বাংলার ভোর ডেস্ক
বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে যে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ভারতে পৌঁছেছেন, তাদের নাগরিকত্ব দিতে ভারতীয় পার্লামেন্ট আইন পাস করেছে চার বছরেরও বেশি আগে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেই নাগরিকত্ব আইনের বাস্তবায়ন শুরু করা যায়নি। অবশেষে ভারত সরকার নতুন একটি পোর্টাল চালু করে সেই প্রক্রিয়ার সূচনা করতে চলেছে।
বাংলাদেশের অনলাইন গণমাধ্যম বাংলা ট্রিবিউনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে ভারতের আসন্ন সাধারণ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হওয়ার কথা। তার আগেই পুরোদমে এই পোর্টাল বা ওয়েবসাইটটি চালু হয়ে যাবে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে ‘আদর্শ আচরণবিধি’ও (মডেল কোড অব কনডাক্ট) চালু হয়ে যায়। তখন এ ধরনের পদক্ষেপ নিলে তা আচরণবিধির লঙ্ঘন বলে গণ্য হবে। কাজেই তার আগেই বেশ তাড়াহুড়ো করে এই পোর্টালটির কাজ শেষ করা হচ্ছে।
এই পোর্টালটি প্রস্তুত করা হয়েছে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে। এটি তাদের অধীনেই থাকবে। এই মুহূর্তে সেটিতে ‘ড্রাই রান’ চালানো হচ্ছে, অর্থাৎ নমুনা তথ্য ভরে দেখা হচ্ছে এই ওয়েবসাইটে কোনও টেকনিক্যাল সমস্যা আছে কিনা। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই এটিকে উন্মুক্ত করে দেওয়ার পরিকল্পনা আছে।
ধরা যাক, বাংলাদেশ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে ভারতে পৌঁছানো কোনও হিন্দু ভারতের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে চান। এই পোর্টালটি চালু হলে তখন তাকে সেখানে নিজের নাম-পরিচয় দিয়ে নথিভুক্ত করাতে হবে। এই রেজিস্ট্রি করানোর মাধ্যমেই তিনি নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন। দিল্লিতে সরকারি কর্মকর্তারা বারবার জোর দিয়ে বলছেন, নাগরিকত্বের আবেদন করার জন্য কোনও ডকুমেন্ট বা নথিপত্র আপলোড করতে হবে না। তবে ঠিক কোন কাগজপত্রের ভিত্তিতে একজন নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করবেন, তা নিয়ে এখনও বেশ অস্পষ্টতা আছে। কোনও কোনও কর্মকর্তা বলছেন, বাংলাদেশ থেকে আসা একজন হিন্দু বা আফগানিস্তান থেকে আসা একজন শিখ যদি এটা দে
খাতে পারেন তিনি ২০১৪ সালের মধ্যেই ভারতে চলে এসেছেন, তাহলে তার আবেদন ‘প্রসেস’ করা অবশ্যই সহজ হবে।
পার্লামেন্টে একটা আইন পাস হওয়ার পর সেটা বাস্তবায়ন করতে গেলে তার ‘রুলস’ বা নিয়মাবলি ফ্রেম (প্রণয়ন) করতে হয়, যেটা নাগরিকত্ব আইনের ক্ষেত্রে এখনও করা যায়নি। ইতোমধ্যে আইনটি যাতে বাতিল না হয়ে যায়, তার জন্য পার্লামেন্টে বারবার এটির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু এখন ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণার আগেই আইনটি কার্যকর করার জন্য নরেন্দ্র মোদি সরকার মরিয়া। আর সেই আইনের নিয়মাবলির অংশ হিসেবেই এই পোর্টালটি চালু করা হচ্ছে।
কোভিড মহামারি শুরুর আগে নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে ভারতে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ
প্রসঙ্গত, ভারতের পার্লামেন্টে এই নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) পাস হয়েছিল ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে। এর প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে সিএএ’র বিরুদ্ধে তীব্র বিক্ষোভও শুরু হয়ে যায়। অভিযোগ ছিল, মুসলিমদের এই আইনের পরিধির বাইরে রেখে সরকার নাগরিকত্বের ইস্যুতে ধর্মের ভিত্তিতে বঞ্চনা করছে। সরকার অবশ্য সেই বিক্ষোভ বেশ শক্ত হাতেই দমন করে। এর কিছু দিনের মধ্যেই কোভিড লকডাউন শুরু হয়ে যাওয়ায় সেই বিতর্ক তখনকার মতো থিতিয়ে যায়। কিন্তু আজ পর্যন্ত সেই আইনের বাস্তবায়ন শুরু করা যায়নি, বাস্তবতা এটাও।
তবে বাংলাদেশ থেকে আসা হিন্দুদের প্রতি মোদি সরকারের সহানুভূতির কোনও অভাব কখনোই ছিল না বলে দাবি করছেন শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তা।
দিল্লিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র যেমন জানাচ্ছেন, ‘বাংলাদেশ-সহ প্রতিবেশী তিনটি দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা ভারতে আশ্রয় নিতে এলে যাতে লং-টার্ম ভিসা পেতে পারেন, সেই অধিকার আমরা জেলা প্রশাসনকেই দিয়ে দিয়েছি। মানে তাদের এ জন্য দিল্লি ছুটতে হবে না, কাছাকাছি জেলা-শহর থেকেই তারা সেই ভিসা পেয়ে যাবেন।’
‘তাছাড়া ভারতের অন্তত ৩০টি জেলার ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট (জেলা শাসক) ও নয়টি রাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিবদেরও এই ধরনের আবেদনকারীদের ক্ষেত্রে ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়ার অধিকার দেওয়া হয়েছে। ফলে এই আইনের রুলস এখনও ফ্রেম না-করা গেলেও নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রক্রিয়া কিন্তু থেমে নেই’, বলছিলেন ওই কর্মকর্তা।
বস্তুত ১ এপ্রিল ২০২১ থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০২১ মাত্র এই ৯ মাসের মধ্যেই বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে আসা অন্তত ১৪১৪ জনকে ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছে বলে সরকারি পরিসংখ্যানেই জানানো হয়েছে।
এখন আগামী কয়েক দিনের মধ্যে নতুন পোর্টাল চালু হয়ে গেলে সারা ভারতেই সেই সুবিধা সম্প্রসারিত হবে এবং ভারতে আশ্রয় নেওয়া এই বিদেশিরা দেশের যে প্রান্তেই থাকুন না-কেন, সেখান থেকে নাগরিকত্বের আবেদন করতে পারবেন। বিশেষ করে মতুয়া সম্প্রদায়ের হিন্দুরা, যাদের অনেকেই বাংলাদেশ থেকে এসেছেন, তারা এতে লাভবান হবে বলে মোদি সরকার দাবি করছে।