বাংলার ভোর প্রতিবেদক
‘বেদে সম্প্রদায়ের সর্দারের অপরূপ সুন্দরী মেয়ে মালতি। সখীদের নিয়ে পাড়ায় পাড়ায় সাপ খেলা দেখানোই তার নিত্যদিনের কাজ। হঠাৎ একদিন মালতির সাপের খেলা দেখে বিমোহিত হন ওই রাজ্যের রাজপুত্র কাশেম। বন্ধুকে নিয়ে দেখা ওই সাপের খেলায় যতটা না; বিমোহিত হন রাজপুত্র। তার চেয়ে বেশি আকর্ষিত করে সাপুড়ে সর্দারের কন্যা মালতির রুপ লাবণ্য। কয়েক মিনিটের দেখায় সেই বেদে কন্যাকে ভালোবেসে ফেলেন রাজপুত্র। রাজপুত্র ও বেদেকন্যার এই ভালোবাসার মিলনকে মেনে নিতে পারেননি রাজ্যের রাজা। বেদেকন্যাকে ভালোবাসার শাস্তি হিসাবে রাজ্যত্যাগী হতে হয় রাজপুত্রকে। রাজ্যত্যাগী রাজপুত্রের জায়গা হয় বেদেপল্লীতে। ভালোবাসার কারণে রাজ্যত্যাগী রাজপুত্রকে গ্রহণ করেন বেদে সর্দার। একপর্যায়ে রাজপুত্রকে দেয়া হয় বেদে সম্প্রদায়ের নতুন সর্দারের দায়িত্ব। জীবন সংগ্রামের দ্বন্দ্ব ও সমাজ বাস্তবতার স্বর্গীয় প্রেমের গল্প নিয়ে রচিত ‘বেদেনীর প্রেম’। যা শুক্রবার রাতে যশোর শিল্পকলা একাডেমির মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হয়। পরিবেশনায় ছিলেন যশোর ইনস্টিটিউটের নাট্যকলা সংসদ।
বেদেনীর প্রেম নাটকটিতে ফুঁটিয়ে তোলা হয়েছে, সামাজিক জাতিগত হীন ভাবনা, বিদ্বেষের দ্বন্দ্ব, লোভের হিংসা, অমিলের ঘৃণা ও অহংকারবোধের সংঘাত যা প্রকৃত প্রেমের কাছে তুচ্ছ হয়ে ধরা দেয়। আকাশছোঁয়া স্বপ্ন ভঙ্গের নিগুঢ় বাস্তবতায় চমকে ওঠে মন। উচু নিচ বিভেদের প্রাচীর ভেঙ্গে সত্য প্রেমে বেজে ওঠে সাম্যের গান। এক ঘন্টার এই নাটকে কখনো হাসি, হিংসার দ্বন্দ্ব, কখনো স্বর্গীয় প্রেমের দৃশ্যায়ন দেখে দর্শক নষ্টালজিক সময়ের অনুভূতিতে ফিরে যান। হাততালি দিয়ে দর্শক জানিয়ে দেয় সত্য প্রেম অবিনঃশ্বর।
নাটকটি দেখে বিমোহিত ও নষ্টালজিক হয়ে যান জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম। নাটকটির দৃশ্যায়ন শেষে প্রতিক্রিয়া জানানোর সময় তিনি বলেন ‘নাটক’ জীবনের ঘটনা উপলদ্ধির নবসৃষ্টির দৃশ্যমান প্রকাশ। আমাদের চিন্তাধারার প্রথাগত বেড়াজাল ছিন্ন করে নবধারার লুপ্ত সত্যের উন্মেষ ঘটায়। রূপকথা-কিংবদন্তির গল্প, নীতিকথার বাংলার চিরাচরিত ঐতিহ্য। পুরনো দিনের প্রচলিত লোকগাঁথার রহস্যময় কাহিনী নির্ভর নাটক এখনকার আধুনিকতার ভিড়ে হারিয়ে গেছে। এক সময় বাংলাদেশ টেলিভিশনে হিরামন নাটক প্রচার হতো। যা হৃদয়ের গভীরে অদ্ভুত আলোড়ন তৈরি করতো। সময়ের বির্বতনে আজ শুধু স্মৃতি হয়ে রয়ে গেছে। বেদেনীর প্রেম নাটকটিতে সেই নষ্টালজিক সময়ের অনুভূতি ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা করা হয়েছে।’
নাটকটির রচনায় ছিলেন সুকেন্দ্র নাথ পোদ্দার। নির্দেশনায় ছিলেন আব্দুর রহমান কিনা ও সুকেন্দ্রনাথ পোদ্দার। সার্বিক তত্বাবধানে ছিলেন যশোর ইনস্টিটিউটের সাধারণ সম্পাদক ডা. আবুল কালাম আজাদ লিটু ও নাট্যকলা সংসদের সম্পাদক আব্দুর রহমান কিনা। নাটকটি চিত্রায়ণে ছিলেন আব্দুর রহমান কিনা, নাজনীন আক্তার লাকী, জাহিদ হাসান টুকুন, শফিকুল আলম পারভেজ, আলিফা সুলতানা লিটা, শাহীন ইসলাম বিশাল, নাসির উদ্দিন মিঠু, আনিসুজ্জামান পিন্টু, শাহরিয়াজ বিশ্বাস সোহাগ, মিলন শেখ আপন ও মাইকেল।

