বাংলার ভোর ডেস্ক:
চাল আমদানির পথ খোলা। আমদানি উৎসাহিত করতে শুল্ক ৬২ দশমিক ৫ থেকে ১৫ দশমিক ২৫ শতাংশে নামিয়ে এনেছে সরকার। ৩০টি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়েছে ৮৩ হাজার টন চাল আমদানির অনুমতি। আরও কিছু প্রতিষ্ঠানকে আমদানির অনুমতি দিয়ে প্রায় ২ লাখ টন চাল আমদানির চিন্তা রয়েছে সরকারের। তবে এ সবই হয়েছে কাগজে কলমে। বাস্তবে চাল আমদানির প্রয়োজন হচ্ছে না। ব্যবসায়ীরাও আগ্রহী হচ্ছেন না।
চাল আমদানির এলসি খোলার জন্য সরকারের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ শাখা থেকে আমদানি অনুমতিপত্র (আইপি) নিতে হয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২১ মার্চ অনুমতি পাওয়া ৩০ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাত্র দুটি প্রতিষ্ঠান সেই অনুমতিপত্র নিয়েছে। এ দুই প্রতিষ্ঠান অনুমতি নিয়েছে ৮৩ হাজার টন চাল আমদানির। এরমধ্যে তারাও মাত্র আড়াই হাজার টন চাল আমদানির প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
চাল আমদানির অনুমতি পেয়েছেন এমন কয়েকটি প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বর্তমান বাজার প্রেক্ষাপটে চাল আমদানির প্রয়োজন নেই। এছাড়া বিশ্ববাজারে চালের দামও অনেক বেশি। ভারতে যে দামে চাল বিক্রি হচ্ছে, সেখান থেকে চাল আমদানি লাভজনকও হবে না। চাল এনে লোকসান দিতে হবে তাদের।
আমদানি না করলে কেন অনুমতি নেওয়া এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন আমদানিকারক বলেন, দেশে চালের বাজার অস্থিতিশীল হলে এ অনুমতি কাজে লাগবে। তখন চাল আমদানির প্রয়োজন হবে।
দেশে চাল আমদানির খুব বেশি প্রয়োজন নেই, এমন বলছে খাদ্য মন্ত্রণালয়ও। তবে বাড়তি সতর্কতা ও মিল মালিকদের চাপে রাখতে আমদানির অনুমতি দেওয়া রয়েছে। এ বিষয়ে খাদ্য সচিব মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, এখন চাল নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। সরকারি গুদামে প্রায় ২০ লাখ টন চাল-গম মজুত আছে। আর বেসরকারিভাবেও খুব বেশি চাল আমদানির দরকার হবে না। তাও জরুরি দরকার হলে তা করা হবে। সেজন্য অনুমতি দেওয়া রয়েছে।
চাল আমদানির জন্য আমদানি অনুমতিপত্র নিয়েছে নাফিসা এগ্রো লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার (অর্থ) জহিরুল আলম বলেছেন, আইপি পাওয়ার পর, আমরা এলসি খোলার প্রক্রিয়ায় আছি। কিন্তু ভারত গত বছরের আগস্টে সিদ্ধ চালের ওপর ২০ শতাংশ রপ্তানি শুল্ক আরোপ করেছে। এরসঙ্গে বাংলাদেশের আমদানি শুল্ক ১৫ শতাংশের ওপরে রয়েছে।
তিনি বলেন, এখন ভারতে মোটা সিদ্ধ চালের দাম প্রতি টন ৫৮০ ডলার। পাশাপাশি পেট্রাপোলে ২০ শতাংশ শুল্ক এবং বেনাপোলে প্রবেশের পর আবার ১৫ শতাংশ শুল্ক লাগবে। এতে প্রতি কেজি চালের দাম ৬৭ টাকার মতো দাঁড়াবে।
জহিরুল আলম বলেন, এখন দেশে মোটা চালের দাম এরচেয়ে অনেক কম। যে কারণে আমরা চাল আমদানিতে আগ্রহ পাচ্ছি না।
আরেক আমদানিকারক বলেন, আমরা আইপি নিয়েছি। এখন ভারতে দাম কমার জন্য অপেক্ষা করছি। সামনে ভারতে নির্বাচন। এরপর দাম কমলে আমদানি করা যাবে।
তিনি জানান, ভারত ছাড়াও থাইল্যান্ড, পাকিস্তান এবং ভিয়েতনামে চালের দাম বাড়ছে। যে কারণে অন্য দেশ থেকেও আনা যাচ্ছে না।
তথ্য বলছে, এবার দেশে চালের উৎপাদন যথেষ্ট ভালো হয়েছে। বর্তমানে চাহিদার চেয়ে কমপক্ষে ৫০ লাখ টন বেশি চাল উৎপাদন হচ্ছে। ফলে আমদানির দরকার নেই। যদিও চাল উদ্বৃত্ত থাকার পরও দেশের বাজারে দফায় দফায় দাম বাড়ছে। চলতি বছরের জানুয়ারির মাঝামাঝি দেশে একবার চালের দাম বেড়েছিল। সরকারের নানামুখী পদক্ষেপের ফলে তখন দাম কিছুটা কমে আসে। এখন আবার বাজার বাড়তির দিকে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্যে, চলতি অর্থবছরে মোট ৪ কোটি ১২ লাখ টন চাল উৎপাদন হতে পারে। এরমধ্যে বোরো ২ কোটি ৯ লাখ টন, আউশ ৩০ লাখ টন ও আমন ১ কোটি ৭০ লাখ টন। আর দেশে চালের চাহিদা ৩ কোটি ৫০ লাখ টনের কাছাকাছি। সেই হিসাবে দেশে ৫০ থেকে ৬০ লাখ টন চাল উদ্বৃত্ত থাকার কথা।
অন্যদিকে ইউএসডিএ’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছর (২০২৩-২৪) শেষে বাংলাদেশে চালের উৎপাদন ৩ কোটি ৬৩ লাখ টনে দাঁড়াবে। একই সময়ে ভোগের পরিমাণ হবে ৩ কোটি ৭৬ লাখ টন। সে হিসাবেও চালের ঘাটতি হবে মাত্র ১৩ লাখ টন।