বাংলার ভোর প্রতিবেদক
চলমান উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের চেয়ে গতকাল অনুষ্ঠিত তৃতীয় ধাপে নির্বাচনে যশোরের বাঘারপাড়া ও অভয়নগরে ভোটারের উপস্থিতি ছিলো চোখে পড়ার মতো। বিশেষ করে নারী ভোটারদের উপস্থিতি বেশি। যদিও নারীদের ভোট দেয়ার গতি বেশ ধীর। আঙুলের ছাপ মেলাতেও সময় বেশি লেগেছে। এসব কারণে ভোট গ্রহণের শেষ সময় চারটা থাকলেও অনেক কেন্দ্রেই পাঁচটা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ চলেছে।
এ ধাপে যশোরের বাঘারপাড়া ও অভয়নগর উপজেলায় প্রথমবারের মতো ইভিএম মেশিনে ভোট দেয় উপজেলা দুটির ভোটাররা। দুই উপজেলায় চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ২২জন প্রার্থী। এর মধ্যে বাঘারপাড়া উপজেলা নির্বাচনে ১৭জন ও অভয়নগর উপজেলায় ৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ১৫১টি কেন্দ্রে সকাল ৮টা থেকে বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহন চলে বিকাল চারটা পর্যন্ত।
বুধবার বেলা ১০ টার দিকে বাঘারপাড়া উপজেলার খাজুরা ইসলামিয়া মাদরাসা কেন্দ্রে যেয়ে দেখা গেছে নারী ভোটারদের দীর্ঘ লাইন। মাঠে রোদ থাকাতে সবাই কেন্দ্রটির মাদরাসার বারান্দায় অবস্থান করছেন। এই কেন্দ্রে নারী পুরুষ মিলে তিন হাজার ৫৩৭ ভোটার। ভোট শুরুর দুই ঘন্টায় ৩২০ ভোট পড়েছে। কেন্দ্রটির চার নম্বার কক্ষে দেখা গেছে, গোপন কক্ষে এক নারী ভোট দিচ্ছেন। ওই নারী ইভিএম মেশিনে ভোট ঠিকমতো দিতে না পারার কারণে দূর থেকে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ভোট দেয়ার নিয়ম শিখিয়ে দেন।
সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার নুর নাহার বলেন, গোপন কক্ষে প্রবেশ করার আগে ভোটারদের কিভাবে ভোট দিতে হবে; সেটা বুঝিয়ে দিচ্ছি। কিন্তু গোপন কক্ষে গেলে নারীরা গুলিয়ে ফেলছেন।’
এই কেন্দ্রে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা সত্যজিত হালদার বলেন, কেন্দ্রে নারী ভোটারের উপস্থিতি সকাল থেকেই অনেক বেশি। তবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট দিতে নারীদের বেগ পেতে হচ্ছে। বয়স্ক নারীদের আঙুলের ছাপ পেতে সমস্যা হচ্ছে। ফলে সময় লাগছে বেশি।’
তেলীধান্যপুড়া গ্রাম থেকে সাদিয়া খাতুন নামে এক ভোটার বলেন, ‘এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। খুব আস্তে আস্তে লাইন আগাচ্ছে। আনসাররা বলছে, আরও নাকি ঘণ্টা দাঁড়ায় থাকা লাগবে। ইভিএমে ভোট দিতে এতো দেরি লাগে কেন। শুনেছি টিপ দিলেই ভোট হয়ে যায়। কিন্তু আমাদের লাইনে এতো দেরি হচ্ছে কেন।’
উপজেলার বর্ণময় বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে প্রথম ৩০ মিনিটে ১৭টি ভোট পড়ে। সকাল থেকে কমসংখ্যক ভোটার উপস্থিতি দেখা গেছে। কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার মোহাম্মদ আল-আমিন বলেন, ‘বর্ণময় বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে মোট ভোটার ২ হাজার ৮৩৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ এক হাজার ৩৩৬ এবং নারী ১ হাজার ৪৯৯।
ভোট চলাকালে আঙুলের ছাপ না মেলায় শরিফুল ইসলাম নামে একজন ভোটার ভোট দিতে পারেননি। তিনি জানান, পোলিং অফিসাররা তাকে বলেছেন বাড়ি থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) আনতে। শরিফুল বাঘারপাড়া পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মহিরন এলাকার বাসিন্দা।
দরাজহাট ইউনিয়নের রোস্তমপুর দাদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রিজাইডিং অফিসার ডা. শামসীর আরেফিন বলেন, কেন্দ্রটিতে নারী পুরুষ মিলে ২৮৩৩ ভোটার। ভোটার উপস্থিতি থাকলেও ভোট প্রদানে অজ্ঞতার কারণে ভোটারদের ভোট দিতে ধীরগতি হচ্ছে। কারও কারও আঙ্গুলে চাপ মিলতে সমস্যা হলে পরবর্তীতে ভোট দিয়ে তারা চলে যাচ্ছেন। বাঘারপাড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৬, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৭ ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪ জনসহ মোট ১৭ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে।
ইভিএমে বিড়ম্বনা অভয়নগরবাসীর
অভয়নগর উপজেলাতে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন ইভিএমে ভোট দিয়েছে ভোটাররা। তবে এই সিস্টেমে খুব কম ভোটারই ভোট প্রয়োগ সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। অনেকের আঙ্গুলের ছাপ মেলাতে দীর্ঘ সময় ধরে চেষ্টা চালাতে হয়েছে। সকাল থেকে অভয়নগর উপজেলা থেকে শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণের পাওয়া গেলেও ভোটকেন্দ্রগুলোতে প্রথম দুই ঘন্টায় ভোটার উপস্থিতি খুবই কম দেখা গেছে। অভয়নগরের নওয়াপাড়া শংকরপাশা মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার মো. উবায়দুজ্জামান জানান, এই কেন্দ্রে মোট ভোটার ৩২২৮ জন। সকাল ১০টা পর্যন্ত অর্থাৎ প্রথম দুই ঘন্টায় এ কেন্দ্রে ২৯০ জন ভোটার ভোট দিয়েছেন বলে তিনি জানান।
এ সময় ওই কেন্দ্রে কয়েকজন ভোটার অভিযোগ করেন ইভিএমের কারণে তাদের ভোট দিতে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। শফিয়ার রহমান নামে একজন ভোটার বলেন, সকালে প্রথমে তিনি ওই কেন্দ্রে ভোট দিতে ঢুকে দিতে গিয়ে পরপর তিনবার আঙ্গুলের ছাপ দেয়ার পরও তার আঙ্গুলের ছাপ না মেলায় ভোট দিতে পারেননি। পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন আরেকজন ভোটার তিনি বলেন, ৫ম বার গিয়ে তার আঙ্গুলের ছাপ মেলার পর তিনি ভোট দিতে সক্ষম হয়েছেন। প্রায় কেন্দ্রেই এই বিড়ম্বনায় পড়েন বলে ভোটাররা জানান।