চুয়াডাঙ্গা সংবাদদাতা
চুয়াডাঙ্গার দর্শনা সীমান্ত দিয়ে নারী, পুরুষ, বৃদ্ধা ও শিশুসহ একই পরিবারের ১৪ জন ভারতীয় নাগরিককে বাংলাদেশি হিসেবে চিহ্নিত করে জোরপূর্বক বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)-এর বিরুদ্ধে। শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) রাতে এ ঘটনা ঘটে। বর্তমানে ওই ১৪ জন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-এর তত্ত্বাবধানে রয়েছেন।
স্থানীয় ও ভুক্তভোগী সূত্র জানায়, শুক্রবার দিবাগত রাতে ঘন কুয়াশার সুযোগ নিয়ে দর্শনা নিমতলা সীমান্ত গেটসংলগ্ন একটি পয়েন্ট দিয়ে তাদের অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করানো হয়। ভুক্তভোগীরা সবাই একই পরিবারের সদস্য।
তাদের দাবি, তারা ভারতের উড়িষ্যা (ওডিশা) রাজ্যের জগৎসিংহপুর জেলার স্থায়ী বাসিন্দা। মুসলিম হওয়ায় ভারতীয় পুলিশ ও বিএসএফ তাদের নিজ দেশ থেকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন তারা।
ভুক্তভোগীরা জানান, জন্মসূত্রে তারা ভারতীয় নাগরিক। তাদের কাছে আধার কার্ড ও রেশন কার্ড থাকলেও সেগুলো ভারতীয় পুলিশ জোরপূর্বক নিয়ে নেয়।
বাংলাদেশে প্রবেশের পর তারা দর্শনা সীমান্ত এলাকায় দিশেহারা অবস্থায় ঘোরাফেরা করতে থাকেন। পরে দর্শনা শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবস্থান নিলে স্থানীয়দের নজরে আসে বিষয়টি। মানবিক বিবেচনায় স্থানীয়রা অস্থায়ীভাবে থাকার ব্যবস্থা করেন এবং খাবার ও শীতবস্ত্র দিয়ে সহায়তা করেন।
ঘটনার খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষিত হয়। পরে দর্শনা থানা পুলিশ ও চুয়াডাঙ্গা-৬ বিজিবির সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই ১৪ জনকে নিজেদের হেফাজতে নেন এবং তাদের পরিচয় ও নাগরিকত্ব যাচাই শুরু করেন।
১৪ ভারতীয় নাগরিকরা হলেন- গুলশান বিবি (৯০), শেখ জব্বার (৭০), আলকুম বিবি (৬৫), শেখ উকিল (৪০), সাবেরা বিবি (৩৫), শাকিলা খাতুন (১১), শেখ হাকিম (৪৫), সামসেরি বিবি (৪০), শেখ রাজা (৩০), মেহেরুন বিবি (২৫), নাসরিন পারভিন (১২), শেখ তৌহিদ (১১), শেখ রহিদ (২) ও শেখ বান্টি (২৮)।
চুয়াডাঙ্গা-৬ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. নাজমুল হাসান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশকারী ব্যক্তিদের পরিচয় ও নাগরিকত্ব যাচাই-বাছাই কার্যক্রম চলমান রয়েছে। প্রাথমিকভাবে তাদের কাছে কোনো পাসপোর্ট, আধার কার্ড বা বৈধ পরিচয়পত্র পাওয়া যায়নি।
তিনি আরও বলেন, বিষয়টি নিশ্চিত করতে বিএসএফসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। মানবিক বিবেচনায় তাদের খাবার, শীতবস্ত্র ও প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। যাচাই-বাছাই শেষে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
