বাংলার ভোর প্রতিবেদক
ভারত সরকারের নিষেধাজ্ঞার পর যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরে আটকা পড়েছে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্যবাহী শতাধিক ট্রাক। নিষেধাজ্ঞার পরদিন রোববার দুপুরে বেনাপোল বন্দর কর্তৃপক্ষ ও ব্যবসায়ীরা ট্রাকগুলো আটকা পড়ার কথা জানিয়েছেন। শনিবার ভারত সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অজয় ভদ্র স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক, তুলা, সুতির বর্জ্য, কাঠ, প্লাস্টিক ও কাঠের তৈরি আসবাব, ফলজাতীয় পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়।
ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের বৈদেশিক বাণিজ্য অধিদপ্তর (ডিজিএফটি) এক বিবৃতিতে জানায়, ভারতের বন্দর ব্যবহার করে নেপাল ও ভুটানে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে এ বিধিনিষেধ প্রযোজ্য হবে না। এ ছাড়া ভারতের ব্যবসায়ীরা কেবল কলকাতা ও মুম্বাইয়ের নবসেবা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন। এর আগে গত ৮ এপ্রিল এক নিষেধাজ্ঞায় বন্ধ হয়ে যায় সড়কপথে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি। এদিকে একের পর এক নিষেধাজ্ঞায় পণ্য পরিবহন ব্যয়বহুল হয়ে পড়ায় বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে রপ্তানি বাণিজ্য। অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন দুই দেশের ব্যবসায়ীরা।
বেনাপোল বন্দরে আটকে থাকা রপ্তানি পণ্যবাহী ট্রাকচালকেরা বলেন, ‘ভারতে রপ্তানির জন্য তৈরি পোশাকবাহী ট্রাক নিয়ে আটকে পড়েছি। শেষ পর্যন্ত কী হবে, জানি না।’ রপ্তানিকারক ইদ্রিস আলী বলেন, ‘কলকাতা ও মুম্বাইয়ের নবসেবা সমুদ্রবন্দর দিয়ে রপ্তানি কঠিন ও ব্যয়বহুল। আটকে পড়া রপ্তানি পণ্য নিয়ে বিপাকে পড়েছি।’
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাক বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাকে পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
মাহমুদ সিএন্ডএফ এজেন্টের প্রতিনিধি জাহান আলী বলেন, ঢাকা আই এফ এল ফ্যাক্টারি লি.’র ৫টি কনসাইমেন্টে ১৫ ট্রাক গার্মেন্টস পণ্য রফতানির জন্য বেনাপোল বন্দরে এসেছে। ভারতীয় কাস্টমস কারপাস ইস্যু না করায় পণ্য রফতানি করা সম্ভব হয়নি।
ভারতের পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং এন্ড ফরওয়াড়িং এজেন্ট স্টাফ এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তি বলেন, বাংলাদেশ থেকে বেশ কয়েকটি পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের বৈদেশিক বাণিজ্য অধিদপ্তর (ডিজিএফটি)। যে সকল পণ্যের এলসি/টিটি হয়েছে এসকল পণ্য আমদানি যাতে আমদানি করা যায় তার জন্য কাস্টমসে আলোচনা চলছে।
বেনাপোল আমদানি-রপ্তানি সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক বলেন, ‘ভারত সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অজয় ভদ্র স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বাংলাদেশ থেকে গার্মেন্টস, তুলা, সুতির বর্জ্য, কাঠ, প্লাস্টিক ও কাঠের তৈরি আসবাব, ফলজাতীয় পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। এই নিষেধাজ্ঞার পর বেনাপোল বন্দরে শতাধিক রপ্তানিমুখি তৈরি পোশাক পণ্যবাহী ট্রাক আটকা পড়েছে। ভারত সরকারকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে বাণিজ্য সহজ করার দাবি জানাচ্ছি।’
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের দপ্তর সম্পাদক মোস্তাফিজ্জোহা সেলিম বলেন, হঠাৎ হঠাৎ এমন নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও সৌহার্দ্য সম্পর্কে টানাপোড়েন শুরু করেছে। এতে উভয় দেশের ব্যবসায়ীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
বেনাপোল চেকপোস্ট কাস্টমস কার্গো শাখার সুপার আশরাফ আলী বলেন, ভারত সরকারের নিষেধাজ্ঞার পর সকাল থেকে কোনো তৈরি পোশাকশিল্পের পণ্য ভারতে ঢোকেনি। বেশ কিছু ট্রাক বন্দর ও বন্দরের সড়কে আটকা পড়েছে।