচন সংস্কার ও উন্নয়ন পরিষদের পক্ষে ২৭টি মনোনয়নপত্র ক্রয়
- ‘জুলাই বিপ্লবে আহতদের চিকিৎসায় অবহেলা বরদাস্ত করা হবে না’
- পদ্মাসেতু রেল সংযোগ প্রকল্প কোচ সংকটে শিগগিরই চালু হচ্ছে না ট্রেন চলাচল
- শব্দ থিয়েটারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী; যশোরে তিনদিনের নাট্য উৎসব হবে
- অভয়নগরে রবিউল হত্যা ওয়াহিদুলের রিমান্ড মঞ্জুর
- যশোর চেম্বার অব কমার্স সভাপতি মিজান খান ও সম্পাদক সোহান নির্বাচিত
- কেশবপুরে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের কুরআন ধরানো অনুষ্ঠান ও পরিচিত সভা