শরিফুল ইসলাম
বর্ষবিদায় ২০২৫ কেবল একটি ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টে যাওয়ার ক্ষণ নয়-এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক গভীর শূন্যতার ঘোষণাও বটে। এই বিদায়ী বছরের সঙ্গে সঙ্গে বিদায় নিলেন বেগম খালেদা জিয়া-একজন রাজনীতিক নন শুধু, বরং এক দীর্ঘ সংগ্রামের প্রতীক, এক আপোষহীন অবস্থানের নাম।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘আপোষহীনতা’ শব্দটি যতটা উচ্চারিত হয়েছে,  কিন্তু বেগম খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে এই শব্দটি কেবল রাজনৈতিক স্লোগান নয়, বরং তাঁর জীবনচর্চার প্রতিচ্ছবি। ক্ষমতায় থাকা কিংবা না-থাকা-দুই অবস্থাতেই তিনি নিজের অবস্থান থেকে সরে আসেননি। সময়ের সঙ্গে বদলে যাওয়া রাজনৈতিক সুবিধাবাদের ভিড়ে তাঁর এই দৃঢ়তা অনেকের কাছে অনমনীয় মনে হলেও, অনুসারীদের চোখে ছিল সাহসী ও অনড় নেতৃত্বের উদাহরণ।

তিনি এমন এক সময় রাজনীতিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন, যখন রাষ্ট্রক্ষমতা মানেই ছিল কঠিন সিদ্ধান্ত, চাপ ও আপসের প্রলোভন। সেই প্রেক্ষাপটে তাঁর নেতৃত্ব একদিকে যেমন প্রশংসিত, অন্যদিকে সমালোচিতও হয়েছে। কিন্তু ইতিহাসের নিরপেক্ষ বিচারে এটুকু অস্বীকার করার উপায় নেই, বেগম খালেদা জিয়া ছিলেন এমন একজন নেতা, যিনি নিজেকে রাজনীতির কেন্দ্রেই রেখে গেছেন, কখনো প্রান্তে সরে যাননি।

বর্ষবিদায়ের এই সন্ধিক্ষণে তাঁর প্রস্থান আমাদের নতুন করে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করায়, আজকের রাজনীতিতে কি এমন আপোষহীন নেতৃত্বের জায়গা আছে? নাকি সময়ের সঙ্গে রাজনীতি নিজেই হয়ে উঠেছে সুবিধা ও সমঝোতার খেলা? খালেদা জিয়ার জীবন আমাদের মনে করিয়ে দেয়, রাজনীতি কেবল ক্ষমতার অঙ্ক নয়, এটি বিশ্বাস ও অবস্থানেরও বিষয়।

তিনি হয়তো সবার কাছে নিখুঁত ছিলেন না, কোনো রাজনীতিকই হন না। কিন্তু তিনি ছিলেন স্পষ্ট। তাঁর ‘হ্যাঁ’ ছিল হ্যাঁ, ‘না’ ছিল না। এই স্পষ্টতাই তাঁকে আলাদা করেছে, ইতিহাসে স্থায়ী করেছে।

বর্ষবিদায় ২০২৫ তাই কেবল একটি বছরকে বিদায় জানায় না; এটি বিদায় জানায় এক যুগের, এক রাজনৈতিক মহিরুহ, এক দৃঢ় উচ্চারণের। বেগম খালেদা জিয়া নেই, কিন্তু তাঁর রেখে যাওয়া প্রশ্ন, বিতর্ক আর অবস্থান বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন প্রতিধ্বনিত হতে থাকবে।

Share.
Exit mobile version