কোটচাঁদপুর সংবাদদাতা
দুই বছরেও চালু হয়নি নতুন ভবন, ওই ভবণে বসবাস করছে ইদুর-বাদুড়। চুরি হচ্ছে মূলবান সরঞ্জামাদি, সন্ধ্যা আসলেই মাদকের আড্ডা খানায় পরিনত হয় ভবনটি। এতে করে বেহাল হয়ে পড়েছে ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার দিচ্ছেন চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপত্র।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে থেকে জানা যায়, চিকিৎসা সেবা উন্নত করতে ২০২৩ সালে ২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয় পাঁচতলা ভবনটি। ৫০ শয্যার হাসপাতালটি ১০০ শয্যায় উন্নীত হলেও বাস্তবে তার কোন কার্যক্রম নেই বরং আগের তুলনায় ভোগান্তি বেড়েছে কয়েক গুণ। চরম চিকিৎসক সংকট, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জামাদির অভাব, ওষুধ সংকট, নিম্নমানের খাবার, অপরিস্কার ও দুর্গন্ধ, মশা মাছির উপদ্রব, আর সব সময় চোর আতঙ্কে রাত দিন পার করে রোগী আর তার স্বজনরা।
হাসপাতালটিতে ১৯ জন চিকিৎসকের বিপরীতে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন মাত্র ২ জন। তারাও নিয়মিত থাকেন না বলে জানা গেছে। উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (সেকমো) দিয়ে চলছে হাসপাতালটির কার্যক্রম। জরুরি বিভাগও সামাল দিচ্ছেন সেকমো দিয়ে। এ সুযোগে কৌশলে নিজের বাসায় বা বিভিন্ন ক্লিনিকে রোগী পাঠিয়ে অতিরিক্ত অর্থ আদায়েরও অভিযোগ আছে সেকমোদের বিরুদ্ধে। অন্যদিকে রোগীদের বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার সরঞ্জামাদি না থাকায় ভোগান্তি বেড়েছে বহুগুণ। ২৮ অক্টোবর সরজমিনে দেখা যায় শিশু-বৃদ্ধ সব বয়সের রোগী এসেছেন চিকিৎসা নিতে। বহির্বিভাগ কক্ষের সামনে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন রোগী ও তার স্বজনরা। কোনো চিকিৎসক না থাকায় উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার সেকমোদের মাধ্যমে জোড়াতালি দিয়ে চলছে চিকিৎসা সেবা। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা বৃদ্ধা রেশমার সাথে কথা বললে তিনি জানান, মেলা দিন অসুস্থ আছি, বাইরে ডাক্তার দেখানোর ক্ষমতা নেই, তাই আজ হাসপাতালে আসলাম দুই চারটে ওষুধ দেছে, এখন বাড়ি চলে যাচ্ছি। রোগী ও তাদের স্বজনদের অভিযোগ, এভাবে আর কতদিন চলবে। এর একটা প্রতিকার হওয়া দরকার। হাসপাতালটির শিশু ওর্য়াডসহ বিভিন্ন ওর্য়াড ঘুরে দেখা যায় ওয়ার্ডে রোগীদের চরম ভিড়। শয্যা সংকটে ফ্লোরে বিছানা করেছেন অকেনেই। অথচ ১০০ শয্যার নতুন ভবনটি পরিত্যক্তভাবে পড়ে আছে। শিশু ওয়ার্ড থেকে শুরু করে সবগুলো ওর্য়াড দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে, বাথরুমগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী। আছে খাবারের মান নিয়েও অভিযোগ। কিন্তু কর্তৃপরে কোনো পদক্ষেপ নেই।
কোটচাঁদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আমানুল্লাহ আল মামুন বলেন বর্তমানে আমাদের চিকিৎসক সংকট চলছে। ১৯ জন মেডিকেল অফিসারের পদ থাকলেও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাসহ আছেন মাত্র ৫ জন। যাদের মধ্যে একজন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, একজন ডেন্টাল সার্জন ও একজন অবেদনবিদ, অন্য ২ জন হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলোর ভর্তি রোগী দেখায় ব্যস্ত।
জনবলসহ প্রশাসনিক অনুমোদনের পর নতুন ভবনটি চালু করা সম্ভব হবে বলে তিনি জানান। কোটচাঁদপুর উপজেলা ৫টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। এ উপজেলায় ১ লাখ ৫০ হাজারের বেশি মানুষ বাস করে। ভৌগোলিক কারণে কোটচাঁদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫টি উপজেলার মাঝে অবস্থিত। ঝিনাইদহের সদর, মহেশপুর, কালীগঞ্জ, যশোরের চৌগাছা ও চুয়াডাঙ্গা সদরের অনেকে এখানে চিকিৎসা নিতে আসেন। যে কারণে রোগীর চাপ থাকে বেশি। বর্তমানে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে চিকিৎসা নিতে আসেন ৭০০ থেকে ৮০০ জন, আর ভর্তি থাকেন ৭০ থেকে ৮০ জন রোগী। এই বাড়তি রোগীর চাপ সামাল দিতে ৫০ শয্যার হাসপাতালটি ১০০ শয্যায় উন্নীত করণে ভবন নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে ২ বছর আগেই। প্রশাসনিক অনুমোদনের অপেক্ষায় আটকে আছে রোগীদের ভাগ্য।

