বাংলার ভোর প্রতিবেদক
বাসে অগ্নিসংযোগ, ককটেল উদ্ধার, নাশকতা কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনায় জড়িত সন্দেহে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের আটকসহ নানা ঘটনায় যশোরে লকডাউনের প্রথম দিন শেষ হয়েছে। কার্যক্রম নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের বৃহস্পতিবারের কর্মসূচিকে ঘিরে যশোরের জনজীবন স্বাভাবিক থাকলেও কয়েকটি ঘটনায় আতংক ছড়িয়ে পড়ে শহরবাসীর মনে। তবে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে মোড়ে মোড়ে অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে অবস্থান করতে দেখা গেছে বিভিন্ন রা নৈতিক দলের নেতাকর্মীদের।
বাসে অগ্নিসংযোগ, ককটেল উদ্ধার, নাশকতা কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনায় জড়িত সন্দেহে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের আটকসহ নানা ঘটনায় যশোরে লকডাউনের প্রথম দিন শেষ হয়েছে। কার্যক্রম নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের বৃহস্পতিবারের কর্মসূচিকে ঘিরে যশোরের জনজীবন স্বাভাবিক থাকলেও কয়েকটি ঘটনায় আতংক ছড়িয়ে পড়ে শহরবাসীর মনে। তবে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে মোড়ে মোড়ে অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে অবস্থান করতে দেখা গেছে বিভিন্ন রা নৈতিক দলের নেতাকর্মীদের।
বৃহস্পতিবার ভোরে যশোর নতুন উপশহর পার্ক সংলগ্ন এলাকায় পার্কিং করে রাখা একটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এতে বাসের ভেতরের অংশ পুড়ে গেলেও ইঞ্জিন অক্ষত রয়েছে। আর বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেয়েছেন পাশে থাকা বস্তির লোকজন। স্থানীয়রা জানান, ফজরের নামাজের পর হঠাৎ বাসের ভেতরে আগুন দেখতে পান তারা। কাছে গিয়ে দেখা যায়, ভেতরে কেউ নেই, তবে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। সঙ্গে সঙ্গে পাশের লোকজন ছুটে এসে প্রায় ২০ মিনিটের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। বাসটির সুপারভাইজার মাগুরা শ্রীপুরের হান্নান খান জানান, তাদের বাসটি (মাগুরা জ-১১-০০০৭) যশোর-মাগুরা রোডে নিয়মিত চলাচল করে। প্রতিদিনের মতো রাতেও বাসটি উপশহর এলাকায় পার্কিং করে রাখা হয়।
এদিন বিকেলে শহরের আর এন রোড এলাকায় হা মিম মটর পার্টসের দোকানে থেকে একটি ককটেল উদ্ধার করেছে পুলিশ। মটর পার্টসের দোকানে হঠাৎ ককটেল উদ্ধারের খবরে আরএন রোডের পার্টসের দোকানগুলোতে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। যশোর কোতোয়ালি থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) কাজী বাবুল জানান, ‘৯৯৯ নাম্বারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি কল করে জানান, ‘হা মিম মটর’ পার্টসের দোকানে ককটেল রয়েছে। সেই কলের সূত্র ধরে পুলিশ দোকানটিতে অভিযানে যায়, দোকান তল্লাশি করে দেখা যায় লাল টেপ সাদৃশ্য একটি ককটেল রয়েছে। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে দোকান মালিক ও কর্মচারী পালিয়ে যায়। এই ঘটনার সঙ্গে দোকানদার বা কর্মচারীরা জড়িত থাকতে পারে।’
এছাড়া আওয়ামী লীগের কর্মসূচিকে ঘিরে সদর উপজেলার সুলতানপুর বাবুপাড়া গ্রামে গোপনে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্য দলের নেতাকর্মীদের একত্রিত করছিলেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ প্রচার সম্পাদক তিতাস উদ্দিন। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযানে তাকে আটক করে পুলিশ। নেতাকর্মীদের উস্কানিমূলক বার্তা দেয়াতে সদরের রামনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোসলেম উদ্দিনকে (৫৩) আটক করে ডিবি পুলিশ। পরে এদিন বিকেলে তাদের দুজনকে নাশকতা মামলায় আদালতে পাঠালে বিচারক তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এদিকে আওয়ামী লীগের কর্মসূচিকে ঘিরে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে মোড়ে মোড়ে অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে অবস্থান করতে দেখা যায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের। শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কের প্রবেশদ্বারে তল্লাশি করতে দেখা গেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। আওয়ামী লীগের কর্মসূচিকে প্রতিহত করতে শহরের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান ও বিক্ষোভ কর্মসূচি করেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। বিকেলে শহরের বকুলতলাস্থ এলাকায় অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বিপ্লবী জুলাই ঐক্য যশোরের সদস্যরা। এতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও এনসিপি নেতাকর্মীরা অংশ নেয়। শহরে মোটর সাইকেল মিছিল করে নাগরিক ঐক্য যশোরের নেতাকর্মীরা।
এ সময় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যশোর জেলা শাখার প্রধান সমন্বয়কারী মো. নুরুজ্জামান বলেছেন, পনেরশত শহীদ ও হাজার হাজার যোদ্ধাহতের রক্তের বিনিময়ে ফ্যাসিস্ট, স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের হাত থেকে বাংলাদেশের মানুষ মুক্তি পেয়েছে। আমরা আওয়ামী লীগকে এ দেশে আর কোনদিন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করতে দেব না। প্রয়োজন হলে জুলাই যোদ্ধারা আবার রাস্তায় নামবে। তবুও বিনা বিচারে এদেশে তাদের কোন স্থান হবে না।
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন, যুবশক্তির সদস্য সচিব ফারহিন আহমেদ, এনসিপি যশোরের যুগ্ম সমন্বয়কারী ড. শহিদুল ইসলাম জাবীর, যুবশক্তির মুখ্য সংগঠক সোহানুর রহমান, যুগ্ম আহবায়ক, রেজওয়ান রুহিত, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব সাঈদ সান, সৈয়দ রাফিদ। যুগ্ম সদস্য সচিব ইবনে সাদ, তাইওয়ান রিয়াজ, সিনিয়র সংগঠক প্রিয়, পল্লব, সাইমা সিদ্দিকাসহ বিভিন্ন ইউনিটের নেতৃবৃন্দ।
এর আগে দুপুরে দড়াটানা ভৈরব চত্বরে ও মণিহার মোড়ে বিক্ষোভ সমাবেশ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করে জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শহরের লাল দীঘিতে অবস্থান কর্মসূচি করে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও যশোরের রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা রাজপথে থাকলেও যশোর- সাতক্ষীরা ও যশোর-মাগুরা সড়কে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মিছিল করার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। যদিও পুলিশ এ বিষয়ে কোন তথ্য নেই বলে জানিয়েছে।
যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) আবুল বাশার জানিয়েছেন, কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়া সংগঠনের নেতাকর্মীরা যাতে কোনো প্রকার অপরাধ করতে না পারে সে জন্য পুলিশ সতর্ক রয়েছে। শহর ও উপজেলাগুলোর গুরুত্বপূর্ণ মোড়, বাজার, রাস্তাঘাট, বিশেষ ভবন, গুরুত্বপূর্ণ অফিস-আদালতগুলোর সামনে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি করা হচ্ছে। যশোর শহরের মণিহার এলাকায় পুলিশের একটি টিম এই কাজ করছে। পুলিশের একাধিক মোবাইল টিম শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে তল্লাশী চৌকি বসিয়ে অভিযান চালাচ্ছে। অতিরিক্ত পেট্রোল টিম অবৈধ অস্ত্র ও বিস্ফোরক উদ্ধারের চেষ্টা করছে।’
