শার্শা সংবাদদাতা
বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে রপ্তানি পণ্য ট্রাক সিন্ডিকেট তৈরি করে বন্দর কৃত্রিম যানজটের নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এটি করা হচ্ছে যশোর আন্তঃজেলা ট্রাক ট্রাক্টর কাভার্ডভ্যান ও ট্যাংকলরী শ্রমিক ইউনিয়ন সংগঠন-২৪০৬ এর নামে। বন্দরের ছোচআঁচড়া মোড় হতে রপ্তানিগেট পর্যন্ত সড়কে সৃষ্ট এ কৃত্রিম যানজটে নাকাল পাসপোর্ট যাত্রীসহ এলাকাবাসী। এতে করে প্রতিনিয়ত দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন বেনাপোল পৌরসভার ছোটআঁচড়া,বড়আঁচড়া,সাদিপুর ও গাজীপুর গ্রামবাসী।
বড়আঁচড়া গ্রামের শহিদুল ইসলাম জানান, বেনাপোল বড়আঁচড়া রেললাইনের মোড়ে বটতলায় স্থানীয় একটি ট্রাক সিন্ডিকেটের সিরিয়ালের নামে বাণিজ্যের কারণে আমরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছি।
খুলনার ট্রাক চালক আমিনুর জানান, তিন দিন ধরে রাস্তায় রপ্তানি পণ্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি সামনে যেতে পারিনি। কিন্তু দুই হাজার টাকা খরচ করে ৫০টি গাড়ি পেছনে ফেলে সামনে চলে এসেছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ট্রাক সিন্ডিকেটের সাবেক এক নেতা জানান, বর্তমান ভারতে রপ্তানি পণ্য বোঝায় ট্রাক জিম্মি করে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে পরিবহন শ্রমিক নামধারী সংগঠনটি। রপ্তানি ট্রাক গুলোর সিরিয়ালের নামে ইচ্ছাকৃত ভাবে বেনাপোল হাইওয়ে সড়ক ও বাইপাস সড়ক হতে রফতানি গেট পর্যন্ত কৃত্রিম যানজট সৃষ্টি করে। ভিআইপি সিরিয়াল নিয়ে ২৪০৬ এর সংগঠনের পরিবহন শ্রমিকদের যোগসাজসে এক থেকে তিন হাজার টাকায় এক ধাপে পৌঁছে যায় রপ্তানি গেটে। টাকা না দিয়ে সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে থাকলে ৩ থেকে ৫ দিন অতিবাহিত করতে হয় রাস্তার উপর।
সরেজমিনে স্থল বন্দরের রফতানি গেট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বেনাপোল ছোট আঁচড়া মোড় হতে রপ্তানি টার্মিনাল গেট পর্যন্ত রাস্তার দুধারে সিরিয়ালে লম্বা লাইনে সারি সারি রপ্তানি পণ্যবাহী ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে। এর মধ্যে সিরিয়াল ভেঙে একের পর এক গাড়ি বেপরোয়া গতিতে সামনে চলে যাচ্ছে। আর এসব ট্রাকের মেইনটেইন করছেন ২৪০৬ শ্রমিক সংগঠনের নেতারা। সাংবাদিক পরিচয়ে গাড়ি আগে নিচ্ছেন কেন জানাতে চাইলে সিন্ডিকেটের লোক দ্রুত স্থান ত্যাগ করে চলে যায়।
সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে থাকা খুলনা-মেট্রো-ট ১১-১২৫৬,ঢাকা মেট্রো-ট ২২-৮২৯৩,ঝিনাইদহ মেট্রো-ট-১১-১৯২৪ চালকদের কাছ থেকে জানা যায়, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসব পাটজাত পণ্যবাহী ট্রাক বেনাপোল স্থল বন্দরে পৌছালে প্রবেশ থেকে আনলোড পর্যন্ত দিতে হয় মোটা অংকের চাঁদা।
বেনাপোল কাস্টমস্ কার্গো শাখা থেকে জানা যায়, ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে প্রতিদিন দেশের রপ্তানি পণ্য নিয়ে ২৫০ থেকে ৩৫০ ট্রাক প্রবেশ করে। প্রবেশকৃত ট্রাক ড্রাইভার ও রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি সিএন্ডএফ এজেন্টের ও ট্রাক শ্রমিক সংগঠনের মধ্যস্থতায় ট্রাক প্রতি সর্বনিম্ন এক থেকে তিন হাজার টাকা নিয়ে থাকে শ্রমিক নামধারী চক্রটি। চাঁদা না দিলে দিনের পর দিন সিরিয়ালের জন্য রফতানি পণ্য নিয়ে রাস্তার ওপর খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। রপ্তানিকারকরা পণ্যর শিপমেন্ট ডেট ও গাড়ির দৈনিক ক্ষতিপূরণের হাত থেকে রেহায় পেতে বাধ্য হয়ে সিরিয়াল সিন্ডিগেটের চাঁদা দিয়ে পণ্য ভারতে রপ্তানি করতে হয়।
সিএন্ডএফ এজেন্টের কর্মচারী আলমগীর হোসেন জানান, বেনাপোল বন্দরের ট্রাক শ্রমিক নামধারী সংগঠনের কাছে রপ্তানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা জিম্মি হয়ে গেছে। ট্রাক প্রতি চাঁদার টাকা না দিলে দিনের দিন ভারতে রপ্তানি পণ্য বোঝায় ট্রাক প্রবেশ করতে পারে না।
সিরিয়াল সিন্ডিগেটের চাঁদা আদায়ের বিষয়ে যশোর আন্তঃজেলা ট্রাক ট্রাক্টর কাভার্ডভ্যান ও ট্যাংকলরী শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শাহিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকে ট্রাক প্রতি ১০০ টাকা করে আদায় করে থাকি তার বাইরে কোনো টাকা আদায় করা হয় না। ট্রাক সিরিয়াল ভঙ্গ করে ট্রাক সামনে নিতে এক থেকে তিন হাজার টাকা নেয়ার বিষয়টি তিনি বানোয়াট বলে উড়িয়ে দেন।