ভি পি ইলিয়াস, ঝিকরগাছা
বন্দনা করেই অসচ্ছল সংসারে সন্তানদের সুশিক্ষিত করে গড়ে তুলতেই যেন জন্ম-বিয়ে এবং মা হয়ে এই ধরাধমে এসেছিলেন বন্ধনা রায়।
যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার কৃষ্ণনগর গ্রামে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন বন্দনা রায় (৫২)। তার বাবার বাড়ি সাতক্ষীরা জেলার ঝাউডাঙ্গা গ্রামে। অভাবের সংসারে তার বাবা পড়াশোনাকালেই বন্দনা রায়ের দিয়ে দেন। স্বামী নিশিকান্তের অভাবের সংসারে এসে ঘর বাঁধেন। নিশিকান্ত ছিলেন একজন দরিদ্র মিষ্টি বিক্রেতা। যার হোটেলের নাম ছিল ‘নিশির হোটেল’।
অভাবের সংসারে মিষ্টি বিক্রেতা স্বামী নিশিকান্তের সাথে বন্দনা রায় মিষ্টি তৈরি করতেন। এভাবে চলতে থাকে তাদের দারিদ্রতার সাথে জীবন যুদ্ধের লড়াই। এরই মাঝে সংসারে জন্ম নেয় ৩ কন্যা সন্তান লিপিকা রায়, সাগরিকা রায় এবং ইতিকা রায়। স্বামী সংসার মেয়েদের নিয়ে বেশ কিছু বছর অতিবাহিতের পর বড় মেয়ের বিয়ে দেন। মেয়ের বিয়ের ১ বছরের মাথায় নিশিকান্ত হঠাৎ করেই মারা যান। বন্দনা রায়ের মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। এত দুঃখের মাঝেও সুখের চিন্তা মেয়ে সাগরিকা রায়ের মেডিকেল কলেজে সুযোগ পেয়েছে। এখন তার ভর্তির টাকা জোগাড় করতে হবে। কি করবেন বন্দনা রায়? আবার স্বামীর শ্রাদ্ধের সৎ কার্য শেষ করতে হবে। গচ্ছিত কোন অর্থ নেই তার হাতে। ধার দেনা করে স্বামীর শ্রাদ্ধের সৎকার্য শেষ করেন এবং মেয়ের মেডিকেল কলেজে ভর্তির ব্যবস্থা করেন। স্বামী মারা যাওয়ার পর বন্দনা রায়কে শ্বশুরবাড়ি থেকে বের করে দেয়ার ষড়যন্ত্র চলে। সবকিছুর বাঁধার মোকাবেলা করেই বন্দনা রায় তার সন্তানদেরকে লেখাপড়া করিয়ে সুপাত্রে পাত্রস্থ করেন। বর্তমানে বন্দনা রায়ের বড় মেয়ে মাস্টার্স পাশ করে একজন সফল উদ্যোক্তা, দ্বিতীয় মেয়ে ডাক্তার সাগরিকা রায় পিরোজপুর জেলার সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার এবং ছোট মেয়ে ইতিকা রায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফার্মাসিস্ট হিসেবে পড়াশোনা শেষ করেছেন।
এখন বন্দনা রায় সৃষ্টিকর্তার কাছে বন্দনা করে সকল দায় দেনা পরিশোধ করেছেন। একজন সফল মা হিসেবে বন্দনা রায় নিজের স্বামীর হোটেলটি পরিচালনার পাশাপাশি কিছু কর্মচারী নিয়োগ দিয়েছেন। অভাবের সংসারে এখন আর নেই অভাব।
মেয়েদেরকে সুপাত্রে পাত্রস্থ করে মা তার দায়িত্ব শেষ করেছেন। বন্দনা রায় একজন গর্বিত মা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরে আছেন আত্মতৃপ্তিতে। এমন মায়েদের জন্যই আজকের এই মা দিবস-এর সৃষ্টি। মা দিবসের সফলতা।