বাংলার ভোর প্রতিবেদক
চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব, শালিস বাণিজ্য, হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলা-ভাঙচুর ও লুটপাটসহ নানা অপকর্মের ঘটনায় বারবার সংবাদের শিরোনাম হওয়া বিএনপি নেতা তপন আবারো সংবাদের শিরোনামে উঠেছে এসেছেন। এবার তিনি শিরোনাম হয়েছেন ঋণ খেলাপীর দায়ে।
জানা গেছে, যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার বন্দবিলা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মনিরুজ্জামান তপন। বারবার নানা অপকর্ম করলেও দল তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। তবে এবার স্থানীয় এশিয়া ব্যাংক থেকে নেয়া সাড়ে চার কোটি টাকা আদায়ে বন্ধকী সম্পত্তি বিক্রির নোটিশ স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশ করেছে ব্যাংকটি। এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক তোলপাড় চলছে।
সোমবার নিলামের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ব্যাংক এশিয়া পিএলসি যশোর শাখার প্রধান মৃত্যুঞ্জয় অধিকারী। এর আগে ১২ অক্টোবর স্থানীয় একটি গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। আগ্রহী ক্রেতাদের ২ নভেম্বর ব্যাংকটির ওই শাখায় নিলামের দরপ্রস্তাব জমা দিতে বলা হয়। এরই মধ্যে ঋণগ্রহীতার সম্পত্তি নিলাম কার্যক্রম শেষ পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে জানান ওই ব্যাংক কর্মকর্তা।
মনিরুজ্জামান তপনের বাড়ি বাঘারপাড়ার বন্দবিলা ইউনিয়নের গাইদঘাট গ্রামে। বর্তমানে যশোর শহরে পালবাড়ি এলাকায় নিজের মালিকানাধীন বাসায় বসবাস করেন তিনি।
জানা গেছে, ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠান মেসার্স মনির ট্রেডার্সের মালিক মনিরুজ্জামান। একই সঙ্গে আইসিএল এমএমটি জেভি-এর পার্টনার। গৃহীত ঋণের বিপরীতে তফসিল বর্ণিত যশোর কোতয়ালী থানার চুড়ামনকাটি মৌজায় ৫ শতক জমিসহ তদস্থিত সকল ও বর্তমান নির্মাণাদী এবং পুরাতন কসবা মৌজায় ৫.৫০ শতক জমিসহ তদউপরিস্থিত তিনতলা বিল্ডিং এবং সকল ও বর্তমান নির্মাণাদী সম্পত্তি ব্যাংক এশিয়া যশোর শাখায় বন্ধক রেখেছেন। চলতি মাসের ১২ তারিখ পর্যন্ত লিগ্যাল খরচসহ ব্যাংকের সর্বমোট, পাওনা চার কোটি চল্লিশ লাখ আটত্রিশ হাজার দুইশত পাঁচ টাকা বিরাশি পয়সা এবং আদায় কালতক আসল, সুদ ও অন্যান্য খরচাদিসহ আদায়ের জন্য প্রদত্ত রেজিস্ট্রার্ড আমমোক্তারনামা বলে বর্ণিত তফসিল সম্পত্তি নিলামে তুলেছে ব্যাংক।
স্থানীয়রা বলছেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন বিএনপি নেতা মনিরুজ্জামান তপন। দলীয় প্রভাব খাটিয়ে তিনি ও তার লোকজন চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব, সালিশি বাণিজ্য, হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাটসহ নানা অপকর্ম করেছেন। যা নিয়ে জাতীয় ও স্থানীয় পত্র-পত্রিকায় ফলাও করে খবর প্রকাশিত হয়েছে। মূলত, তপন এসব অপকর্মের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা বাণিজ্য করার নেপথ্যে রয়েছে ব্যাংক ঋণ। একমাত্র তারই ব্যক্তিস্বার্থের কারণে বন্দবিলা ইউনিয়নের জনসাধারণের কাছে দলের ভাবমূর্তি অনেকটা ক্ষুণ্ন হয়েছে।
ইউনিয়ন বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা হলে নাম প্রকাশ করলে তপনের রোষানলে পড়তে পারেন আশঙ্কায় নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানান তারা। তারা বলেন, তপন এতটাই বেপরোয়া যে হাইকোর্টে বিচারাধীন জমির মামলা মোকাদ্দমাও তোয়াক্কা করেননা। চিহিৃত আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীদের পুনর্বাসন ও তার লাগামহীন নানা অপকর্মের প্রতিবাদ করায় ইউনিয়ন বিএনপির সিনিয়র দুই নেতাকে মারপিটের ঘটনায় চুনোপুঁটিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হলেও বারবার পার পেয়ে যাচ্ছেন তপন। এ নিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে চরম অসন্তোষ ও ক্ষোভ থেকেই ইউনিয়ন বিএনপিতে বিভক্তি তৈরি হয়েছে। যার একটি পক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মনিরুজ্জামান তপন এবং অন্যটির নেতৃত্বে দলটির ইউনিয়ন সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান ও সিনিয়র সহসভাপতি আনোয়ার হোসেন ভূট্টো।
এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য বন্দবিলা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মনিরুজ্জামান তপনের মুঠোফোনে একাধিবার কল করা হয়। তবে তার মুঠোফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
সোমবার নিলামের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ব্যাংক এশিয়া পিএলসি যশোর শাখার প্রধান মৃত্যুঞ্জয় অধিকারী। তিনি জানান, ব্যাংকের নিয়মানুযায়ী ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠান মেসার্স মনির ট্রেডার্সের মালিক মনিরুজ্জামানের সম্পত্তি নিলাম কার্যক্রম শেষ পর্যায়ে পৌঁছেছে। তফসিল বর্ণিত জমি ও তিনতলা বিল্ডিং ঋণগ্রহীতার মালিকানাধীন যশোর শহরের পালবাড়ি এলাকার বাসাবাড়ি। তবে গৃহীত ঋণের পরিমাণ ও নিলামে কয়জন দরপ্রস্তাব জমা দিয়েছেন তা তিনি জানাননি।
বিএনপি নেতা তপনের ‘বাড়ি-জমি’ নিলাম নোটিশে তোলপাড়
সাড়ে ৪ কোটি টাকা ঋণ খেলাপি
