লক্ষ্মণ চন্দ্র মন্ডল, বাঘারপাড়া
বর্তমান গ্রামীণ অর্থনীতির মুল চালিকা শক্তি হচ্ছে গবাদিপশু পালন। বাঘারপাড়ার গ্রামাঞ্চলে এখন সাধারণত: কৃষক মহলে বড়লোক বা স্বামলব¥ী হওয়ার প্রধান অবলম্বন হয়ে দাঁড়িয়েছে গবাদিপশু পালন করা। গরু, ছাগল কিংবা ভেড়া সবই বর্তমান গ্রামীণ অর্থনীতির চালিকা শক্তি।
গরু, ছাগল, ভেড়া, হাসঁমুরগী বা কবুতর পালন করে টিকে আছে গ্রামীণ জীবন। গ্রামাঞ্চলে কৃষিকাজের পাশাপাশি গবাদিপশু পালনে ঝুঁকছে মধ্যবিত্তরাও। সামর্থের বাইরে থাকলে কেউ ব্যাংক থেকে আবার কেউ বেসরকারি সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে দুই-চারটি গরু বা ছাগল কিনে শুরু করছেন পশুপালনের কাজ। বাড়ির আঙিনায় ঘর তৈরি করেই গড়ছেন ছোট বড় খামার। পাশাপাশি নিকটবর্তী জমিতে শুরু করছেন ঘাস রোপণের কাজ। ফলে বাজারজাত গোখাদ্যের মূল্য বৃদ্ধি পেলেও খুব প্রভাব পড়ছে না খামারিদের উপর। এছাড়া গরু ছাগলের ঘাস এখন স্বল্পমূল্যে পাওয়া যায় স্বানীয় বাজারে। অনেকে খামারের পশু বিক্রির টাকা দিয়ে ছেলেদেরকে প্রবাসে পাঠাচ্ছেন। বর্তমান এমন কোন গ্রাম নেই যে বিদেশে নেই কেউ। কোন কোন গ্রামে ২০/৫০ জন প্রবাসী লোক রয়েছেন। প্রবাসীদের পাঠানো টাকায় তার আবিভাবকেরা গ্রামঘাটে জায়গা জমি কেনার পাশাপাশি নির্মাণ করছেন বহুতল বিশিষ্ট পাঁকা বাড়িঘর।
বাঘারপাড়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর থেকে দেয়া এক পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায় উপজেলায় বর্তমানে গাভীর খামার রয়েছে ২৩০টি, মোটাতাজাকরণ খামার ৩২৫টি, ছাগলের থামার ১১৫টি, ভেড়ার খামার ৫টি। এক পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায় উপজেলায় বর্তমানে গাভীর সংখ্যা ১১৮২৬৭টি, মোট গরু ২২৯২০০টি, দেশী গরু ৪৫৮৪০টি, শংকরজাতের গরু ১৮৩৩৬০টি, গাভী ১১৮২৬৭টি, দেশী গাভী ২২৯২০টি, শংকরজাতের গাভী ৯৫৩৪৭টি, সক্ষম গাভী ১১২৩৫৪টি, দেশী এঁড়ে গরু ৯৬২৭টি, শংকর এঁড়ে গরু ৫২৮০৮টি, মহিষ ৩৮টি, ছাগল ৮৪১৭৮টি, ভেড়া ২৭০টি, ঘোড়া ৫৫টি, দেশী বকনা গরু ১৩২৯৩টি ও শংকর বকনা গরু৩৫২০৫টি।
পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যায় ৪/৫ বছর পূর্বে বাঘারপাড়ায় যত খামার ছিল বর্তমানে তা দ্বিগুণ হয়েছে। এছাড়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের ছোট ছোট খামারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় গরুর গোয়ালটা তাদের কাছে বিপদে আপদে ব্যাংকের মত কাজ করে। অনেকে বলেন-কৃষিকাজ এবং গরুর উপর নির্ভর করেই মূলত: তাদের সংসার চলে। এছাড়া যখন অর্থের প্রয়োজন হয় তখনই গরু বিক্রি করে টাকা বের করে সে কাজ সমাধান করে থাকেন। এছাড়াও কয়েকজন খামারির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে খামারে থাকা গরু বিক্রি করে অনেকে ছেলে সন্তানদের প্রবাসেও পাঠাচ্ছেন। অনেকে আবার মাঠান জায়গা জমিও কিনছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের কাছে পশু পালন করা একদিকে যেমন সম্মানের অপরদিকে অর্থের যোগানও বটে। তাই পশু পালনের দিকে অনেকেই ঝুকঁছেন।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বলেন গ্রামীণ অর্থনীতি মূলতঃ অনেকটাই পশুপালনের উপর নির্ভরশীল। তাই যেসব খামারিরা গশুপালন করে নিজেদের স্বাবলম্বী করার পাশাপাশি অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখার চেষ্টা করছে তাদেরকে আমাদের দপ্তর থেকে যথাসম্ভব প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ প্রদান করা হয়ে থাকে। এ কারনেই বাঘারপাড়া উপজেলায় বর্তমানে খামারির সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে বলেও তিনি জানান।